“আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে কথা আমি বলব, সেটা ৭ তারিখের পরে,” বলেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা জাপা নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ।
Published : 04 Jan 2024, 12:30 AM
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে বেশিরভাগেই স্বস্তিতে নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
২১টি আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চ্যালেঞ্জ করছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গলকে। একটি আসনে বিএনপি ছেড়ে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীকে।
কেবল পাঁচটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চাপে নেই। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, রংপুর-৩ আসনের জিএম কাদের, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এ কে এম সেলিম ওসমান এবং ফেনী-৩ আসনের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তাই স্বস্তিতেই আছেন।
কিন্তু চাপে আছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। তিনটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনে জিতলেও এবার ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে।
১৯৯০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর জাতীয় পার্টি যেসব এলাকায় ভোট পেত, পরে সেগুলো তারা হারিয়ে ফেলে। ২০০৮ সালে জোট গঠনের পর এক সময়ের ঘাঁটি রংপুর বিভাগের যেসব আসনে নৌকা আর লাঙ্গলের সরাসরি লড়াই হয়েছে, সেসব আসনে জাতীয় পার্টি সুবিধা করতে পারেনি।
বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের এই ভোটে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে, তা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে ২৬টি আসন থেকে প্রার্থী তুলে নেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু কোনো আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরায়নি তারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, নৌকা সরে যাওয়ায় তাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের হয়ে কাজ করছেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “যেহেতু আমি নিজেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি, সে কারণে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র
প্রার্থী থাকার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে কথা আমি বলব, সেটা ৭ তারিখের পরে।”
চ্যালেঞ্জে চুন্নু
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ছাড়ে সহজ জয় পেয়ে আসছেন।
এবার নাসিরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করলে তিনি করিমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন। তখন ভাবা হচ্ছিল, এবার নৌকার প্রার্থী সেখানে থাকবেই। শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তে আশাহত হতে হয় তাকে।
‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লেখা পোস্টারই বলে দিচ্ছে কতটা চাপে চুন্নু।
যে দুটি উপজেলা নিয়ে এই নির্বাচনি এলাকা, তার মধ্যে তাড়াইল আওয়ামী লীগ কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিমুল হককে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছে। করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তার পাশে।
নাসিমুল হক বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাত জামাই। এই পরিচিতির কারণেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তার কাছে আসছেন।
আসনটিতে সবশেষ নৌকা ও লাঙ্গলের লড়াই হয়েছিল ২০০১ সালে। সেই নির্বাচনে নৌকা নিয়ে মিজানুল হক পান ৬৪ হাজার ২৩২ ভোট, চুন্নু পান ৬২ হাজার ৫৩৩ ভোট।
বৃহত্তর রংপুরের কী চিত্র
নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেলকে ছাড় দিয়ে সরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের জলঢাকা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা। তবে তার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা ঈগল প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। তাকে সমর্থন দিয়ে ভোটের মাঠ ছেড়েছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামিম এবং হুকুম আলী খান।
গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককে বলেন, “তাদের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হবে।”
মার্জিয়া বলেন, “দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাকে সমর্থন দিয়ে বসে গেছেন, এতে আমার জন্য আরও ভালো হয়েছে।”
যুবলীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেলও সেখানে লড়ছেন কাঁচি নিয়ে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সুখকর অবস্থায় নেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী ফারুক কাদেরের কারণে। ২০০৮ সালে তিনি ৭৮ হাজারের বেশি ব্যবধানে জামায়াতের প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। তিনি লড়ছেন কেটলি প্রতীকে।
নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমানকে ছাড় দিয়ে সরানো হয়েছে আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন বাবুলকে।
আওয়ামী লীগ নেতা মুখছেদুল মুমিন ট্রাক নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন। তিনি সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে প্রার্থী হয়েছেন।
আদেলুরের জন্য আরেক দুশ্চিন্তা জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক।
২০০৮ সালে মহাজোট করার পরও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে লড়াই হয়েছিল আসনটিতে। সেবার ১৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জেতেন নৌকার মারুফ সাকলান।
পরের দুটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
মুখছেদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাব না করেই নির্বাচনে নেমেছি। জনগণের ভালোবাসা দিয়েই জয়ী হয়ে আসব।”
কুড়িগ্রাম-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মো. পনির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে জাফর আলীকে প্রার্থী করেও সরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা হামিদুল হক খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর পনিরের জন্য কঠিন হয়ে গেছে ভোটের মাঠ।
