সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও মুক্তিপণের খবর দিয়েছে; তবে বাংলাদেশ সরকার কিংবা জাহাজের মালিকপক্ষের কেউ মুক্তিপণের বিষয়টি স্বীকার করেননি।
Published : 14 Apr 2024, 04:25 PM
সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিককে মুক্ত করতে আদৌ কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়েছে কিনা, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও সঠিক কোনো তথ্য মিলছে না।
বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ কর্তৃপক্ষের কেউ মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রোববার সকালে বলেছেন, ‘মুক্তিপণ দেওয়ার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই’।
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। নানা দেন-দরবার শেষে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৩টার দিকে জাহাজটিসহ মুক্তি পান নাবিকদের সবাই।
জাহাজ ছিনতাইয়ের পর থেকে দস্যুদের মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করে। কিন্তু নাবিকদের ছাড়াতে মুক্তিপণ লেগেছে কিনা, কিংবা কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তারা ছাড়া পেয়েছেন, সে সম্পর্কে সরকার কিংবা জাহাজের মালিকপক্ষের কেউ কথা বলেননি।
তবে নাবিকদের মুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর দুজন জলদস্যুর বরাতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের কথা লিখেছে রয়টার্স। সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও একই পরিমাণ মুক্তিপণের খবর দিয়েছে।
#BREAKING: Pirates who seized the Bangladeshi-flagged vessel "MV Abdullah" in the Indian Ocean near #Somalia in March have reportedly been paid $5 million for the ship's release. Reports indicate that some of the pirates have fled to the onshore, where #Puntland forces are… https://t.co/L69zjk4Hfk pic.twitter.com/GatrXHbcej
— The Daily Somalia (@TheDailySomalia) April 13, 2024
আবদিরশিদ ইউসুফ নামে এক জলদস্যু রয়টার্সকে বলেন, “দুই রাত আগে আমাদের কাছে ওই অর্থ নিয়ে আসা হয়…। সেগুলো আসল নাকি ভুয়া তা আমরা যাচাই করে দেখেছি। এরপর তা আমরা ভাগবাটোয়ারা করে সরকারি বাহিনী এড়িয়ে চলে যাই।”
মুক্তিপণ হাতে পাওয়ার পরই জাহাজসহ সব নাবিককে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান রশিদ। তবে বিষয়টি নিয়ে সোমালিয়া সরকারের কোনো বক্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স।
বাংলাদেশি নাবিকদের ছাড়াতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের কথা বলেছে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে দ্য ডেইলি সোমালিয়া ও গারও অনলাইন নামে দুটি সংবাদ মাধ্যম তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ৫০ লাখ ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের ছেড়ে দিয়েছে দস্যুরা।
মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোমালিয়া এমনকি কেনিয়ার মেরিটাইম আইন মেনে কাজ করেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে কাজ করেছি। সমঝোতার শর্ত অনুসারে অনেক বিষয় প্রকাশ করতে পারব না আমরা।”
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে দস্যুদের কবলে পড়েছিল জাহাজটি। জিম্মি হওয়া ২৩ নাবিকের সবাই ছিলেন বাংলাদেশি।
????BREAKING: Somali pirates have released the MV Abdullah after receiving a $5 million ransom, local officials confirm. The Bangladeshi ship with a 23-member crew was hijacked in mid-March. #SomaliPirates #MVAbdullah #Ransom pic.twitter.com/YOZlssl9bk
— GAROWE ONLINE (@GaroweOnline) April 13, 2024
অস্ত্রের মুখে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সেখানে পৌঁছানোর পর বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। ছিনতাইয়ের নয় দিনের মাথায় জলদস্যুদের সাথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় জাহাজের মালিকপক্ষের। এরপর নানা দেন-দরবার শেষে তারা মুক্তি পেলেন।
মুক্তির পর এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা করেছে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে।
কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ভোর রাত ৩টার দিকে রওনা করেছে। নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন।”
জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে রোববার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ফয়সালা করা নজিরবিহীন। নববর্ষের প্রথম দিনে আমরা আনন্দিত। শুধু তাদের আত্মীয়স্বজনই নয়, পুরো দেশবাসী খুবই আনন্দিত, আমরা আমাদের নাবিকদের মুক্ত করতে পেরেছি।”
আরো পড়ুন-