ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
Published : 26 Apr 2025, 12:58 PM
জামায়াতে ইসলামী দলীয় গণতান্ত্রিক চর্চার মত বাংলাদেশেও গণতন্ত্র গড়ে তুলতে বলেছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে এ কথা বলেন তিনি।
এছাড়া গঠনমূলক, ইতিবাচক, বাস্তবসম্মত সংস্কারে জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, “দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর বিষয়ে আমরা দলীয় এবং ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না। দেশ ও জাতির জন্য যেটা কল্যাণকর সেই কাজে, সেই পরিবর্তন ও সংস্কারে জামায়াত পরিপূর্ণভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। আলোচনার ভিত্তিতে আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা করব।”
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
প্রতিনিধি দলে আছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনিবার্হী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিশির মুনির, মহিউদ্দিন সরকার।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী কতিপয় বিষয়ে খুব দৃঢ় এবং অঙ্গিকারবদ্ধ। প্রথম হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্বের ব্যপারে আমরা কোন রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় করি না এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে কারও হস্তক্ষেপ আমরা স্বীকার করি না এবং করবো না।
“গ্রহণযোগ এবং টেকসই গণতন্ত্রের বিষয়ে জামায়েতে ইসলামী অঙ্গিকারাবদ্ধ। আমরা আমাদের দলের ভেতরে এই গণতান্ত্রিক চর্চা করি। আমাদের নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়, ক্যাম্পেইন করা হয়। কোনো প্রার্থী ছাড়া হয়, প্যানেল ছাড়া হয়, গোপন ব্যালটে হয়, যেটা আমরা বলি নো ক্যাম্পেইন নো ক্যানডিডেট, নো প্যানেল। এইরকম গণতান্ত্রিক চর্চা যদি এই দেশে আমরা করতে পারি, ফিরিয়ে আনতে পারি। আমরা একটি এমন নির্বাচন চাই যেটাকে এই দেশের মানুষ নির্বাচন বলবে, সারা দুনিয়া নির্বাচন বলবে।”
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
২০২৪ সালের আন্দোলনের সরকার পতনের পর দেশ নতুন কিছু পাবে কি না সেই সন্দেহ প্রকাশ করে জামায়েতের নায়েবে আমির তাহের বলেন, “আমরা জুলাই-অগাস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন স্বাধীনতা বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু আসলেই স্বাধীন হয়েছি কি না সেটা সময় বলে দেবে।
“আমরা আশা করি এই যে পরিবর্তন হয়েছে, যেটাকে আমরা সুযোগ মনে করি, এটা যেন অতীতের মত হারিয়ে না যায়। এর জন্য আমাদের সাবধান হতে হবে, প্রয়োজনে খানিকটা কঠোর হতে হবে এবং প্রয়োজনে মৌলিক বিষয়গুলোকে পরিবর্তনের জন্য সংশোধনের জন্য সেইভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।”
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতের অঙ্গীকার বলেও মন্তব্য করেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ বলেন, “আমরা দ্রুততার সঙ্গে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হয়ে চাই, কিন্তু একইসঙ্গে এটাও স্মরণ করা দরকার যে, এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা আছি। যে বীর শহীদরা এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে তাদের কাছে আমাদের একটি ঋণ আছে। আমাদের দিক থেকে যেমন সময়ের চাপ আছে তেমনি আমাদের একটি দায়িত্বও আছে।
“সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফল। সংস্কারের তাগিদ রাজনৈতিক দল ও জনসমাজের কাছ থেকে এসেছে। সংস্কার কমিশনে দেওয়া প্রস্তাব, সারাংশ ও মূল দিকগুলো নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব।”