নজিরবিহীনভাবে তাওহিদ হৃদয়ের ঘোষিত শাস্তি কয়েক দফায় কমিয়ে আবার বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে বিসিবি।
Published : 25 Apr 2025, 11:01 PM
তাওহিদ হৃদয়ের শাস্তি দফায় দফায় বদল নিয়ে দেশের ক্রিকেটে তোলপাড় হওয়ার অবশেষে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিল বিসিবি। আম্পায়ার্স কমিটির দেওয়া নির্দেশনা বাতিল করে টেকনিক্যাল কমিটির দেওয়া আগের শাস্তিই বহাল রাখা হয়েছে। তবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়কের সেই শাস্তির কার্যকারিতা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য।
গত ১২ এপ্রিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ম্যাচ চলার সময় আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন হৃদয়। ম্যাচের পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আম্পায়ারদের নিয়ে মন্তব্য করায় সেই নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে করা হয় দুই ম্যাচ।
সেই নিষেধাজ্ঞা হুট করেই পরে আবার এক ম্যাচে নামিয়ে আনা হয়। অভিযোগ আছে, মোহামেডানের চাপে পড়েই দলটির অধিনায়কের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার পথে আবাহনীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে মোহামেডানের। এক ম্যাচ অধিনায়ককে পাওয়া বা না পাওয়াও তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
শাস্তি কমানোর এই ঘোষণার পর আম্পায়ারদের পক্ষ থেকে প্রবল প্রতিবাদের খবর জানা যায়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলেননি। তবে আইসিসি এলিট প্যানেলের একমাত্র বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ বিসিবির চাকরি ছাড়তে চান বা পদত্যাগ করে ফেলেছেন, এরকম কিছু খবর অসমর্থিত সূত্র জানায় কিছু সংবাদমাধ্যম।
হৃদয় ততক্ষণে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আরও দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এর মধ্যেই আবার জানা যায়, আম্পায়ারদের প্রতিবাদের মুখে হৃদয়ের দুই ম্যাচের শাস্তি আবার বহাল করা হয়েছে। যেটির মানে, আরও একটি ম্যাচ তাকে নিষিদ্ধ থাকতে হবে এবং সেই ম্যাচটি শনিবার গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের সঙ্গে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এবার একতাবদ্ধ হন ক্রিকেটাররা। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার একত্রিত হন বিভিন্ন দলের অনেক ক্রিকেটার। নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ সময় আলোচনার পর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন ক্রিকেটারদের চার প্রতিনিধি, যেখানে ছিলেন তামিম ইকবালও, অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত যিনি ছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক। হৃদয়ে শাস্তি নিয়ে টানাহেঁচড়ার পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনায় ক্রিকেটাররা ‘অপমানের’ শিকার হয়েছে বলে বোর্ড প্রধানকে জানান তারা।
কৌতূহল জাগানিয়া ব্যাপার হলো, এই পুরো সময়টায় বিসিবি বা ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। সবকিছুই সংবাদমাধ্যমে এসেছে বিভিন্ন সূত্র হয়ে।
অবশেষে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবি প্রধানের আলোচনার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, শুরুতে ঘোষিত হৃদয়ের দুই ম্যাচের শাস্তিই বহাল থাকবে, তবে তা পিছিয়ে যাবে এক বছরের জন্য।
“১৯ এপ্রিলের নিদের্শনা (মেমো) অবৈধ হওয়ার পর টেকনিক্যাল নির্দেশিকা অনুযায়ী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়ের দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বহাল করা হয়। তবে বাতিল করা সেই নিদের্শনার ফলে যে বিভ্রান্তি ও প্রক্রিয়াগত বিঘ্ন ঘটেছে, তা সতর্কভাবে বিবেচনার পর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ ২০২৪-২৫-এর টেকনিক্যাল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুই ম্যাচের ওই নিষেধাজ্ঞা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হবে।”
“খেলাটির শুদ্ধতা তুলে ধরা, চলমান টুর্নামেন্টের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং ক্রিকেট সম্প্রদায়ের একতা ও স্পোর্টসম্যানশিপের স্পিরিটকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে এই সুবিবেচিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সকল সিদ্ধান্ত যেন সর্বোচ্চ ন্যায্যতা, স্বচ্ছ্বতা ও বিসিবির প্রবিধান অনুযায়ী হয়, এটা নিশ্চিত করায় টেকনিক্যাল কমিটি বদ্ধ পরিকর।”
১৯ এপ্রিল আম্পায়ার্স কমিটির দেওয়া সেই নির্দেশনার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে আগে না জানালেও এখন তা বাতিল করার কথা উল্লেখ করা হয় এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
“সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানাচ্ছে যে, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আম্পায়ার্স কমিটি যে নির্দেশনা জারি করেছিল, সেটি পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিকভাবে অকার্যকর ও বাতিল ঘোষণা করেছে টেকনিক্যাল কমিটি।”
“বিশদভাবে মূল্যায়ন করে টেকনিক্যাল কমিটি দেখতে পেয়েছে যে, প্রচলিত টেকনিক্যাল প্রবিধান ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে উল্লিখিত ওই নির্দেশনা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এজন্যই ওই নথির কোনো সুপারিশ বা সিদ্ধান্তকে বাধিত বা প্রয়োগযোগ্য বিবেচনা করা হবে না।”
চলতি লিগের জেনারেল ইনফরমেশন-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, টেকনিক্যাল কমিটির অধিকার আছে আইন-প্রবিধান ও আচরণবিধি সংশোধন করার, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদ মাঠে নামতে বাধা নেই মোহামেডানের অধিনায়কের।
তবে নতুন কোনো নাটক বাকি আছে কি না, কে জানে!