“কিছু কিছু সংস্কার এই অন্তর্বর্তী সরকারই করতে পারে। আবার কিছু কিছু সংস্কার আছে, যেগুলো করার জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার।”
Published : 26 Apr 2025, 07:20 PM
একটি গোষ্ঠী নারীর সক্রিয়তাকে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে এক সভায় তিনি বলেন, নারী সক্রিয়া হয়ে উঠলে তাদের মনে হয় যে সব কিছু শেষ হয়ে গেল।
জাতীয় গণতান্ত্রিক কমিটি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস: ভূমিকা ও সংস্কার প্রস্তাব শীর্ষক পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও মতবিনিময়’ শীর্ষক এই সভা আয়োজন করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, “তারা ধর্ম পালন করুন বা না করুক, নারী প্রশ্ন আসলেই তাদের ধর্মের অজুহাত টানার প্রবণতা আমরা দেখতে পাই। সেটা নিয়ে একটা উন্মাদনা তৈরি করার, একটা সহিংসতা তৈরি করার চেষ্টা চলছে।
“একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীর সক্রিয়তাকেই ভয় পায়। নারী সক্রিয় হয়ে উঠলেই তাদের মনে হয় যে, সমস্ত কিছু শেষ হয়ে গেল।”
অন্তবর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “গত আট মাসে জনগণের প্রধান-প্রধান চাওয়াগুলো কি ছিল? আর, অন্তর্বর্তী সরকারের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সে অনুযায়ী তারা কি ভূমিকা পালন করেছে?
“আমরা প্রথম থেকে দেখলাম, যে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন হয়েছে। কমিশন রিপোর্ট দিয়েছে এবং তার মধ্যে অনেকগুলো সুপারিশ আছে। যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে অনেক ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।
“এই সুপারিশগুলোর পর্যালোচনা এবং সেগুলো নিয়ে সমাজের মধ্যকার প্রতিক্রিয়া এটাও লক্ষণীয় একটা দিক। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন যে, সবচাইতে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে।”
আনু মুহাম্মদ বলেন, “উত্তরাধিকার প্রশ্ন কিংবা নারীর অধিকার প্রশ্ন আসলেই একটি গোষ্ঠীর ধর্মের নামে হোক, জাতির নামে হোক, তাদের মধ্যে একটা ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া হয়।
“কিছু লোক ধর্মের কথা বলে সরাসরি কতল করার কথা বলছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই।”
শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে তিনি বলেন, কিছু কাজ সরকার কমিশনের প্রতিবেদন ছাড়াই করতে পারে।
“বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা কিংবা নিয়মিতভাবে মজুরি কমিশন বসানো এবং নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর করা এগুলো আমাদের করণীয়র মধ্যেও ছিল।
“এর মধ্যে কিছু কিছু কাজ আছে, সেগুলো করার জন্য সরকারের কমিশনের রিপোর্টের জন্য বসে থাকার দরকার নেই। এগুলো এই সরকারই করে ফেলতে পারে। করে দেখাতে পারে যে সংস্কার কী ধরনের হওয়া উচিত।”
কিছু সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এখন আমরা যেমন সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- এই অপ্রয়োজনীয় একটা বিতর্কের কথা শুনছি। কিছু কিছু সংস্কার এই অন্তবর্তী সরকারই করতে পারে। আবার কিছু কিছু সংস্কার আছে, যেগুলো করার জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার৷
“অন্তবর্তী সরকারই যেগুলো করতে পারে, সেগুলো করতে বাধা কোথায়, সেটা আমরা বুঝতে পারি না।”
আইন ও বিচার ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, “অনেক মামলা দেখা গেল যে খুব দ্রুত সমাধান হয়ে গেল, খুনের আসামি, দণ্ডপ্রাপ্ত তারা ছাড়া পেয়ে গেল।
“আবার, দেখা যাচ্ছে বমদের কোনো শিশুর বিরুদ্ধে একটা ভয়ংকর রকম মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের আটকে রাখা হয়েছে, তাদের ছাড়া হচ্ছে না। কিংবা হরিজন, যাদের কোনো সম্পর্কই নেই খুনের সাথে, তাদের আটকে রাখা হচ্ছে। তাদের জামিনের পর্যন্ত শুনানি হচ্ছে না। এই জায়গাগুলো কী কারণে?”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাইরের জানা অজানা বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠীর প্রভাবে যদি আদালত চলে, তাহলে এই সরকার যে সংস্কার করতে আগ্রহী কিংবা পরিবর্তন করতে আগ্রহী তার প্রকাশটা কোথায়? ত্বকী হত্যা, তনু হত্যা, সাগর-রুনী হত্যার মতো পুরনো মামলাগুলোতে এই সরকারের আট মাসেও কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই।”
সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাত নিয়ে কথা বলেন হারুন উর রশীদ, জুলাই আহতদের চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে স্থপতি আরিফুল হক শাওন, পাহাড় ও সমতলের জনগোষ্ঠী নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেমা চাকমা।
আর নারী ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী নিয়ে কথা বলেন লেখক ফেরদৌস আরা রুমী, দ্রব্যমূল্য ও অর্থনীতি নিয়ে লেখক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, সংস্কৃতি নিয়ে সজীব তানভীর, হরিজন জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে সীমা দত্ত, সংবিধান ও বিচার বিভাগ নিয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গণতান্ত্রিক কমিটির সদস্য বাকি বিল্লাহ, জ্বালানি খাত ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিয়ে কল্লোল মোস্তফা, শিল্প ও শ্রমিকের অবস্থা নিয়ে শ্রমিক নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস, কৃষি ও কৃষকের সংকট নিয়ে লেখক, গবেষক মাহা মির্জা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সায়েদুল হক নিশান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিমা লুৎফা।