পদত্যাগপত্রে উপাচার্য 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর অগ্রহণযোগ্য ও অসম্মানজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির’ কথা বলেছেন।
Published : 27 Apr 2025, 01:15 AM
একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মধ্যে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য আবুল কাসেম মিয়া ও ১১ বিভাগীয় প্রধান পদত্যাগ করেছেন।
শনিবার রাতে একযোগে পদত্যাগ করেন তারা।
তাদের সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক পেইজে জানানো হয়।
এদিন সকালে রাজধানীর ভাটারা মাদানী এভিনিউতে ইউআইইউ ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন মোহাইমিনুল ইসলাম এক ভিডিও বার্তায় বলেন, "এক শিক্ষার্থীর মিডটার্ম দিতে না পারা, মিডটার্ম পরীক্ষার সময় কমানো এবং শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ইম্প্রুভমেন্ট ফি কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও আগের মত ক্রেডিট প্রতি ১৫০০ টাকা নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
"কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি মেয়ের বাবা মারা যান মিডটার্মের ৫ দিন আগে। সে তাই মিডটার্ম দিতে পারেনি। সে বাবার ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে মেকআপ মিড দিতে চাইলে বিভাগীয় প্রধান তাকে তিন দিনের মধ্যে বাবা মারা যাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসকের প্রত্যয়ন জমা দিতে বলে। না হলে তাকে নির্ধারিত ফি দিয়ে ইম্প্রুভমেন্ট দিতে বলা হয়।”
মোহাইমিনুল বলেন, “সেই ইম্প্রুভমেন্ট দিতে গেলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ইম্প্রুভমেন্ট ফি কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও আগের মত ক্রেডিট প্রতি ১৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের পরীক্ষার সময় কমিয়ে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট করা হলেও প্রশ্নের ব্যাপ্তি কমানো হয়নি। এটি করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি ইম্প্রুভমেন্ট দেওয়া লাগে তাই।"
শনিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হুদার পদত্যাগ, মিডটার্মের সময় আবার পৌনে দুই ঘণ্টা করা ও ক্রেডিট প্রতি ইম্প্রুভমেন্ট ফি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন।
এর মধ্যে বিকাল থেকে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে অনশন শুরু করে আন্দোলনকারীদের একটা অংশ। রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে।
এর মধ্যে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১২ জনের পদত্যাগের ঘোষণা আসে।
কিন্তু পদত্যাগের খবর আসার পরও আন্দোলনকারীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
কারণ হিসেবে রাত ১২টার দিকে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ’ তাদের ফেইসবুক বলে, প্রশাসনিক পদের বেশির ভাগ ব্যক্তির পদত্যাগকে শিক্ষার্থীরা ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন। তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
এরপর রাত সোয়া ১২টার দিকে আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আলোচনার অংশ হিসেবে দাবির আওতামুক্ত থাকা বাকি শিক্ষকদের সম্মানের সঙ্গে হিউম্যান চেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।
“আমরা আশা করব ভিসি এবং সিএসই ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান বাদে অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং পারস্পরিক সমঝোতার অংশ হিসেবে, তারা তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন এবং শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবেন।”
রাত পৌনে ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. সাদিকুর রহমান দীপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভিসি স্যারসহ শিক্ষকরা এখনও অবরুদ্ধ।
“ভিসি স্যারের পদত্যাগপত্রের ভাষা পরিবর্তনের দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। ভিসি স্যারের ভাষ্য, পদত্যাগপত্রের ভাষা ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
পদত্যাগপত্রে আবুল কাসেম মিয়া 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর অগ্রহণযোগ্য ও অসম্মানজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি’ করার কথা বলেছেন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নুরুল হুদা ভিসিকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, তিনি ওই ছাত্রীকে ২৩ এপ্রিলের পর কাউন্সিলের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে দেখা করতে বলেছিলেন। এটি নিয়ে আন্দোলন শুরু হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে তিনি পদত্যাগ করছেন।
অন্যদিকে দশজন বিভাগীয় প্রধান 'শিক্ষার্থীর অন্যায় দাবি-দাওয়ার প্রতিবাদে' পদত্যাগ করছেন বলে উপাচার্যকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে লিখেছেন।