৩২ জন ভোটারের মত জানতে চাইলে ১৫ জন বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই। কেন্দ্রে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বাকি ১৭ জন, তবে যদি সংঘাত না হয়।
Published : 06 Jan 2024, 01:03 AM
একদিকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ, অন্যদিকে বর্জনের ডাক। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে, এ নিয়ে কৌতূহলের কমতি নেই।
এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে উৎসাহ দিয়ে বহু আসনে প্রচার জমিয়ে তুলতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। এরপরও শতাধিক আসনে ভোটের ময়দান এক রকম একতরফা।
রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরে অবস্থান করেন এমন ৩২ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এদের মধ্যে ১৫ জন ভোটকেন্দ্রে যাবেন না জানিয়েছেন। বাকি ১৭ জন ভোট দিতে চান। তবে এদের তিনজন বলেছেন, মারামারি না হলে কেন্দ্রে যাবেন।
এরা দেশের বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন বয়সের ভোটার। কেউ ঢাকার বিভিন্ন আসনের, কারও বাড়ি নেত্রকোণায়, কারও ময়মনসিংহে, কেউবা কিশোরগঞ্জের। কুমিল্লা, গাজীপুর, চট্টগ্রামে, রাজশাহী ও টাঙ্গাইলের ভোটার রয়েছেন তাদের মধ্যে।
যারা ভোট দিতে যেতে চান না, তারা প্রার্থী পছন্দ না হওয়া, বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকা, অতীতে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারা এবং নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেছেন।
যারা ভোট দিতে যাবেন, তাদের মধ্যেও নানা ধরনের শঙ্কা কাজ করছে।
সবার চাওয়া হল শান্তিপূর্ণ ভোট, যেখানে কোনো ভয় ভীতি থাকবে না, ইচ্ছা অনুযায়ী যাকে খুশি তাকে সমর্থন করা যাবে।
ঢাকায় গুলশানে একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মী নুরুল্লাহ ভূঁইয়ার বাড়ি কুমিল্লা সদর উপজেলায়। সেখানে নৌকার আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগেরই নেত্রী আঞ্জুম সুলতানার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়াইয়ের আমেজ আছে।
নুরুল্লাহ ভোট দেবেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “সবার ভোটাধিকার বাস্তবায়ন হোক।”
তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন একটি পরিবেশের, যেখানে ভোট নিয়ে কোনো সংঘাত, ভয়-ভীতি থাকবে না। বলেন, “ক্ষমতার লড়াইয়ে সহিংসতার মধ্যে সাধারণ জনগণের ক্ষতি কখনোই কাম্য নয়।”
এই ভোটারের চাওয়া নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিক ও দেশের সমস্যা নিয়ে বিতর্ক করুক।
“দ্রব্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট, মুদ্রার দরপতন, কার্যকরি অর্থনৈতিক পদক্ষেপের অভাব… এ সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কষ্ট লাঘব করা প্রয়োজন। অথচ সেগুলো নিয়ে কিছু শুনতে পাই না।”
চট্টগ্রাম-১৩ আসনের ভোটার আনিছুর রহমান ঢাকায় থাকেন, মাস্টার্স শেষ করে চাকরি খুঁজছেন। রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে তার বেশ আগ্রহও আছে। কিন্তু এবার ভোট দেবেন না।
তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আমাদের মত তরুণদের আগ্রহ রয়েছে, তবে সেটা হতে হবে সহিংসতামুক্ত, অবাধ ও নিরপেক্ষ। বর্তমানে যা দেখছি, তাতে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। সব দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি, যেন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে।”
আনিছুর কোনো বিশেষ দলকে দায় দিতে চান না। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৎ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং বিদ্বেষমূলক রাজনীতির চর্চা রয়েছে। এক পক্ষ ক্ষমতা পেলে অন্য পক্ষ হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়। এটা বিএনপি-আওয়ামী লীগ, দুই দলের জন্যই সত্য । এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
যে বিতর্কে ভোটে নেই বিরোধীরা
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদের বর্জনে মোট তিনটি নির্বাচন দেখছে বাংলাদেশ।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট বর্জন করে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে ওই বছরের জুনেই আরেকটি নির্বাচনে যায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং অন্য বিরোধী দলগুলো।
বিএনপি প্রথমে ‘না’ করলেও একতরফা নির্বাচনে জিতে কেবল একটি অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংসদ ভেঙে দেয়।
২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, এই বিতর্কে রাজনীতিতে দেখা দেয় নতুন সংকট। বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের হাতে তত্ত্বাবধায়কের প্রধান উপদেষ্টার ভার দিয়ে ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছাড়েন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের দায় কার?
এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহে জারি হয় জরুরি অবস্থা, বাতিল হয় সেই নির্বাচন। তিন মাসের জায়গায় প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটের নির্বাচনে বিপুল জয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটকে বলতে গেলে উড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে মহাজোট।
বিএনপি সরকারে থাকতে উচ্চ আদালতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ করে যে রিট আবেদন হয়, তার চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এই সরকার ব্যবস্থা সংবিধানবিরোধী। ওই বছরই নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে সংসদ।
এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের দশম এবং এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে বিএনপি ও সমমনারা। মাঝে ২০১৮ সালের একাদশে এলেও আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের।
বর্জনের দশম নির্বাচনের তুলনায় এবার কী পার্থক্য?
২০১৪ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনের কিছু পার্থক্য দৃশ্যমান। সেই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে একজন মাত্র বৈধ প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলেন। বাকি ১৪৭টি আসনে ভোট করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয় নির্বাচন কমিশনকে।
ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা, গাড়িতে পেট্রোল বোমার বিভীষিকা, ভোটকেন্দ্রে আগুন, নির্বাচনি কর্মকর্তা ও ভোটারের প্রাণহানির মধ্যে সব আসনে ৫ জানুয়ারি ভোট নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা যায়নি।
এবারও বিরোধী জোট হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। তবে সহিংসতা তুলনামূলক কম। বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যও এসেছে যে, তারা নির্বাচন প্রতিহত নয়, বর্জনের ডাক দিচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
ছাড় পাওয়া ২১ আসনে ‘স্বতন্ত্রের চাপে’ জাতীয় পার্টি
আওয়ামী লীগ এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউকে নির্বাচিত হতে দেখতে চায়নি। দলের সিদ্ধান্তে মনোনয়ন না পেয়ে দেড় শতাধিক আসনে স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে যান নেতারা। তারা নৌকার পাশাপাশি জোট ও অন্য দলকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, এমন আসনেও প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন।
যেসব আসনে নৌকার প্রার্থীর জয়ে দৃশ্যত বাধা নেই, সেগুলোতেও প্রার্থীরা হাত গুটিয়ে বসে নেই।
ঢাকা-৭ আসনে দৃশ্যত ঝুঁকি না থাকলেও নৌকার সোলায়মান সেলিম প্রতিদিন প্রচারে বের হয়েছেন। জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য একটাই, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো।
ঢাকা-৮ আসনে নৌকার বাহাউদ্দিন নাছিম ভোটারদের বলছেন, “আপনারা কেন্দ্রে আসুন, ভোট যাকে খুশি দেন।”
ঢাকা-১৩ আসনে নৌকার জাহাঙ্গীর কবির নানকের জন্য হুমকি হতে পারেন, এমন প্রার্থী নেই। কিন্তু সেই আসনে ১৮ দিন চলেছে বিরামহীন প্রচার।
কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী, শঙ্কাও আছে
গাজীপুর- ৪ আসনে কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা কাতিব হাসান ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে চান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রথমবার ভোটার হয়েছি। ইচ্ছা আছে ভোট দেব। কিন্তু যে পরিস্থিতি, তাতে এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।”
আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমিকে ঈগল প্রতীক নিয়ে মোকাবিলা করছেন তারই ফুপাত ভাই আলম আহমেদ। ফলে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস আছে।
আরও পড়ুন:
বিএনপি ভোট ‘বর্জনের’ ডাক দিয়েছে, 'প্রতিহতের' নয়: ফারুক
ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে কোন পথে বিএনপি
কাতিব হাসান বলেন, “নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাপক প্রচার চলেছে। তবে বড় দুটি দলের একটি অংশ না নেওয়ায় অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সব নাগরিক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারার পরিবেশ বজায় থাকুক।”
