“আমাকে প্রার্থী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এ আসন থেকে নৌকা মনোনীত প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়েছেন। তার মানে আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী।”
Published : 23 Dec 2023, 03:41 PM
মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পর ময়মনসিংহ-৫ আসনেও লাঙ্গলের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি পোস্টার ও লিফলেটে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত’ এর পাশাপাশি ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লিখেছেন।
এ ঘটনায় মুক্তাগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের অন্যান্য প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু। তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।
ওই আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতায় আওয়ামী লীগ এ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি এখানে লাঙ্গলের প্রার্থী হয়েছেন।
তবে এ আসনে কৃষক লীগের সহসভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি ২০১৪ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে বিভাজন কাজ করছে।
জাতীয় পার্টির পক্ষে সরাসরি মাঠে কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে ওই এলাকার শামসুল ইসলাম নামে একজন ভোটার বলেন, “এবারও বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। তাই আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল বানিয়ে সংসদে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বেশ কয়েকটি আসন ছেড়েও দিয়েছে।
“কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় এই আসনে জাতীয় পার্টির জেতা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই হয়ত সাধারণ ভোটারের মন আকৃষ্ট করতে পোস্টার লিফলেটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কথাটি লিখেছেন। এটি পজেটিভ-নেগেটিভ দুটিই হতে পারে।”
ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, “আসন সমঝোতা মানে এই নয়, সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তিনি পোস্টার-লিফলেটে এসব লিখে সাধারণ ভোটারদের বিব্রত করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সুনামও ক্ষুণ্ন করছেন। এটি মুক্তির রাজনীতির দুর্বলতা। বিষয়টিতে কঠিনভাবে হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।”
মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকার বলেন, “আমরা উপজেলা এবং শহর আওয়ামী লীগের নেতারা সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তিকে সমর্থন দিয়েছি। তাকে জেতানোর জন্য কাজও করছি।
“তবে মুক্তির পোস্টার এবং লিফলেটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কথা লেখা ঠিক হয়েছে কি-না বলতে পারব না। সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।”
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি বলেন, “আমাকে প্রার্থী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসন থেকে নৌকা মনোনীত প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়েছেন। তার মানে আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিষয়টি পোস্টার কিংবা লিফলেটে লিখা নিয়ে দোষ কিংবা সমালোচনার কিছু দেখছি না।”
মাঠের অবস্থা খুবই ভালো তাই একটি পক্ষ এসব নিয়ে সমালোচনা করছে বলে জানান তিনি।
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ ও তাড়াইল) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানেও আসন সমঝোতার কারণে নৌকার প্রার্থীকে বসে যেতে হয়েছে।
চুন্নু তার পোস্টারে ‘জাতীয় পার্টির মনোনীত’ এর পাশাপাশি ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লিখে ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে নিজের নির্বাচনি আসনে প্রচারে গিয়েও বিষয়টির অবতারণা করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা পার্লামেন্টে থাকার জন্য নির্বাচন করছি। আমরা কোনো ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন করছি না। এটা কোনো মহাজোট হচ্ছে না। বিভিন্ন দলের ধারণা তৈরি হয়েছে, আমরা জোট করেছি।
“আমাদের প্রার্থীরা অনেকেই ভুল করছেন। এটা ইলেকশন কমিশনের দেখা উচিত ছিল। আমরা আগে মহাজোটে ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই। এই নির্বাচন মহাজোটের নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তিও করিনি।”