তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীও একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
Published : 04 Nov 2024, 12:05 PM
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল মানুষের বিক্ষোভের পর 'নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশ নাটক, উদীচী এবং ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ’ নামের একটি প্লাটফর্ম।
দেশ নাটক এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ঘটনায় তারা ‘মর্মাহত’। আর ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়ে আলাদা বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ’ ব্যানারে নাট্যকর্মীরা ‘নাটকসহ শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা বন্ধ করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে। সোমবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সামনে এ সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছে তারা।
এছাড়া সংস্কৃতি চর্চার উপর ‘আগ্রাসনের’ প্রতিবাদে এবং সারাদেশে সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। বিকেল ৩টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশ নাটক প্রযোজিত নিত্যপুরাণ নাটকের টিকেট বিক্রি শুরু হয় শনিবার বিকাল থেকে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।
পরদিন এক ব্রিফিংয়ে জামিল আহমেদ বলেন, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।
এ ঘটনার পর দেশ নাটক এক বিবৃতিতে বলছে, একজন সদস্যের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রথমে জাতীয় নাট্যশালার মূল গেইটে ব্যানার টানিয়ে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দর্শকদের হলে প্রবেশে ‘বাধা দেওয়া হয়’।
“ব্যানারে পোস্টদাতা সদস্যকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানায়। তারা দর্শকদের কাছ থেকে নাটকের টিকেট কেড়ে নেওয়া ও টিকেট কাউন্টারে হামলার মত ঘটনা ঘটায়। নাট্যাঙ্গনের সিনিয়র সদস্যদের কয়েকজন বিশৃঙ্খলাকারীর সাথে কথা বলেন এবং এক পর্যায়ে শিল্পকলার মহাপরিচালকও তাদের সাথে কথা বলেন। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে মহাপরিচালক প্রদর্শনী শুরু করার পরামর্শ দেন।
“নাটক যখন প্রায় শেষার্ধে, তখন জানা যায় যে শিল্পকলার মূল গেইটে পুনরায় মব সৃষ্টির চেষ্টা চলছে এবং শিল্পকলার গেইটের তালা ভাঙার তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। প্রদর্শনী বন্ধ না করলে তারা নাট্যশালায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পকলার মহাপরিচালক পুনরায় উপস্থিত হয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি মঞ্চে এসে প্রদর্শনী বন্ধ করার ঘোষণা দেন।”
এ ঘটনায় দেশ নাটকের সদস্যরা ‘অত্যন্ত মর্মাহত’ হয়ে প্রদর্শনী বন্ধ করতে বাধ্য হন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
‘অনভিপ্রেত’ ঘটনায় নাটক বন্ধের জন্য আপামর দর্শকের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি ওই ঘটনার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে দেশ নাটক।
এ সংগঠনের ভাষ্য, “মঞ্চ নাটকের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হল নাটক শেষে দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করা। সেটি করতে না পারার কষ্ট আমাদেরকে কতদিন বহন করতে হবে আমরা জানি না। আশা করি এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে দর্শকসহ সকল সংস্কৃতিপ্রেমী ব্যক্তি ও সংগঠন আমাদের পাশে থাকবেন।”
চর্চার পরিবেশকে ‘বাধাগ্রস্ত করা হল”
বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেছেন, এ ঘটনার মাধ্যমে দেশে সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশকে ‘বাধাগ্রস্ত করা হল।”
উদীচী মনে করে, এভাবে কোনো নাটকের শো বন্ধ করে দেওয়া প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে কোনভাবেই ‘সহায়ক নয়’।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেউ দোষী হলে বা অন্যায় করলে তাকে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনাটাই যুক্তিযুক্ত কাজ।
শিল্পকলায় এই বিক্ষোভের কারণ, বিক্ষোভকারীদের পরিচয়, এবং এ ঘটনায় শিল্পকলার কেউ জড়িত কি না সেটি তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
সেখানে বলা হয়েছে, “ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছে মানুষ। যারা আন্দোলনে হতাহত হয়েছেন, তাদেরও অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা ও মুক্তমত চর্চা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।
“ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তে অর্জিত বিজয়ের পর থেকেই কোন কোন গোষ্ঠী অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। তারা প্রগতিবিরোধী, মানুষের মুক্তি চায় না। মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় তারা।”
পুরনো খবর
মাঝপথে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ 'নিরাপত্তা' বিবেচনায়: জামিল আহমেদ
হঠাৎ বিক্ষোভে শিল্পকলায় মাঝপথে বন্ধ হল নাটকের প্রদর্শনী