রাজশাহীর কবির হোসেন মহাখালীর আমতলী এলাকায় চা বিক্রি করেন। ভোটার ঢাকা-১৭ আসনে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় প্রচার চলেছে নিষ্প্রাণ।
ভোট দেবেন কি না, এই প্রশ্নে কবির বলেন, “ভোট দিমু। তবে কেন্দ্র মারামারি হয় কিনা এই ভয়ে আছি।”
মোহাম্মদপুরের চাঁনমিয়া হাউজিংয়ের একটি বাসার নিরাপত্তারক্ষী মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকা-১৩ আসনের ভোটার। তিনি বলেন, “ভোট দিব যদি সুযোগ পাই। তবে সুযোগই তো পাওয়া যায় না।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফার্মেসির দোকানি মো. সোহেল রানাও একই আসনের ভোটার। তিনিও ভোট দিতে যেতে চান। তবে কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় আছেন ।
ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থীর হাত থেকে লিফলেট পেয়ে অভিভূত শাহবাগ এলাকার রিকশা চালক মো. জাহাঙ্গীর। তার বাড়ি কেরানীগঞ্জে, যেটি পড়েছে ঢাকা-৩ আসনে।
তিনি বলেন, “আমার মত লোকেরেও পোস্টার দিয়া ভোট চাইল, দোয়া চাইল। আমি এইহানের ভোটার হইলে ইনারেই ভোট মারতাম। কিন্তু আমি কেরানীগঞ্জে ভোট দিমু।”
মোহাম্মদপুর শিয়া জামে মসজিদ এলাকায় রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করেন আনোয়ার হোসেন ও রুনো বেগম দম্পতি। দুজনই ঢাকা-১৩ আসনের ভোটার।
রুনো বলেন, “প্রতিবার আমরা নিজেগোর ভোট নিজেরাই দেই। এইবারও ভোট দিমু।”
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের আশরাফুল কবির ঢাকায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। এলাকায় গিয়ে ভোট দিতে আগ্রহ আছে তার।
তিনি বলেন, “এর আগে গেছিলাম, সেখান থেকে বললো আপনি কষ্ট করে আইসেন কেন, আপনার ফ্যামিলিসহ ভোট হইয়ে গেছে।”
ভোট দিতে ঢাকা ছাড়ছেন তারা
ঢাকার ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা ওয়ালিদ সিকদার রবিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ভোটার। উৎসাহ থাকলেও আগে ভোট দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বললেন, “এবার যাব। কারণ, আমার প্রার্থী আছে। এরই মধ্যে একাধিকবার এলাকায় ঘুরেও এসেছি।”
ঢাকার তিতুমীর কলেজের কর্মচারী দিলীপ কুমার বিশ্বাস থাকেন মহাখালীর আমতলীতে। তার বাড়ি কুমিল্লা-৮ আসনের বরুড়ায়।
আরও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের দায় কার?
ভোট বর্জন ২০১৪ সালে ভুল ছিল, এবারও ভুল: খুশী কবির
ভোট দেবেন? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “যাতায়াতের পরিবেশ থাকলে আর ভোটের দিন কেন্দ্রে মারামারির আশঙ্কা না থাকলে ভোট দিতে যামু।”
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে নার্সারির কর্মী মো. জীবন ইসলামের বাড়ি নীলফামারীতে, যেখানে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল আর আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা নৌকা ও স্বতন্ত্রের মধ্যে লড়াইয়ে নির্বাচন জমেছে বেশ।
জীবন বলেন, “ভোট দিতে যাব নীলফামারীতে। ভোট একটা উৎসব। এই উৎসবে যোগ দেব।”
শাহবাগে ফুটপাতে ভ্যানে ফল বিক্রেতা মো. আব্দুর রশিদে থাকেন তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে। তবে বাড়ি বগুড়ায়। তিনি বলেন, “ভোটের আগে দ্যাশে যামু।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদের বাড়ি ময়মনসিংহ-৬ আসনে। তিনি বলেন, “ভোট দিতে যাব। দেশ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনায় নির্বাচন অনেক জরুরি। নাগরিক হিসেবে ভোটারদেরও উচিত ভোট দেওয়া।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুল ইসলামের বাড়ি গাজীপুর-৩ আসনে। তিনিও ভোট দিতে এলাকায় যাচ্ছেন।
সাইফুল বলেন, “ভোট দেওয়া যেমন নাগরিক অধিকার, তেমন ভোটে অংশগ্রহণ করা সবার দায়িত্ব। ভোটের মাধ্যমেই যোগ্য মানুষকে গণমানুষের প্রতিনিধি করা যায়।”
মোহাম্মদপুরের বসিলায় থাকেন মোহাম্মদ সাদেক। তবে গাজীপুরের ভোটার। তিনি বলেন, “ভোট দেওয়া নাগরিক অধিকার এবং প্রত্যেকের দায়িত্ব ভোট দেওয়া। এই অধিকার থেকে ভোট দিতে যাব।”
ব্যাংকের কর্মী তানভীর আলম থাকছেন মিরপুর-১ এ, তবে ভোটার দিনাজপুরের। তিনি বলেন, “বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা আমার কাছে ভোট চেয়েছে। আমি এলাকায় গিয়ে ভোট দেব।”
