ম্যাচের পর ম্যাচে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে, তবে এই চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করেই এগোতে চান তিনি।
Published : 26 Apr 2025, 07:29 PM
গা গরম আর ফিল্ডিং অনুশীলনের পর শুরু হলো নেটে ব্যাটিং-বোলিং। প্রেস বক্স প্রান্তে পাশাপাশি নেটে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ব্যাট করলেন জাকের আলি। চট্টগ্রামে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের অনুশীলনের এই চিত্র অবশ্য ম্যাচে খুব বেশি দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে যে কমই ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান জাকের!
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজের সিলেট টেস্টের কথাই ধরা যাক। প্রথম ইনিংসে ছয় নম্বরে নেমে সঙ্গী হিসেবে মুমিনুল হককে পান জাকের। কিন্তু দ্রুতই ড্রেসিং রুমে ফিরে যান মুমিনুল। পরে টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে দুইশর কাছে নেন জাকের।
একই ছবি দেখা যায় দ্বিতীয় ইনিংসেও। এবার মিরাজের আগে জাকেরকে একা রেখে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে আড়াইশ পার করান জাকের।
চার টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে তাকে। তবে কঠিন এই চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করেই এগোতে চান ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিন সকালে শান্ত ও মিরাজ দ্রুত আউট হওয়ার পর বাংলাদেশ যে শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে ১৭৪ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল, সেটি মূলত জাকেরের কারণেই। ছয় নম্বরে নেমে শেষ দিকের লড়াইয়ে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে জাকেরেরও সেটি ছিল চতুর্থ ফিফটি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম চার ম্যাচে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েন তিনি।
আগের তিন ম্যাচেও সহজ পরিস্থিতি পাননি জাকের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১২ রানে ৬ উইকেট পড়ার ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি। সঙ্গী হিসেবে পান বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের বন্ধু মিরাজকে। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ১৩৮ রানের জুটি। সেদিন ৫৮ রান করে আউট হন জাকের।
পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টেও তাইজুল-হাসানদের নিয়ে লড়াই করে খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রবল চাপের মুখে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৯১ রান করেন জাকের। যা দলকে এনে দেয় বড় লিড। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়েও বাংলাদেশ পায় দারুণ এক জয়।
একই পথের পথিক তিনি জিম্বাবুয়ে সিরিজেও। দুই ইনিংসেই যেন নিঃসঙ্গ যোদ্ধা। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খেলেও পক্যারিয়ারের প্রথম আট ইনিংসে ৩২২ রান করে ফেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ক্যারিয়ারের প্রথম আট ইনিংসে এর চেয়ে বেশি রান আছে শুধু মুমিনুল হক (৪৫৮) ও হাবিবুল বাশারের (৩৩৪)।
ওপরের দিকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে হয়তো আরও বাড়ত বড় রানের সম্ভাবনা। তবে শেষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াইয়ে অভিযোগ নেই তার। চট্টগ্রামে শনিবার দলের অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে কঠিন এই পরীক্ষায় জেতার প্রত্যয়ের কথা শোনান জাকের।
“আসলে পরিস্থিতি যেমন থাকে, তেমনভাবেই খেলতে হবে। এটা নিয়ে আসলে কিছু বলার নেই। টেইলএন্ডারদের নিয়ে যেমন পরিস্থিতি থাকে, চেষ্টা করি যেন বড় ইনিংস করা যায়। যতটুকু দূরে যাওয়া যায়।”
“বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমি ছয়-সাত নম্বরে ব্যাটিং করেছি। তাই টেইলএন্ডারদের নিয়ে খেলে অভ্যাস আছে। যে কারণে আমার ৫ বছর (আসলে ৬) লেগেছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একশ করতে। এগুলো হবেই। এই টাফনেস নিয়েই পথচলা। চেষ্টা করছি আরও ভালো কিছু করার।”
২০১৬ সালের জাতীয় ক্রিকেট লিগ দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জাকেরের অভিষেক। প্রথম সেঞ্চুরির জন্য তার অপেক্ষা করতে হয় ২০২২ সালের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) পর্যন্ত। ততদিনে ৬৩ ইনিংসে ১৪টি ফিফটি করেছিলেন তিনি। সেঞ্চুরির দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পরের দুই ইনিংসেও পান শতরানের স্বাদ।
ওই বিসিএলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলের ভাবনায় চলে আসেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। পরে গত বছর হয় টেস্ট অভিষেক। ঘরোয়া ক্রিকেটের পর এবার আরও বড় মঞ্চেও চলছে শেষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তার লড়াই।
সেই পথে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা কিছু প্রশ্ন অবশ্য তোলা যায়। হাসানের সঙ্গে জুটিতে বেশিরভাগ সময়ই ওভারের প্রথম এক-দুই বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক ছেড়ে দিচ্ছিলেন জাকের। যে কারণে ৯১ বলের জুটির বেশিরভাগ বল হাসানই খেলেন।
সেদিন হাসানকে বারবার স্ট্রাইক ছেড়ে দেওয়ার পেছনে দলের পরিকল্পনার কথা জানালেন জাকের।
“সাত উইকেট পড়ার মানে আরও তিন উইকেট আছে। আপনি যখন লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন, তখন প্রতিটা রান গুরুত্বপূর্ণ। হাসান মাহমুদ ৫৮টা বল খেলেছে। আমরা ৩৭ (আসলে ৩৫) রানের একটি জুটি গড়েছি। হাসান একাই যদি ওই রানটা করত, আমার সমস্যা ছিল না।”
“আমরা যেহেতু লক্ষ্য দিচ্ছি, আমার পরিকল্পনা এটাই ছিল। কারণ প্রথম থেকে আমাকে তেমন আক্রমণ করেনি। হাসান যখন এলো, সবকিছু ছেড়ে দিছে। আমার পরিকল্পনা ছিল, দ্বিতীয় নতুন বল এলে হয়তো একটু আক্রমণ করবে। কিন্তু হয়নি। এটাই পরিকল্পনা ছিল, খেলাটা বড় করা। যত দূরে নেওয়া যায়।”
গত বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে যাত্রা শুরুর পর থেকে তিন সংস্করণে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন জাকের। টেস্টের মতো ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতেও ধারাবাহিক রান করছেন তিনি।
সংস্করণভেদে ভালো খেলার পেছনে মানসিকতা ঠিক রাখার কথা বললেন জাকের।
“একদম সিম্পল থাকার চেষ্টা করি। পুরোটাই মাইন্ডসেটের ব্যাপার। যে বলেই খেলি, ওইটা নিয়ে প্রস্তুতি থাকে। কিছু ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া আছে, অনুশীলন আছে- সেগুলোতে মনোযোগ থাকে। টেস্টে কিন্তু আমি রানের জন্য অত তাড়াহুড়ো করি না। টি-টোয়েন্টিতে আবার দ্রুত খেলার চেষ্টা করি। তো এই জিনিসগুলো মাইন্ড গেমের সঙ্গে খেলার চেষ্টা করি।”