এ দুই আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একাধিক প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
Published : 24 Dec 2023, 09:06 PM
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে দুটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ; কিন্তু এ দুই আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ জানাতে ভোটের মাঠে সরব স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ক্ষমতাসীন দলের চারজন।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত দুইবারের এমপি। তার অবস্থান তুলনামূলক ভালো হলেও চট্টগ্রাম-৮ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান আলম শেঠ।
এ দুই আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একাধিক প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ দুই আসনে কোন প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা প্রচারে অংশ নেবেন, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা তারা কেন্দ্র বা স্থানীয় পর্যায় থেকে পাননি।
ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি ও নিস্ক্রিয়তা আছে। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এবার সারাদেশেই দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়ায় এ দুই আসনেও স্বতন্ত্রদের পক্ষে মাঠে নামতে কোনো বাধা দেখছেন না তারা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশ আবার জাতীয় পার্টির প্রার্থীর হয়েও কাজ করছেন। তাদের যুক্তি, যেহেতু নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে রাখা হয়েছে, তাই তারা লাঙ্গলের হয়ে মাঠে আছেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরো একবার?
হাটহাজারী উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ও ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-৫ আসন। ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১০ হাজার।
এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার সংসদে এ আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনবারই নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন এম এ সালাম, পরে দলের সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়ান।
এবার চতুর্থবারের মত সরে দাঁড়ালেন এম এ সালাম। এ নিয়ে দলের তৃণমূলে অসন্তোষ আছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর কৌশল নেওয়ায় এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী (কেটলি প্রতীক) এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার করিম বাবুল (ঈগল প্রতীক)।
এছাড়া বিএনএফ এর আবু মো. শামসুদ্দিন (টেলিভিশন), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির কাজী মহসীন চৌধুরী (একতারা), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ হাফেজ আহমদ (চেয়ার), তৃণমূল বিএনপির মো. নাজিম উদ্দিন (সোনালী আঁশ) ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ মোখতার আহমেদ (মোমবাতি) ভোটে লড়ছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৪ আসনে ভোট করে নির্বাচিত হন। ওই আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী ছিল না। আর চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে হারিয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
২০১৪ সালে চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে ভোট করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
সবশেষে ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগ এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ২ লাখ ৭৮ হাজার ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ভোট।
গত তিন নির্বাচনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে। ফলে তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।
তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, “হাটহাজারীর জনগণ মুখিয়ে আছে পরিবর্তনের জন্য। দীর্ঘদিন ধরে হাটহাজারীতে উন্নয়নে অচলাবস্থা চলছে। সারাদেশের তুলনায় এখানে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এর জন্য প্রয়োজন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
“হাটহাজারীর সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দেবে। দলের নেতাকর্মীরাও আমার সঙ্গে আছেন। প্রত্যাশিত পরিবর্তনের জন্য ভোটাররা আমাকেই বেছে নিবেন।”
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি আর বিভ্রান্তিও যে আছে, তা হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রলীগ আরিফুর রহমান রাসেলের কথায় স্পষ্ট।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। কিন্তু এ আসনে এবারসহ চারবার নৌকার প্রার্থী নেই।
“কেউ কেউ নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার শুরু করলেও বেশিরভাগ নেতাকর্মী এখনো চুপচাপ ও নিস্ক্রিয়। আমরা এখনো জানি না করণীয় কি।”
অবশ্য হাটাহাজারী আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে থাকার কথা বলছে। তাদের একজন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুচ গণি চৌধুরী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দেখতে হবে নেত্রী কাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি আমাদের সিনিয়র নেতা এম এ সালাম ভাইকে সরিয়ে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দিয়েছেন। সেই আলোকেই আমাদের কাজ চলছে। আমরা তো নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।
“স্বতন্ত্র কেউ প্রার্থী হতে চাইলে হতে পারেন। কেউ তাদের জন্য কাজ করতে চাইলে কাজ করবে। তাতে কোনো সমস্যা হবে না।”