পছন্দের প্রার্থী নাই, তাই কেন্দ্রে যাবেন না
উত্তরখানের ফায়দাবাদ এলাকায় থাকেন ফরিদ হোসেন। তিনি টাঙ্গাইল-১ আসনের ভোটার। ভোট দেবেন কি না, এই প্রশ্নে বলেন, “প্রতিযোগিতা না থাকায় ভোটে আগ্রহ নেই।”
ফায়দাবাদের আরেক বাসিন্দা আজিজুর রহমান বন্ধ পেয়ে নিজ এলাকা শেরপুরে যাবেন। তবে ভোট দেবেন না।
তিনি বলেন, “আমার পছন্দের প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের একজন আছে। তবে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই আগেই বলা যাচ্ছে তিনি জিতবেন। তাই আমার ভোটে আগ্রহ নেই।”
এই আসনের ফার্মগেট এলাকায় বাসিন্দা বিল্লাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা-১ আসনের দাউদকান্দিতে। তিনি বলেন, “এলাকায় যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ভোট দেব না। কারণ, আমার কোনো পছন্দের প্রার্থী নাই।”
ফার্মগেট এলাকার চা দোকানি মজনু মিয়া চিন্তিত নিরাপত্তা নিয়ে। তিনি বলেন, “আমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম যাইতে হইলে ভাড়া লাগব। আবার নিরাপত্তা নিয়াও চিন্তা। সব মিলায়া যাব না।”
ঢাকার গুলশানের একটি বেসরকারি কোম্পানির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সিয়াম আহমেদ টাঙ্গাইল-৫ আসনের ভোটার।
তিনি বলেন, “অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল। তাহলে ভোটের মাঠে একটা আমেজ থাকত। সেই আমেজটা যেহেতু নাই, তাই ভোট দেওয়ার ইচ্ছা কম।”
‘নির্বাচন তো নিজেদের মধ্যে’
গাজীপুর-১ আসনে নৌকার আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিমের মধ্যে লড়াই হচ্ছে জমজমাট।
তবু সেই আসনের ভোটার কালিয়াকৈর উপজেলার বাসিন্দা নুসরাত জাহান বর্ষা ভোট নিয়ে আগ্রহী নন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন তো শেষ পর্যন্ত শুধু সরকারি দলের মধ্যেই হচ্ছে। যদি সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হত, তাহলে ভালো হত।”
আরও পড়ুন:
নৌকা ‘ডোবানোর’ লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের ১৮ এমপি
আসনে আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ
গুলশানে ভ্যানে করে বাদাম বিক্রি করেন জামাল মিয়া, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের ভোটার।
এলাকায় যাবেন? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভোট দিতে গেলেই কী লাভ? বিপক্ষের লোক নাই। একজন যে আছে সেই জিতব।”
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল-বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
ঢাকা মেডিকেল এলাকায় ভ্যানে করে খিচুড়ি বিক্রি করেন আজিজুল হক। তিনি ঢাকা-৩ আসনের ভোটার।
কেন্দ্রে যাবেন? তিনি বলেন, "নির্বাচন নিয়া কোনো আগ্রহ নাই। শক্তিশালী বিরোধী ছাড়া কোনো মজা আছে নাকি?"
রাজশাহী-১ আসনের আনিছুর রহমান রিকশা ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তিনি বলেন, “ভোট দিলেও এই সরকার, না দিলেও এই সরকার। তাইলে ভোট দিয়ে কী হবে?”
‘গতবার যাইয়া শুনি আমার ভোট দেওয়া শ্যাষ’
বংশাল এলাকায় মোটরসাইকেল সার্ভিস সেন্টারের কর্মী মারুফ হোসাইন ভোটে আগ্রহী নন আগেরবারের অভিজ্ঞতার কারণে। তার ভোট ঢাকা-৩ আসনে।
তিনি বলেন, “গতবার ভোট দিতে যাইয়া শুনি আমার ভোট দেওয়া শ্যাষ। তাই ভোট আর কী দিমু? সুযোগ পামু কি না জানি না।”
নেত্রকোণা-২ আসনের আবদুল করিম ঢাকায় ফল বিক্রেতা। তিনি বলেন, “যাওয়ন লাগে না আমরার, আগেই ভুট অইয়া যায়। একবার গেছিলাম, পরে হুনি ভুট অইয়া গ্যাছে।”
মহাখালী এলাকায় ফেরি করে চা-সিগারেট বিক্রি করেন ফরিদা ইয়াসমিনও নেত্রকোণা-২ আসনের ভোটার।
তিনি বলেন, “আমার ভোট হয়ে যায়। আমরা গুষ্ঠী শুদ্ধা একদিকে, আমার কষ্ট কইরা যাওয়ন লাগে না।”
ঢাকা-১৮ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেরীফা কাদেরের হাত থেকে লিফলেট পেয়েছেন উত্তরখানের চা দোকানি মো. আতাউর রহমান। তবে তিনি ময়মনসিংহের ভোটার।
আতাউর বলেন, “এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছাও নাই। তার চেয়ে চা বেচলে আমার লাভ।”
কক্সবাজার-৩ আসনের ভোটার রামু উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাগরিক হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করায় এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”