“মিলনায়তনে নাটক বন্ধ করলে আমরা প্রতিবাদে পথে পথে নাটক করব। রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে না পারলে নাট্যকর্মীরা নিজেরাই তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।”
Published : 14 Nov 2024, 08:28 PM
শিল্পকলায় প্রদর্শনী চলাকালীন নাটক বন্ধ ও নাট্যকর্মীদের উপর হামলার পেছনে থাকা ইন্ধনদাতাদেরও দায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাট্যনির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী আজাদ আবুল কালাম।
তিনি বলেন, “যারা নাটক বন্ধ করতে চেয়েছে, নাট্যকর্মীদের উপর হামলা করেছে, তারা নাট্যদলের নামটিও ঠিকমত বলতে পারেনি। তাদের পেছনে থাকা ইন্ধনদাতাদের সাবধান হয়ে যেতে হবে।
“এই ইন্ধনদাতাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী থাকতে পারে, শিল্পকলার ভেতরের লোকজনও থাকতে পারে। এটি হয়ত জানা যাবে। তখন কিন্তু এই বিশৃঙ্খলার দায়ও তাদেরকে নিতে হবে।”
বৃহস্পতিবার নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি নিয়ে ‘আরণ্যক’ নাট্যদল আয়োজিত পথনাটক প্রদর্শনীতে তিনি এ কথা বলেন।
‘নাটক মোদের অধিকার, রুখবে নাটক সাধ্য কার’ স্লোগান ধারণ করে বিকেল থেকেই শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রবেশ গেইটের সামনে এই নাটক মঞ্চস্থ করে ‘প্রাচ্যনাট’ ও ‘আরণ্যক’ এর শিল্পীরা।
উপস্থিত ছিলেন ঠান্ডু রায়হান, ত্রপা মজুমদার, কামালউদ্দিন কবির, কামাল আহমেদ, অলোক বসু, অপু মেহেদী, শতাব্দী ওয়াদুদ।
কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার টিকেট কাউন্টার, তার সামনেই মঞ্চ সাজিয়ে নিরাপত্তার দাবি তুলেন নাট্যকর্মীরা।
গত ২ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ এবং ৮ নভেম্বর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত সমাবেশে হামলার প্রতিবাদ জানাতে এই আয়োজন করে আরণ্যক নাট্যদল।
প্রথমেই নাটকের গান পরিবেশন করেন আরণ্যকের শিল্পীরা। পরে বক্তব্য দিতে আসেন নাট্যনির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী আজাদ আবুল কালাম।
তিনি বলেন, “আমরা নিরাপদে নাটক করতে চাই। এই পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের যেমন আছে, এখানে সামনে যারা আছেন আপনাদেরও আছে।”
‘নিত্যপুরাণ' নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, “আমাদের যে নাটকটি এখানে বন্ধ করতে হয়েছিল, সে নাটকটি আমরা এ মাসেই শিল্পকলায় মঞ্চায়ন করতে পারব বলে আশাবাদী। শিল্পকলা একাডেমি থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আমরা কবে এটি করতে চাই। আমরা দ্রুতই একটি তারিখ ঠিক করে শিল্পকলাকে জানাব।”
প্রতিবাদী এই আয়োজনে ‘প্রাচ্যনাট’ মঞ্চস্থ করে ‘স্পিক আউট’। জগন্ময় পালের লেখা নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম।
পরে আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করে ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা'। এ নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক প্রয়াত মান্নান হীরা।
আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শামীমা শওকত লাভলী বলেন, “রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। দলগুলো নির্বিঘ্নে প্রদর্শনী করতে পারছে না। তাই বলে তো নাটক থেমে যেতে পারে না।
“মিলনায়তনে নাটক বন্ধ করলে আমরা প্রতিবাদে পথে পথে নাটক করব। রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে না পারলে নাট্যকর্মীরা নিজেরাই তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।”
গত ৯ নভেম্বর নাট্যশালার মিলনায়তনে ‘কম্পানি’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আরণ্যক। এবার মিলনায়তনের বাইরে পথনাটকের প্রদর্শনী করে নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন তারা।
পুরনো খবর
শিল্পকলার সামনে পথনাটক করে নিরাপত্তা চাইবে নাট্যকর্মীরা
নাটক বন্ধ ও হামলায় 'উদ্বিগ্ন' প্রবাসী নাট্যকর্মীরা
'নাট্যকর্মীদের পরিচয় স্পষ্ট, হামলাকারী কারা?'
নাট্যকর্মীদের সমাবেশে হামলার পর শিল্পকলার সামনে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ
নাট্যশালায় সমাবেশে 'ডিম নিক্ষেপ', ধাওয়া খেয়ে পালাল হামলাকারীরা
'নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনী ফেরত দেওয়ার দাবি নাট্যকর্মীদের
নাটক বন্ধ নিয়ে প্রেস সচিবের বক্তব্য 'ভুলভাবে উপস্থাপন': শিল্পকলা
মাঝপথে নাটক বন্ধ: মর্মাহত 'দেশ নাটক', উদীচী ও থিয়েটারকর্মীদের প্রতিবাদ
মাঝপথে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ 'নিরাপত্তা' বিবেচনায়: জামিল আহমেদ