অবশ্য ভিন্ন মত আছে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের সিদ্ধান্তে আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি। এতে কোনো আফসোস নেই। আমাদের এলাকায় কিছু আওয়ামী জাতীয় পার্টি আছে। তারা শুরু থেকেই জাতীয় পার্টির সাথে।
“তারা আধা জাতীয় পার্টি, আধা আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কারণে কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। তাই দলের নেতাকর্মীরা কিছু এদিকে কিছু ওদিকে।”
দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছেন। এ বিষয়ে সালামের ভাষ্য, “তিনি ছাত্রলীগ করে এসেছেন। এখন আওয়ামী লীগ নেতা। দলের নেতাকর্মীরা উনার জন্য খাটবেন এটাই তো স্বাভাবিক।”
অক্টোবরে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম নামের নতুন দল গঠন করে এর আহ্বায়ক হন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন। অবশ্য নিবন্ধন না থাকায় পরে তিনি তৃণমূল বিএনপি থেকে এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা জাতীয় ছাত্রলীগের সদস্য নাজিম উদ্দিন ১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের প্যানেল থেকে চাকসু ভিপি হন। সেই থেকে ভিপি নাজিম নামে পরিচিত নাজিম উদ্দিনের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু অংশ আছে।
নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, “অন্য অনেক সংসদীয় আসনের তুলনায় আমাদের এলাকায় শান্তিপূর্ণ। মনে হয় ভালো নির্বাচন হবে। আমরা চাই ভোট নিয়ে মানুষের মাঝে যে অনীহা আছে সেটা কেটে যাক। ভোটার নিজের ইচ্ছে মত ভোট দিক, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে আসুক।”
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অবশ্য তার সামনে বড় কোনো বাধা দেখছেন না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শেষ তিনবারসহ মোট ছয়বার আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতেই পারে। তাতে অসুবিধা নেই। প্রার্থী বেশি থাকলে ভোটারও বেশি আসবে কেন্দ্রে।
“নির্বাচন যখন করছি আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এলাকায় আমি অনেক উন্নয়ন করেছি। ভবিষ্যতেও প্রত্যেকটা মানুষ যে যেই দলই করুক না কেন আমি তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করব। এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করব।”
উন্নয়ন চান হাটহাজারী দক্ষিণ মাদার্শার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুনও। তার মতে, এবার ভোটের মাঠে ভালো লড়াই হতে যচ্ছে এ আসনে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মামুন বলেন, “কিছু সড়কের কাজ হয়েছে। আরও কিছু সড়ক উন্নয়ন প্রয়োজন। হাটাহাজারীতে স্থানীয় সড়কগুলোই মূল সমস্যা। এবার সরাসারি নৌকার প্রার্থী নেই। তবে স্বতন্ত্ররা মাঠে আছেন। ভোটের লড়াই জমবে বলেই মনে হচ্ছে।”
হাটহাজারীর আরেক ভোটার মহিউদ্দিন চৌধুরী সুমন বলেন, “আমাদের হালদায় বেড়িবাঁধ হয়েছে। এ থেকে এলাকার মানুষ উপকৃত। উন্নয়ন যে একেবারে হয়নি তা নয়। ভোটে সবসময় দলীয় প্রভাব থাকে। যেহেতু এবার নৌকা সরাসরি প্রার্থী নেই তাই প্রতিযোগিতা হবে। এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে ভোট শান্তিপূর্ণ হবে।”
সোলায়মান শেঠের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে?
নগরীর পাঁচলাইশ-চান্দগাঁও এলাকায় সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনে ভোটার মোট ৫ লাখ ৪৩ হাজার।
এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল। তিনি আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন।
২০১৯ সালে তিনি মারা গেলে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে যান মোছলেম উদ্দিন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেমও মারা গেলে সংসদের মেয়াদের আট মাস বাকি থাকতে আবার উপনির্বাচন হয়।
গত এপ্রিলে সেই উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে এখানে সংসদ সদস্য হন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ।
এবারও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান আলম শেঠকে ওই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে নোমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
এ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম (কেটলি) এবং নগর কমিটির সদস্য সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী (ফুলকপি)।
এছাড়া বিএনএফ এর এস এম আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন), তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা (সোনালী আঁশ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (চেয়ার), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ ইলিয়াছ (হাতছড়ি), এনপিপির মো. কামাল পাশা (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. মহিবুর রহমান বুলবুল (ডাব) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আব্দুন নবী (মোমবাতি) প্রতীক নিয়ে এই আসনে নির্বাচন করছেন।
জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার এমপি হন।
২০১৪ বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বাদল জয় পেয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৭২ হাজার ভোট পেয়ে বিজীয় হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবু সুফিয়ান পান ৫৯ হাজার ভোট।
ফলাফল যাই ঘটুক, ৫ বছরের মধ্যে চতুর্থবার নতুন সংসদ সদস্য পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-৮।
দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সালে এ আসনে নৌকার জয় হয়েছিল মইন উদ্দিন খান বাদলের কল্যাণে। তার মৃত্যুর পর দুটি উপ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হলেও আসন ভাগাভাগির খেলায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আবার নৌকাশূন্য।
