শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির কারণে নাটকের দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে প্রচেষ্টা সাংস্কৃতিক সংগঠন বা নাটকের দলের থাকা উচিত।
Published : 04 Nov 2024, 07:16 PM
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল মানুষের বিক্ষোভের পর 'নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্য ভুলভাবে গণমাধ্যমে এসেছে এবং এটি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুক পেইজ থেকেও বিজ্ঞপ্তিটি শেয়ার করা হয়েছে।
সোমবার একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় 'শিল্পকলায় নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের ঘটনা সমর্থন করে না সরকার' শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মূল বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে এটি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
“প্রকৃতপক্ষে তিনি বিক্ষুব্ধকারীদের নাটক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে অর্থাৎ শিল্পচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকার সমর্থন করে না মর্মে বুঝিয়েছেন, তিনি মনে করেন মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।”
‘দেশ নাটক’ প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের টিকেট বিক্রি শুরু হয় শনিবার বিকাল থেকে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।
পরদিন এক ব্রিফিংয়ে জামিল আহমেদ বলেন, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।
এই ঘটনায় উদীচী, ‘দেশ নাটক’ বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা।
শিল্পকলা একাডেমি বলছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের শিল্পচর্চা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বাস করে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিক্ষোভকারীদের নির্বৃত্ত করার লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিত, সে প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি একাধিকবার উদ্যোগ নেয়।
“কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ক্ষান্ত হয়নি। বরং তাদের সংখ্যা বেড়ে গেলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার উপক্রম হয়। তখন অভিনয়শিল্পী ও দর্শকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ‘দেশ’ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দর্শকের নিকট দুঃখপ্রকাশ করে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
শিল্পকলার কণ্ঠ কেউ রোধ করুক, তা একাডেমি চায় না বলেও জানানো হয়।
শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির কারণে নাটকের দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে প্রচেষ্টা সাংস্কৃতিক সংগঠন বা নাটকের দলের থাকা উচিত। কোনো দলের ভেতরে বিতর্কিত কেউ যদি থাকে, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করে এবং স্বৈরাচারীর দোসর হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রমকে এখনো সমর্থন করে তাহলে দলের পক্ষ থেকেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এসব গণহত্যার দোসর বা সমর্থনকারীদের তিরস্কার করে, নিন্দা জানায়।
এটাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রত্যাশা করে, সুস্থ, উৎসবমুখর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনবান্ধব শিল্পচর্চায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পাশে থেকে শিল্প সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে দেশের সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবীসহ জনসাধারণ এগিয়ে আসবে।
পুরনো খবর
মাঝপথে নাটক বন্ধ: মর্মাহত 'দেশ নাটক', উদীচী ও থিয়েটারকর্মীদের প্রতিবাদ
মাঝপথে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ 'নিরাপত্তা' বিবেচনায়: জামিল আহমেদ