অনেকের কাছে পানসে লাগে। তবে ড্রাগন ফলে রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ।
Published : 06 Apr 2025, 01:31 PM
ড্রাগন ফল নাম শুনলেই মনে হয় এটি কোনো রাজকীয় ফল। গাঢ় গোলাপি বা উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের এই ফল শুধু দেখতে আকর্ষণীয় নয়, এটি পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ।
বেশ কয়েক বছর ধরেই স্বাস্থ্যসচেতনদের মধ্যে ড্রাগন ফলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দেশি ফল না হলেও বাংলাদেশে এটি চাষ শুরু হয়েছে। তবে পুষ্টিগুণের বিচারে সত্যিই কি এই ফল ‘সুপারফুড’য়ের মর্যাদা পেতে পারে?
ড্রাগন ফল কী?
‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’-এর তথ্যানুসারে ড্রাগন ফলকে পিতায়া নামেও ডাকা হয়, যা মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ক্যাকটাস ধর্মী গাছের ফল।
এই ফলের বাইরের অংশ উজ্জ্বল গোলাপি বা হলুদ, আর ভেতরের অংশ সাদা, গোলাপি বা বেগুনি রংয়ের হতে পারে।
ফলের মধ্যে ছোট ছোট কালো বীজ থাকে। দেখতে আকর্ষণীয় ফলটি স্বাদে মিষ্টি ও হালকা টক। অনেকে এর স্বাদকে নাশপাতি ও কিউই ফলের সংমিশ্রণ বলে মনে করেন।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্রাগন ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেল্থ-এর অধ্যাপক ও পুষ্টিবিদ তেরেসা ফুং বলেন, “ড্রাগন ফল একটি স্বাস্থ্যকর খাবার, তবে এটি কোনো জাদুকরী খাবার নয়। তবে শরীরে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যোগায়।”
প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ ড্রাগন ফল মাত্র ৮২ ক্যালরি সরবরাহ করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে ১৪ মিলিগ্রাম, যা পেশির সুস্থতা ও স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়।
পটাসিয়াম পাওয়া যায় ২০৬ মিলিগ্রাম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আঁশ থাকে ২ গ্রাম, যা হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল
ড্রাগন ফলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এতে থাকা ভিটামিন সি এবং সেলেনিয়াম ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
এছাড়া অ্যান্থোসায়ানিন্স এবং ক্যারোটিনয়েডস হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে উপকারী।
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খেলে প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ’এর গবেষণা অনুযায়ী, ড্রাগন ফলে থাকা বিভিন্ন উপাদান দীর্ঘ মেয়াদে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
কীভাবে ড্রাগন ফল নির্বাচন ও সংরক্ষণ করা যায়?
ড্রাগন ফল সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে তাজা পাওয়া যায়। তবে এটি সারা বছরই ‘ফ্রোজেন’ বা হিমায়িত করে রাখা যায়।
কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে ফলটি যেন ভারী ও মসৃণ হয়। এ ধরনের ফলকে ভালো মানের বলে ধরা হয়। বেশি কুঁচকানো বা দাগযুক্ত ফল না কেনাই ভালো।
এটি ঘরের তাপমাত্রায় রেখে পাকানো যায় আবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করলেও দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
বিশেষজ্ঞ তেরেসা ফুং বলেন, “ফ্রোজেন ড্রাগন ফলও তাজা ফলের মতোই পুষ্টিগুণ ধরে রাখে, কারণ এটি সম্পূর্ণ পাকলে সংরক্ষণ করা হয়। তবে ফ্রোজেন ড্রাগন ফল কিনতে চাইলে নিশ্চিত হতে হবে, এতে যেন কোনো অতিরিক্ত চিনি যোগ করা না থাকে।”
নানানভাবে খাওয়া যায়
ড্রাগন ফল বিভিন্ন উপায়ে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা যায়।
সরাসরি খাওয়া: ফলটিকে দুভাগ করে কেটে চামচ দিয়ে ভেতরের অংশ তুলে খাওয়া যায়।
ফলের সালাদ: চৌক করে কেটে অন্যান্য ফলের সাথে মিশিয়ে রঙিন সালাদ তৈরি করা যায়।
স্মুদি: ফ্রোজেন ড্রাগন ফল, দই, মধু ও অন্য ফলের সাথে ব্লেন্ড করে স্বাস্থ্যকর স্মুদি বানানো যায়।
সালসা: পেঁয়াজ, ধনেপাতা ও লেবুর রস মিশিয়ে ড্রাগন ফলের সালসা তৈরি করা যায়, যা মাছ বা গ্রিল করা মাংসের সাথেও দারুণ লাগে।
আইস ললি: ব্লেন্ড করা ড্রাগন ফলের রস আইসক্রিম মোল্ডে রেখে ফ্রিজে জমিয়ে মজাদার আইস ললি বানানো যায়।
গার্নিশ: খাবারের ওপরে পাতলা কাটা ড্রাগন ফল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়।
আরও পড়ুন
ওজন কমানোর যাত্রায় যেভাবে ফল খাওয়া যাবে না