নৌকা না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালামকে শক্ত প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা। অর্থ এবং পেশী- দুই শক্তিই তার আছে।
সিডিএ এর সাবেক চেয়ারম্যান ছালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসাবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
“চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে নগরীকে সুরক্ষা দিতে অনেক মেগা প্রকল্প আমি প্রিয় নেত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নিতে সক্ষম হয়েছি। বিজয়ী হলে আমি এলাকার জনগণকে উন্নয়ন উপহার দেব।“
ছালাম বলেন, “আমি কাজের মধ্যেই প্রমাণ করে দিতে চাই। বিগত দিনে উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে যেভাবে সাজিয়েছি সেভাবে আমি আমার আসন বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাচঁলাইশকে সাজাতে চাই।”
দল এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার পরও প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ছালাম বলেন, “সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমি প্রচার প্রচারণায় এলাকার মানুষের সাথে আছি। দলীয় নেতাকর্মীরা আমার সাথে আছেন।”
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় কুমার চৌধুরী বলেন, “নগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ আমার সাথে আছে। আমি ছাত্রলীগ করেছি। নগরীর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। বোয়ালখালীর সন্তান হিসেবে আমি এলাকার মানুষের সমর্থন পাব।
“স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার বিষয়ে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুমতি দিয়েছেন। দলের যে দুজন এখানে সংসদ সদস্য ছিলেন তারা বেশি সময় পাননি। তাদের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে এবং সেতুর অভাবে বোয়ালখালীর মানুষের কষ্ট লাঘব করতে আমি কাজ করব।”
নৌকার প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি আর বিভ্রান্তি আছে এ আসেনেও।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা আওয়ামী লীগ বা কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় আমরা এখনো নীরব। কর্মীরা যে যার অনুসারী সেদিকে যাবে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ পক্ষ নিয়েছে।
“যেহেতু নৌকার প্রার্থী নেই, তাই দলীয় সমর্থক ভোটারদের জন্য ওপেন। এদেশের মানুষ সচেতন। তারা নিজ বিবেচনায় ভোট দেবে। সাধারণ মানুষ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
সোলায়মান আলম শেঠ এর আগে কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। গতবার তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে দলীয় সিদ্ধানেত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে এর আগে কখনও নির্বাচন করেননি সোলায়মান। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮ হাজার ১৮০ ভোট পান জাতীয় পার্টির এ নেতা। ২০১৮ সালে আবার ওই আসনে প্রার্থী হয়ে ভোট পান ২ হাজার ৩৪৩ ভোট।
সোলায়মান শেঠ ব্যবসা করেন। তিনি শেঠ গ্রুপ নামের একটি শিল্প গোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই গোষ্ঠীর অধীনে আবাসন ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আছে। পারিবারিকভাবে তিনি প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক।
জাতীয় পার্টির এই প্রার্থী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার উপর আস্থা রেখেছেন বলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আমার জন্য কাজ করছেন।
“দল হিসেবে আমরা সবসময় নির্বাচনমুখী। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন তাই ২৮৩ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে। আমরা ছাড়া বড় কোনো দল ভোটে নেই। এটা সবাইকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আশা করি আমি ভালো ফল পাব। কালুরঘাট সেতু হবে বলে আমি আশাবাদী। বিজয়ী হলে সবার জন্য সমান উন্নয়ন হবে বোয়ালখালীতে।”
বোয়ালখালীর মানুষের একটি বড় চাওয়া হল কালুরঘাট সেতু। অতীতে প্রতিবারই নির্বাচনে এসে প্রার্থীরা এ সেতু বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু তা আর হয়নি।
সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মোমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রার্থীরা সবাই সেতুর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু সেটা নির্বাচনী কৌশল। আমরা চাই ভোটে যেই জিতুক, সংসদে তিনি দাবিটি তুলে ধরবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানাবেন। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললেই এ সেতু হবে।
“ভোটে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা ভোট দেওয়ার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করবেন। তার মধ্যে প্রথমটি হল সেতুর বিষয়ে কে ভূমিকা রাখতে পারবে সেটা। এছাড়া এলাকার বাসিন্দা কিনা, দলের সমর্থন কোন দিকে- স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এরকম কিছু বিষয়ও ফ্যাক্টর হবে।”
বোয়ালখালী চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি হলেও এ এলাকা সবসময় ‘অবহেলিত’ থেকেছে বলে মনে করছেন সারোয়াতলীর বাসিন্দা রাজীব সেন।
তিনি বলেন, “মইন উদ্দিন খান বাদলের আমলে সড়কসহ বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বোয়ালখালীবাসীর অন্যতম প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু হয়নি। সংসদে তিনি এ নিয়ে জোরালো অবস্থান রেখেছিলেন।
“এরপর আরো দুজন সংসদ সদস্য হয়েছেন, কিন্তু তারা সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেননি। বোয়ালখালীবাসী চায় সেতু। সংসদে যিনি এ দাবি উত্থাপন করতে পারবেন এরকম প্রার্থীই আমরা চাই।”