১৪ বছর আগে ‘জাহান মনি’ মুক্ত করতেও জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন মেহেরুল করিম।
Published : 14 May 2024, 09:59 PM
সোমালিয়ার জলদস্যুরা যা চেয়েছিল, তা পূরণ করায় ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে তারা চলে যায় বলে মন্তব্য করেছেন জাহাজটির মালিক কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম।
অবশ্য জলদস্যুদের সেই চাওয়া কী ছিল, তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার ৬৪ দিন পর মঙ্গলবার জাহাজটির নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে পৌঁছান। সেখানে তাদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ’ মুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়, ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করাতে হয়েছে।
জাহাজের মালিকপক্ষ তখনও মুক্তিপণের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। তারা বলেছিল, ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা হওয়ায় সোমালি জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে গেছে।
এর আগে ২০১০ সালে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কবির গ্রুপের ‘এমভি জাহান মনি’ নামের একটি জাহাজ। সেবার ১০০ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়ানো হয় বলে খবর প্রকাশ হয়েছিল। তখনও জলসদ্যুদের দেওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ প্রকাশ করেনি মালিক পক্ষ।
১৪ বছর আগে ‘জাহান মনি’ মুক্ত করতেও জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন মেহেরুল করিম।
মঙ্গলবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “যেহেতু আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে জাহাজ চলে, তাই অনেক ঝুঁকি বিবেচনা করে যে কোনো ঘটনা কাভার দিতে হয়।
“আপনারা জানেন, বাংলাদেশের আইনে র্যানসম (মুক্তিপণ) বেআইনি। বিশ্বের অনেক দেশে তা আইনসিদ্ধ। এ ধরনের ঘটনা কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি।”
এমভি আবদুল্লাহর ক্ষেত্রে দস্যুদের সঙ্গে আলোচনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “তারা (জলদস্যুরা) কেন করেছে (জাহাজ ছিনতাই) সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। আলোচনায় তাদের সঙ্গে মতৈক্যে আসি। তারা বলে, এটা করলে চলে যাব। ১৩ এপ্রিল রাতে তারা চলে যায়। তাদের কথা বাস্তবায়নের পর তারা চলে যায়।
“এটা একটা ক্রসবর্ডার অ্যাকটিভিটি। আমরা যেসব দেশকে এ কাজে ব্যবহার করেছি, তাদের সবার অনুমতি নিতে হয়েছে।”
তবে জলদস্যুদের সেই চাওয়া কী এবং কয়েকটি দেশের অনুমতি নিয়ে করা ‘ক্রস বর্ডার অ্যাকটিভিটি’ কী ছিল, তা নিয়ে কিছু জানাননি এসআর শিপিংয়ের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “নাবিকরা সবাই তাদের পরিবারের কাছে ফিরেছেন। তারা যেন কোনো শারীরিক ও মানসিক আঘাত না পান, সে চেষ্টাই করেছি। সফল হয়েছি।”
এমভি আবদুল্লাহ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ায় গত ১২ মার্চ যে উৎকণ্ঠার সূচনা হয়েছিল, তার প্রাথমিক অবসান হয় ১৩ এপ্রিল। সেই রাতে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে নিয়ে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে দুবাইয়ের দিকে রওনা হয়।
সেসময় আবদুল্লাহর নাবিকদের মুক্তির আগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দিনের বেলার ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুল্লাহর নাবিকরা সবাই জাহাজের ডেকে লাইন ধরে দাঁড়ানো। ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সামনে চক্কর দিচ্ছে।
ওই সময় জলদস্যুরা দুটি স্পিড বোট নিয়ে জাহাজের সামনে অবস্থান নেয়। জাহাজে থাকা একজন বাংলায় নাবিকদের হাত তুলতে বলেন। এরপর সোমালি ভাষায় জলদস্যুদের কিছু বলতে শোনা যায়।
উড়োজাহাজটি একবার চক্কর দিয়ে একটি করে ব্যাগ পানিতে ফেলছিল। তারপর স্পিড বোটে থাকা জলদস্যুরা সেই ব্যাগ তুলে নিচ্ছিল। এভাবে তিনবার তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। প্রতিবারই জলদস্যুরা উল্লাস করছিল।
তৃতীয় ব্যাগ ফেলার পর উড়োজাহাজটি ঘুরে গন্তব্যের দিকে চলে যায়। এরপর এমভি আবদুল্লাহতে থাকা কেউ একজন ইংরেজিতে নাবিকদের বলেন, “তোমরা এবার মুক্ত। এখন চলে যেতে পারবে।”
জাহাজ ছিনতাইয়ের পর থেকে দস্যুদের মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। নাবিকদের মুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর দুজন জলদস্যুর বরাতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয় রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও একই পরিমাণ মুক্তিপণের খবর দেয়।
তবে বাংলাদেশ সরকার কিংবা জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের কেউ মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি।
উড়োজাহাজ থেকে টাকার ব্যাগ ফেলার ওই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তখন বলেছিলেন, “নাবিকদের মুক্ত করতে জলদস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য ‘সরকারের কাছে নেই’।”
“এটা এখন কোন সিনেমার ছবি আমি তো জানি না। এমন ছবি তো আমরা অনেক চলচ্চিত্রে দেখি। কোন ছবি কোথায় গিয়ে কীভাবে যুক্ত হয়েছে, কোনটার সঙ্গে কোনটা এডিট হয়েছে, আমি জানি না।”
পুরনো খবর
৩৩ দিনের উৎকণ্ঠা পেরিয়ে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহ
তিনটি ব্যাগ পেয়ে দস্যুরা বলে, ‘তোমরা এখন মুক্ত’