সংসদের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাবের বিরোধীতা করলেও এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে দলটি।
Published : 26 Apr 2025, 08:49 PM
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে ‘বহুত্ববাদ’ পুরোপুরি বাদ দেওয়ার কথা বলেছে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি সংসদে আসন বন্টন সমানুপাতিক হারে করার প্রস্তাব এসেছে তাদের তরফে।
এর পরিবর্তে ‘আল্লাহ’র উপরে সম্পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন যুক্ত’ করার কথা বলেছে দলটি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুবার রাখার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে তারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে বিফ্রিংয়ে এসব কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তার নেতৃত্বে দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংলাপে বসেন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজের সঙ্গে তারা সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনা এখনও শেষ হয়নি মন্তব্য করে বিফ্রিংয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আরেকটি সুবিধাজনক দিনে আমরা আবার আলোচনায় মিলিত হব। আমরা বিস্তৃত আলোচনা করছি, খুব তাড়াহুড়ো করছি না।
“একটা উল্লেখ্যযোগ্য সংস্কার যাতে হতে পারে আমরা সেই লক্ষকে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছি। কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি, আর কিছু কিছু বিষয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। সেটা উনারা বিবেচনার জন্য বিবেচনা করছেন, কিছু কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।”
সংসদে আসন বন্টন সমানুপাতিক হারে করার প্রস্তাব দেওয়ার কথা তুলে ধরে জামায়েতের নায়েবে আমির বলেন, “পিআর (সমানুপাতিক হারে) পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি।
”এরমানে হচ্ছে সারা দেশেই এক সাথে নির্বাচন হবে কোনো মার্কা বা কোনো দলের ভিত্তিতে এবং সারাদেশে যে পরিমাণ ভোট পাবে সেই পরিমাণে আনুপাতিক সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশে নির্বাচনে যে দুর্নীতি হচ্ছে, জবর দখল হচ্ছে এবং ভোটবিহীন নির্বাচনের যে রেজাল্ট হচ্ছে এটা বন্ধ হয়ে যাবে এবং টাকার খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে। এটা পৃথিবীর ৬০টির বেশি দেশে কার্যত আছে।”
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়ার কথা আমরা বলেছি এবং আরেকটা প্রস্তাব করেছি, সেটা হল- আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য।”
সংসদের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাবের বিরোধীতা করে তা পাঁচ বছর রাখার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়েতে ইসলামী। পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এর মানে হচ্ছে কোনো প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন, এর পরে আর পারবেন না।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
শনিবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর তরফে সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, অর্থ বিল বা বাজেট অনুমোদন এবং আস্থা ভোটের ক্ষেত্র- এগুলো ছাড়া বাকি যেকোনো বিষয়ে একজন সংসদ সদস্য দলের বা কোনো শ্রেণির বিপরীতেও ভূমিকা রাখতে পারবে বলে প্রস্তাব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন নায়েবে আমির তাহের।
তিনি বলেন, “জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) যেটা করা হয়েছে এটার সাথে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, কিন্তু বিস্তারিত পাওয়ার অ্যান্ড অথরিটির ক্ষেত্রে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
“এনসিসি গঠনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, উনাদের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতি এই দুটি পদেরও প্রস্তাব ছিল। আমরা বলেছি যেহেতু উনারা দুজন রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, যেকোনো জরুরি অবস্থা হলে অনেক সময় রাষ্ট্রপতির কাছে ধর্ণা দিতে হয়, অনেক সময় সর্বোচ্চ বিচারালয়ের প্রয়োজন হয়- সেজন্য কমিটির ভেতরে তাদের যুক্ত না করাই ভালো হবে। এনসিসির কাঠামোগত দিকগুলোতে আমরা একমত হয়েছি।
“নতুনভাবে সংবিধানে যুক্ত করার জন্য আমরা একমত হয়েছি যে, সংসদে উচ্চ কক্ষ থাকবে, নিন্ম কক্ষ থাকবে। সংসদ যেটা আমরা এখন যাচ্ছি সেটা নিন্ম কক্ষ হিসেবে থাকবে। আরেকটা যেটা উচ্চ কক্ষ থাকবে, যেটা কোন কোন দেশে সেনেট নামেও অভিহিত করা হচ্ছে। আমরা ক্ষমতার ব্যালেন্সের জন্য এই পদ্ধতিতে রাজি হয়েছি। আমরা আশা করি একটি সুন্দর সমঝোতার ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় জামায়াতের নায়েবে আমিরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনিবার্হী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিশির মনির ও মহিউদ্দিন সরকার।
বাস্তবসম্মত সংস্কারে জামায়াতের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে: নায়েবে আমির