পানি ও ঘাম রোধক প্রসাধনীতে থাকতে পারে ক্ষতিকর উপাদান।
প্রতিটি প্রসাধনীর উপকরণের তালিকায় অনেকগুলো রাসায়সিক উপাদানের নাম লেখা থাকে যা মিলিতভাবে ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করে তোলে। তবে এই রাসায়নিক উপাদানগুলো আবার ত্বকের জন্য হতে পারে মারাত্মক হুমকিও।
‘এনভাইরোনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটারস’য়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মোট ২৩১টি মেইকআপ প্রসাধনী পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ৫২ শতাংশে মেলে ‘পিএফএএস’য়ের অস্তিত্ব।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ নটরডেম’, ‘ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি’, ‘হোপ কলেজ’, ‘গ্রিন সায়েন্স পলিসি ইন্সটিটিউট’ এবং কানাডার ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো’র করা এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ‘পিএফএএস’ হল কয়েকটি বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের সমষ্টি যাকে ‘পলিফ্লুরোআলকাইল সাবস্ট্যান্স’ নামেও চেনা যায়। এদের মধ্যে কিছু প্রসাধনীর উপকরণের তালিকায় এই বিষাক্ত উপাদানের নাম লেখা না থাকলেও ভেতরে অস্তিত্ব আছে ঠিকই।
বিষাক্ত এই উপাদান ‘টেফলন’ এবং ‘স্টেইন রেজিস্ট্যান্ড কোটিং’য়ে বহুলভাবে ব্যবহার হয়। গবেষকরা দেখেছেন, এই উপাদান প্রসাধনীতে শুধু বহুল ব্যবহৃতই নয় বরং একে বলা হয় ‘ফরএভার কেমিকাল’।
অর্থাৎ এই উপাদানযুক্ত প্রসাধনী মুখ থেকে ধুয়ে ফেলার পর তা ওই পানি এবং মাটির ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
স্বাস্থ্যঝুঁকি
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যান্ড ডিজিজ রেজিস্ট্রি’র তথ্যানুসারে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, “পিএফএএস’য়ের সংস্পর্শে আসার কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। সৃষ্টি করে যকৃত ও ‘টেস্টিকুলার’ বা অণ্ডকোষে ক্যান্সারের ঝুঁকি।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ‘এনভাইরোনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’য়ের বিজ্ঞানি ডেভিড অ্যান্ড্রিউস বলেন, “অত্যন্ত সামান্য মাত্রায় মারাত্মক বিষক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য খ্যাতি আছে এই উপাদানের। তাই এর সংস্পর্শে যত কম আসা যায় ততই মঙ্গল।”
“পানি ও ঘাম রোধক গুণাগুণ আছে এমন প্রসাধনীতে এই উপাদান পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যেসব প্রসাধনী বা মেইকআপ তাদের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য আলোচিত সেগুলোতেই এই বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের দেখা মেলার সম্ভাবনা বেশি। প্রসাধনীর উপকরণের তালিকা পড়ে এর উপস্থিতি জানা যায় ঠিক, তবে সব সময় এই নামে সেটি থাকে না।”
‘পারফ্লুর’ বা ‘পলিফ্লুর’ নামক উপাদানগুলো নিয়ে সাবধান হতে হবে। ‘পিএফএএস’য়ের প্রতিক্রিয়া কমাতে এই উপাদানগুলো প্রসাধনীতে যোগ করা হয়।”
পরিবর্তনে সাহায্য করা
‘এনভাইরোনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’য়ের ‘কসমেটিকস সায়েন্স’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কার্লা বার্নস বলেন, “প্রস্তুতকারীরা সেচ্ছায় কোনো প্রসাধনীতে যাতে এই উপাদান যোগ করতে না পারে সেজন্য আইন করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ের এমন প্রসাধনী কেনা বন্ধ করে দিয়ে সেই কাজে আপনি নিজেও সাহায্য করতে পারেন।”
“এরই মধ্যে আপনার কাছে থাকা প্রসাধনীর মধ্যে ‘পিএফএএস’ আছে এমন মেইকআপ সামগ্রীগুলো এখনই ফেলে দেওয়ার ইচ্ছা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে নিজেকে স্থির করুন। আগে দেখুন দৈনন্দিন জীবনে আপনি ব্যবহার করেন এমন কোন প্রসাধনীতে ‘পিএলএএস’ আছে। এবার সেগুলো ব্যবহার করে শেষ করতে থাকুন এবং নিরাপদ বিকল্প খোঁজা শুরু করুন।”
প্রসাধনী
অ্যান্ড্রিউস বলেন, “প্রসাধনী থেকে ‘পিএফএএস’ বাদ দিলেই যে এর স্থায়িত্ব কমে যাবে ব্যাপারটা তেমন নয়। ‘পিএফএএস’য়ের অনেক নিরাপদ বিকল্প আছে যা মেইকআপ’কে দীর্ঘস্থায়ী করবে, পানিরোধক করবে। প্রস্তুতকারীরা কেনো ‘পিএফএএস’ বেছে নেন তা আমি নিশ্চিত নই। তবে এই উপাদান বাদ গেলে মেইকআপ বা প্রসাধনীর গুণাগুণে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয় না।”
আরও পড়ুন