জি এম কাদেরকে জেতাতে জাপা-আওয়ামী লীগের রুদ্ধদ্বার বৈঠক
সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামিদুলকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছেন। পনিরের পক্ষে আছেন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমানউদ্দিন মঞ্জু।
হামিদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুড়িগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ আমাকে ভোট দেবে বলে আশা করছি।”
২০০৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই আসন থেকেও জিতেছিলেন। পরে সেটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে হারিয়ে নৌকা নিয়ে জেতেন জাফর আলী।
রংপুরের যে দুটি আসনে নৌকা প্রার্থী দেয়নি, তার মধ্যে রংপুর-১ আসনে তৈরি হয়েছে জটিল সমীকরণ। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে লাঙ্গল নিয়ে জিতেছেন এখান থেকে।
জাতীয় পার্টি এবার প্রার্থী করেছে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ারকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলুও আছেন লড়াইয়ে।
রাঙ্গাঁ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় পার্টির প্রার্থী তো আমার সঙ্গে টিকবেই না, আর অন্য কাউকে নিয়েও আমি ভাবছি না।”
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির অবস্থান সব সময় ভালো। তবে শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবার লাঙ্গল নিয়ে লড়ে তার পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লিখেছেন।
এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন আফরুজা বারী মনোনয়ন পেলেও সরে যেতে হয়। তবে তার মেয়ে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে আছেন ভোটের লড়াইয়ে।
নাহিদ নিগার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি যেভাবে মানুষের সাড়া ও সমর্থন পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ বিজয় নিশ্চিত।”
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। লাঙ্গল প্রতীককে বিজয়ী করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।”
গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির আব্দুর রশিদ সরকারকে ছাড় দিয়ে সরতে হয়েছে আওয়ামী লীগের মাহবুব আরা বেগম গিনিকে।
রংপুর-১: লাঙ্গলবিহীন রাঙ্গাঁর সামনে আরেক হিসাব 'স্থানীয় প্রার্থী'
‘নিজেদের স্বার্থে’ সরছেন কেউ কেউ, ‘ব্যবস্থা’ নেবে জাপা
গিনি এই নির্বাচনে প্রথম জেতেন ২০০৮ সালে। ব্যবধান ছিল ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি। এরপর জয় পান আরো দুটি নির্বাচনে।
গিনি ভোট থেকে সরে আবদুর রশিদ সরকারের পক্ষেই নেমেছেন। তবে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীরের সঙ্গে। ২০১৯ সালে তিনি জাতীয় পার্টির এবারের প্রার্থীকে হারিয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান হন।
স্বস্তিতে নেই বগুড়ার দুই প্রার্থী
বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর পক্ষে সরেছেন আওয়ামী লীগের তৌহিদুর রহমান মানিক।
তবে নির্ভার নেই লাঙ্গলের প্রার্থী। কারণ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন কাঁচি প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। আবার উপজেলা আওয়ামী লীগ সমর্থন করছে বিএনপির সাবেক নেত্রী বিউটি বেগমকে। তিনি লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে।
বগুড়া- ৩ আসনেও একই অবস্থা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদমদিঘী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ কাজ করছে, কেউ করছে না।”
আদমদীঘী উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম রাজুকে এখানে প্রার্থী করেছিল আওয়ামী লীগ। তিনি সরে যাওয়ার পর তার ছেলে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ ঈগল নিয়ে, আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অজয় কুমার সরকার কাঁচি নিয়ে এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী ট্রাক নিয়ে লড়াই করছেন।
বগুড়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই জেলায় জাতীয় পার্টির তেমন কোনো শক্তি নেই। এরশাদ যখন ক্ষমতায় তখন কিছু মানুষ ছিলেন। কিন্ত দলে কোনো শক্তিশালী নেতা ছিলেন না। আওয়ামী লীগ ও জাসদের সমর্থনে আগের নির্বাচনে জিতে এসেছিলেন জিন্নাহ। নুরুল ইসলাম তালুকদারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দুইজনই চাপে আছেন।”
বরিশাল বিভাগের চার প্রার্থী
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জেতেন প্রথমবারের মতো। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি হেরে যান ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতানের কাছে। পরে গত নির্বাচনে আবার জেতেন।
আসনটিতে সরদার মো. খালেদ হোসেনকে প্রার্থী করেও সরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান।
মুলাদী উপজেলায় ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতানের ভালো সমর্থন আছে। ফলে এবারের নির্বাচনে ত্রিপক্ষীয় লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
বরিশাল-৬ আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী রত্না আমিনকে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজ মল্লিক ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার তিনবারের চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু রত্নার জন্য ভোটের মাঠকে কঠিন করে তুলেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ চুন্নুর পাশে, রত্মার পাশে জাতীয় পার্টি একা।
২০০৮ সালে রুহুল আমিন হাওলাদার এই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের ছাড় পেয়েছেন পটুয়াখালী-১ আসনে।
সেখানে তাকে ঠেকাতে বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের সমর্থকেরা বাংলাদেশ কংগ্রেসের নাসির উদ্দিন তালুকদারের পাশে অবস্থান নিয়েছেন।
পিরোজপুর-৩ আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে ভোটের লড়াইয়ে একবারই হেরেছেন রুস্তম আলী ফরাজী। জাতীয় পার্টিতে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত এই নেতাকে সরিয়ে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাসরেকুল আজমকে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আগেও জয় পাওয়া ফরাজী নেমেছেন ঈগল প্রতীকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. শামীম শাহনেওয়াজও ভোটের লড়াইয়ে কলার ছড়ি নিয়ে।
