বিক্ষোভকারীরা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেন আয়োজকরা।
Published : 03 Nov 2024, 12:22 AM
রাজধানীতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে 'নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন আয়োজকরা।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শিল্পকলা একাডেমির গেইট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে নাটকটির মঞ্চায়ন বন্ধ করা হয় বলে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির জানিয়েছেন।
এদিন বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে নাটকটি শুরু হলেও পরের দফায় গেইটের বাইরে তারা মারমুখী হয়ে উঠলে একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ নাট্যদল ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন বলে সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, সন্ধ্যায় ‘দেশ নাটক’ প্রযোজিত 'নিত্যপুরাণ' নাটকের পূর্বনিধারিত প্রদর্শনী ছিল। বিকাল থেকে টিকেট বিক্রিও শুরু হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে দেশ নাটকের এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরে বিক্ষোভকারীরা আরও সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
তার গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
কারা বিক্ষোভ করেছেন, তা জানাতে পারেননি একাডেমি সংশ্লিষ্ট কেউ।
একাডেমির মহাপরিচালক রোববার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে পরে রাতে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে।
বিক্ষোভের কারণে মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মিলনায়তনে দর্শকের কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আপনাদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”
নিত্যপুরাণ নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকার মাসুম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা থিয়েটারটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু থিয়েটারকে রাজনীতির মধ্যে ফেলে আমাদেরকে নাটক বন্ধ করতে বাধ্য করা হল। আমরা বন্ধ করে চলে এসেছি।
“জামিল ভাই তো খুবই চেষ্টা করেছেন যেন নাটকটা শেষ করা যায়। কিন্তু আমাদেরকে বন্ধ করতে হল, এটা খুবই দুঃখজনক।”
শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বিক্ষোভকারী কারা? আমরা তাদের চিনতে পারিনি। কিন্তু উত্তেজিত এই বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে শিল্পকলাকে রক্ষা করতেই তাৎক্ষণিকভাবে এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।”
বিক্ষোভকারীরা দেশ নাটকের একজন নাট্যকর্মীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি শিল্পকলার কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে শিল্পকলা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। তাই আমাদের বাধ্য হতে হয়েছে।
“বিক্ষোভকারীরা ওই নাট্যকর্মীকে ‘ফ্যাসিবাদের’ দোসর বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবার আমরা কিন্তু দেশ নাটকের অনেক সদস্যকেও দেখেছি সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুথানে ছাত্র-জনতার পক্ষে আন্দোলন করতে। তাই একজন ব্যক্তির প্রতি ক্ষোভ থেকে পুরো নাট্যদলের প্রদর্শনী বন্ধ করতে হল, তা একটা নিন্দনীয় উদাহরণের জন্ম দিল।”
২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম মঞ্চে আসে 'নিত্যপুরাণ' নাটক। এরপর ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত মঞ্চায়ন হয়। পরে প্রায় এক যুগ প্রদর্শনী বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সাল থেকে পুনরায় নিয়মিত মঞ্চায়ন শুরু হয়।