স্প্যানিশ ফুটবল
নিজেই দলবদলের অর্ধেক খরচ দিয়ে দেপোর্তিভো লা করুনায় ফিরেছিলেন লুকাস পেরেস, বছর দেড়েক পর তার গোলেই দলটি তৃতীয় স্তর থেকে উঠল দ্বিতীয় স্তরে।
Published : 14 May 2024, 09:52 PM
স্পেনের শীর্ষ লিগে খেলেন। বেতনও বেশ ভালো। দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। কিন্তু একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, ‘ঘরে ফিরতে হবে।’ এজন্য নিজের পকেট থেকে খরচ হবে প্রায় পাঁচ লাখ ইউরো। খেলতে হবে দুই ধাপ নিচে, তৃতীয় স্তরের ফুটবলে। বেতন কমে যাবে ১০ গুণ। অনেকেই হয়তো এই পথ বেছে নেবেন না। কারো কাছে মনে হবে অর্থহীন। কিন্তু লুকাস পেরেস এসব ভাবেননি। স্রেফ ভালোবাসার টানে, প্রিয় ক্লাবকে শীর্ষ স্তরে তোলার তাড়নায় তিনি ফিরে যান দেপোর্তিভো লা করুনায়। ভাগ্যের কী খেলা, তার গোলেই জিতে দলটি চার বছর পর তৃতীয় স্তর থেকে উঠে এলো দ্বিতীয় স্তরে!
যে ৯টি ক্লাব স্পেনের শীর্ষ লিগ লা লিগার শিরোপা জিতেছে, তার একটি এই দেপোর্তিভো লা করুনা। গত শতাব্দীর নম্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ও এই শতাব্দীর শুরুর দশকের প্রথম দিকের বেশ সমীহ জাগানিয়া এক দল। স্পেনের দুই জায়ান্ট রেয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার চোখে চোখ রেখে লড়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সালে লা লিগার শিরোপা ঘরে তোলে তারা। পরের দুই মৌসুমে হয় লিগের রানার্সআপ, এর পরের দুই মৌসুমে তৃতীয়। মাঝে ২০০১-০২ মৌসুমে জেতে কোপা দেল রে শিরোপা।
ওই সময়ে ইউরোপ সেরার মঞ্চেও তাদের ছিল সফল বিচরণ। টানা দুই মৌসুমে খেলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে (২০০০-০১ ও ২০০১-০২)। ২০০৩-০৪ মৌসুমে পৌঁছে যায় প্রতিযোগিতাটির সেমি-ফাইনালে। দেপোর্তিভোকে তখন ডাকা হতো ‘সুপার দেপোর’ নামে।
সেসব এখন তাদের সোনালি অতীত। ২০১৮ সালে তারা লা লিগা থেকে নেমে যায় স্প্যানিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর সেগুন্দা ডিভিশনে। ২০২০ সালে খায় আরেক ধাক্কা, নেমে যায় তৃতীয় স্তরে। চার বছর ধরে এই বিভাগেই আছে তারা।
আগামী মৌসুমে আবার তাদের দেখা যাবে দ্বিতীয় স্তরে। গত রোববার বার্সেলোনা আতলেতিককে ১-০ গোলে হারিয়ে তারা নিশ্চিত করে দ্বিতীয় স্তরে ওঠা। এই বার্সেলোনা আতলেতিক মূলত বার্সেলোনার ‘বি’ দল। ৩১ হাজার ৮৩৩ জন দর্শকের উপস্থিতিতে ঘরের মাঠে ওই ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন পেরেস। ৫৭তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে চমৎকার ফ্রি-কিকে বল জালে পাঠান ৩৫ বছর বয়সী স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
স্পেনের যে শহরের ক্লাব এই দেপোর্তিভো, সেই আ করুনায় জন্ম পেরেসের। এই ক্লাবের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে তাকে ছাড়তে হয় ঘর। যুব পর্যায়ে কয়েকটি ক্লাব ঘুরে তিনি যোগ দেন আতলেতিকো মাদ্রিদের ‘সি’ দলে। সেখান থেকে রায়ো ভাইয়েকানোর ‘বি’ দলে। পরে অভিষেক হয় ক্লাবটির মূল দলের হয়ে।
এরপর ইউক্রেইন, গ্রিস ঘুরে অবশেষে দেপোর্তিভোর হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় তার ২০১৪ সালে। গ্রিক দল পিএওকে থেকে ২০১৪-১৫ মৌসুমে ধারে নিজ শহরের ক্লাবে যোগ দেন তিনি। চোটের কারণে সেবার খুব বেশি ম্যাচ যদিও খেলতে পারেননি। তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঠিকই হয়ে ওঠেন দলের ত্রাতা। লা লিগার শেষ রাউন্ডে কাম্প নউয়ে বার্সেলোনার সঙ্গে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও ২-২ ড্র করে অবনমন এড়ায় দেপোর্তিভো। দলের প্রথম গোলটি করেন পেরেস।
পরের মৌসুমে তাকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেয় দেপোর্তিভো। তিনিও প্রতিদান দেন দারুণভাবে, সেবার লা লিগায় ১৭ গোল করে তিনিই ছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার।
পরের মৌসুমে তার ডাক পড়ে ইংলিশ ফুটবলে। যোগ দেন আর্সেনালে। এমিরেটস স্টেডিয়ামে সেবার সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২১ ম্যাচ খেলে তিনি গোল করেন ৭টি। পরের মৌসুমে ধারে তাকে পাঠানো হয় পুরোনো ঠিকানা দেপোর্তিভোয়। ওই মৌসুম শেষেই লা লিগা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায় দলটি।
পেরেস ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে এক মৌসুম কাটিয়ে আবার ফেরেন স্প্যানিশ ফুটবলে। আলাভেস, এলচে হয়ে নাম লেখান কাদিসে, সবগুলো ক্লাবই খেলে স্পেনের শীর্ষ লিগে।
একদিকে প্রিয় ক্লাব দেপোর্তিভো তৃতীয় স্তরে ধুঁকছে। পেরেস তাই অনুভব করেন বাড়তি তাড়না। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিন কাদিস থেকে তিনি ফের যোগ দেন নিজ শহরের ক্লাবে। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না। ট্রান্সফার ফ্রি প্রায় অর্ধেকটা যে দিতে হয়েছিল পেরেসের নিজের পকেট থেকে! অঙ্কটা ছিল চার লাখ ৯৩ হাজার ইউরো।
বছর দেড়েক পর পূর্ণ হলো তার একটি চাওয়া। তার গোলেই দল উন্নীত হলো দ্বিতীয় স্তরে। ফ্রি-কিকে গোলটি তার সামর্থ্যের প্রমাণও।
দলকে দ্বিতীয় বিভাগে তুলতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত পেরেস।
“যখন আমি এখানে ফিরে এলাম, তখন অনেকে বলেছিল আমি পাগল হয়ে গিয়েছি, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি দেপোর্তিভো কী।”
“আমি দলকে সাহায্য করতে এসেছিলাম। এখন করুনাকে এই অবস্থানে দেখে খুব ভালো লাগছে, দেপোর্তিভোর সঙ্গে পেশাদার ফুটবলে ফিরে আসতে পেরে আমি অনেক খুশি; এটা আনন্দের। যখন বাড়ি ফেরার তাড়না বোধ করবেন, তখন আপনি কল্পনা করেন যে সুন্দর সব ঘটনা ঘটবে। এমন আবহ দেখা এবং মানুষকে খুশি করতে পারা দারুণ ব্যাপার।”