ময়মনসিংহের দুই আসন
ময়মনসিংহ-৫ আসন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল আবদুল হাই আকন্দকে। তাকে বসিয়ে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তিকে।
মুক্তি ২০১৪ সালেও বিএনপির বর্জনের ভোটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। বিএনপি এবারও ভোটে নেই, তিনি আবার প্রার্থী।
তবে মুক্তির পথ কঠিন করে তুলেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম। নজরুলকে সমর্থন দিয়েছেন দলের সিদ্ধান্তে ভোটের মাঠ ছাড়া আবদুল হাই আকন্দ।
ময়মনসিংহ-৮ আসনটি দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে জেতেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। ২০০৮ সালে জেতা আব্দুছ ছাত্তারকে প্রার্থী করে সরিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মাহমুদ হাসান সুমন আছেন লড়াইয়ে। তিনি সম্পর্কে ছাত্তারের ভাতিজা।
সুমন বলেন, “আওয়ামী লীগ পুরোপুরি আমার পেছনে।”
কী হবে চট্টগ্রামে
জেলার যে দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ২০০৮ থেকে তিনটি নির্বাচনে জিতেছেন। তবে এককভাবে নির্বাচন করে ২০০১ সালে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১৩ হাজারেরও কম।
টানা চারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও সরে যেতে হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী (কেটলি প্রতীক) এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার করিম বাবুল (ঈগল প্রতীক) প্রার্থী হওয়ার পর ভোটের সমীকরণ পাল্টে গেছে।
চট্টগ্রাম-৮ আসনটি ২০০৮ সাল থেকে জাসদ নেতা মইনউদ্দীন খান বাদলকে ছেড়ে আসছিল আওয়ামী লীগ। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয় পান আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন। তিনিও মারা গেলে ২০২৩ সালের শুরুর উপনির্বাচনে জয় পান চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। তাকে বসিয়ে দিয়ে জাতীয় পার্টির সোলায়মান শেঠকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে ভোটের হাওয়া ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
জি এম কাদেরকে জেতাতে জাপা-আওয়ামী লীগের রুদ্ধদ্বার বৈঠক
নীলফামারী-৩: সাবেক এমপির স্ত্রীকে সমর্থন দিলেন স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী
ফুলকপি প্রতীকে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের নগর কমিটির সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
ভেটের মাঠে বেকায়দায় পড়ার পর সোলায়মান আলম শেঠ সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন জাতীয় পার্টির মো. শাহজাহান আলমকে ছাড় দেওয়া হলেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারবেন কি না, তা নিয়েই আছে সংশয়।
আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ও শাহজাহানের শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধাও আছেন লড়াইয়ে।
মৃধা আগেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভালো ভোট পেয়েছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন পেলেও জাতীয় পার্টির জামানত বাজেয়াপ্ত হয় এখানে।
জি এম কাদেরের স্ত্রীও লড়াইয়ে
ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির শেরীফা কাদেরের জন্য বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিব হাসানকে বসিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় পার্টির এই আসনে সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে আছে প্রশ্ন।
নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরী আশা করছেন দলের সমর্থন তিনিই পাবেন। জিতেও আসবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আসনটি জাতীয় পার্টিকে দেওয়ার কারণে আমার জন্য সুবিধা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে কাজ করছে।”
শেরীফা কাদের বলেন, “সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে এলে লাঙ্গল জিতবে। এর বাইরে আর কিছু ভাবছি না।”
অন্য তিন আসনের চিত্র
হবিগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে বসিয়ে জাতীয় পার্টির এম এ মুমিন চৌধুরী বাবুকে ছাড় দেওয়া হলেও তার জন্য পরিস্থিতি সহজ নয়।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা গাজী মো. শাহেদ এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকে। তিনি আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহনেওয়ার মিলাত গাজীর ছোট ভাই।
সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীও ঈগল প্রতীকে আছেন ভোটের লড়াইয়ে। আসনটিতে ত্রিমুখি লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।
পোস্টার-লিফলেটে জাপার মুক্তিও ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’
চট্টগ্রামে দুই লাঙ্গলের সামনে আওয়ামী লীগের ৪ স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ
সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে বাদ দিয়ে আসাদুজ্জামান বাবুকে প্রার্থী করেছিল আওয়ামী লীগ। পরে তাকে বসিয়ে আসটি ছেড়ে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির আশরাফুজ্জামান খানকে।
মনোনয়ন থেকে বাদে পড়ে যাওয়া রবির জন্য শাপেবর হয়েছে। তিনি ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন।
সবশেষ ২০০১ সালে এককভাবে ভোট করে আসনটিতে সাড়ে ১২ হাজার ভোট পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।
মানিকগঞ্জ-১ আসনে দুইবারের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল আবদুস সালামকে। পরে তাকে সরিয়ে জাতীয় পার্টির জহিরুল আলম রুবেলকে ছাড় দেওয়া হয়। তবে নৌকা না পেয়ে সালাউদ্দিন মাহমুদ ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বলে ভোট চাইছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আসনটি আমার জন্য নতুন হওয়ায় কিছুটা চ্যালেঞ্জ হবে। তবে উৎরে যেতে পারব।”
সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “আমিই শেখ হাসিনার প্রার্থী। সারা জীবন নেত্রীর আদেশ পালন করে আসছি। তার আদেশেই প্রার্থী হয়েছি।”