“পুলিশের সামনে মার্ডার, পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এর দায়িত্ব বর্তায়”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 03 Oct 2024, 07:32 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই মাস হয়ে গেলেও তারেক রহমান কেন দেশে আসতে পারছেন না সেই প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। জানতে চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার ভয় পাচ্ছে কিনা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই প্রশ্ন রাখেন।
‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেওয়ার দাবিতে সাংবাদিকদের সংগঠন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, “এত দিন হয়ে গেল, দুই মাস; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে আসলেন না? কী আইনি প্রক্রিয়া আছে? এই আইন তো ‘মানবতাবিরোধী’ আইন, এই আইন স্বার্থ রক্ষা করা হয় ‘মাফিয়াদের, স্বৈরাচারের, খুনিদের’। একটা নির্বাহী আদেশের একটা খোঁচায় এই আইন পরিবর্তন হতে পারে।”
‘তাহলে কি আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ভয় পাচ্ছেন?’ এই প্রশ্ন রেখে বিএনপি নেতা বলেন, “নাকি আপনাদেরকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে কোনো জায়গা থেকে যে ‘এর বাইরে’ যাওয়া যাবে না, ‘এইভাবে’ কাজ করবেন, তারেক রহমান যেন ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থার জন্য আপনারা ‘এই কাজগুলো’ করুন, ‘এগুলো’ পরিবর্তন করা যাবে না?”
‘প্রচলিত আইন এখন কেন’
সরকার পতনের আন্দোলনকে বিপ্লব দাবি করে রিজভী বলেন, “প্রচলিত আইন ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা। ফৌজদারি আইনে এক বছরের বেশি সাজা হলে তাকে কারাগারে যেতে হয়… এই আইন তো এখন মানা হবে কেন?
“আইন তো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এত ছাত্র-জনতার এত যে আত্মদান, এত রক্ত এখনও গড়িয়ে যাচ্ছে, এত আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে সরকার, তারা কেন পুরনো আইন দেখিয়ে কাজ করবেন?”
মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বিপ্লবী সরকারের কর্মকাণ্ড হবে বৈপ্লবিক। আইনের কথা বলছেন? আইন উপদেষ্টা সাহেব নিশ্চয়ই একজন গুণী মানুষ, আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব তো প্রচলিত কোনো আইনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা নয়।
“যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হল, এই পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি না।…শেখ হাসিনা সরকারের আমলের আইনগুলো টেনে নিয়ে কেন ‘গণতন্ত্রের বিপ্লবী মানুষদেরকে’ যন্ত্রণা দিচ্ছে, এটা গোটা জাতির আজকে জিজ্ঞাসা।”
একটি ‘বিপ্লবী সরকার’ দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে রিজভী বলেন, “জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝেই তো কাজ করতে হবে। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মত সরকার চাই না। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছেন কাদেরকে নিয়ে? আওয়ামী লীগের যে সমস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে। এই ধরনের সরকার চায় না বলেই তো এতো রক্তপাত, এত কিছু হল। এটা এই সরকারকে বুঝতে হবে।”
সরকারের সর্বত্র শেখ হাসিনার ‘ভূত’
রিজভী বলেন, “পুলিশের সামনে মার্ডার, পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এর দায়িত্ব বর্তায়।”
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে করা মামলার আসামি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সে নাকি এখনও কারাগারে, তাহলে প্রশাসন কীভাবে চলছে?
“শুধু একটা পোস্ট দেওয়ার কারণে একজন ছাত্রী এখনও যদি কারাগারে থাকে তাহলে তো বুঝতে হবে… আমরা যেটা বলি, শেখ হাসিনার ‘ভূতরা’ আজকে আদালতে আছে, প্রশাসনে আছে, পুলিশে আছে। তারা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে।”
অতি শিগগির নির্বাচন দাবি
দ্রুত নির্বাচন দেওয়ারও দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, “অতি শিগগির, অতি তাড়াতাড়ি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অতি দ্রুত জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দিতে হবে। তাহলেই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।”
‘বিপ্লবের পরেও রাস্তায় নামতে হয়েছে কেন?’
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, “খুব দুঃখ লাগে যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘বিপ্লবের’ পরে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে দাবি নিয়ে।
“আমরা এই সমাবেশ থেকে সব বন্ধ সংবাদপত্রসহ সব মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা যত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, “মাহমুদুর রহমানকে কেন জেলে যেতে হল, আইন উপদেষ্টাকে বলতে হবে। ‘মিথ্যা’ মামলায় মাথায় নিয়ে আমাদের সংগঠনের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ভাইকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হল। তিনি এক বছর ৭ মাস কারাবরণ করেছেন এই মামলায়। তিনি দেখে যেতে পারেননি পারেননি তার মামলাটি প্রত্যাহার হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে গত ৭ আগস্ট। কোথায় আমাদের সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হল?”
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএফইউজের সহসভাপতি বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালীন নোমানীসহ দুই ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।