দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তিরও দাবি করা হয়েছে।
Published : 10 Nov 2024, 05:57 PM
ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে 'নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সমাবেশে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ৬১জন নাট্যকর্মী।
অভিনেতা ও নির্দেশক শামসুল আলম বকুলের পাঠানো এই বিবৃতিতে, বাংলাদেশের নাট্যকর্মীদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাট্যকর্মীরা ‘সংহতি প্রকাশ করছেন’ বলে জানানো হয়েছে।
সেইসঙ্গে এই ঘটনায় ‘উদ্বেগ প্রকাশ করেৱ সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তিরও দাবি করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, "৮ নভেম্বরে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সভায় হামলা দেখে প্রতীয়মান হয় যে দেশ নাটকের ঐ সদস্যের ফেইসবুক পোস্ট একটি অজুহাত মাত্র। এটি মুক্ত শিল্পচর্চা বন্ধ করার এক গভীর ষড়যন্ত্র।"
দেশের উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলি অতীতে বহুবার নাট্যকর্মীদের উপর ‘হামলা চালিয়ে নাটক বন্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে’ অভিযোগ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "৮ নভেম্বর এইসব দুষ্কৃতকারীদের স্লোগান দেখেও প্রতীয়মান হয় যে, এ ঘটনাপ্রবাহ তারই ধারাহিকতায় ঘটানো হচ্ছে।
'নাট্যকর্মীদের পরিচয় স্পষ্ট, হামলাকারী কারা?'
"সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আন্দোলনের পর এই সব উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং তাদের বহুদিনের কাঙ্খিত উদ্দেশ্য হাসিলে লিপ্ত হয়েছে। ”
বিবৃতি দেওয়া প্রবাসী নাট্যকর্মীরা হলেন-মোহাম্মদ কবীর, আবীর আলমগীর, শামসুল আলম বকুল, তৌকির আহমেদ, রোকেয়া রফিক বেবী, আনিসুজ্জামান মানিক, মিথুন আহমেদ, সারওয়ার হারুন, সীতেশ ধর, শিরীন বকুল, খায়রুল ইসলাম পাখী, সৈয়দ জাকীর হোসেন রনি, জিয়াউল হক জিয়া, জাফর রহমান, ফরহাদ হোসেন, বদিউজ্জামান আলমগীর, জিয়া উদ্দিন শিপন, তাহমিনা মোস্তাফা, শেখ তানভীর আহমেদ, রিপন রহমান, শুক্লা রায়, এজাজ আলম, মিল্টন আহমেদ, আলমগীর চঞ্চল, মিনহাজ আহমেদ, আবু বিপ্লব, সুলতান বোখারী, বসুনিয়া, মিতালী দাস, বন্যা মীর্জা, সুলতানা খান, শফিউল আলম, আহসান উল্লাহ, আনিকা মাহিন, চন্দন চৌধুরী, মনির হাসান, সপ্না কাউসার, শামীম মামুন, জেফ হোসেন, জিয়াউল হাসান, শারমীন রেজা ইভা, শামীম মামুন লিটন, লুৎফুন নাহার লতা, মুজিব বিন হক, তমালিকা কর্মকার, লায়লা ফারজানা, প্রতিমা সুমি, তামিমা তিথি, কাউসার আহমেদ, স্বাধীন মজুমদার, মুসা রুবেল, দীপা, লিটন, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর কাজল, রেশমা চৌধুরী, জহির মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, রিপন রহমান, শরীফ হোসেন, হিরা।
যা ঘটেছে
গত ২ নভেম্বর দেশ নাটক প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দিন টিকেট বিক্রি শুরু হয় বিকাল থেকে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
'নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনী ফেরত দেওয়ার দাবি নাট্যকর্মীদের
নাটক বন্ধ নিয়ে প্রেস সচিবের বক্তব্য 'ভুলভাবে উপস্থাপন': শিল্পকলা
পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।
পরদিন এক ব্রিফিংয়ে জামিল আহমেদ বলেন, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।
এই ঘটনায় উদীচী, দেশ নাটক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরাও।
নাটক বন্ধের ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। সমাবেশ চলাকালীন কয়েকজন লোক এসে পেছন থেকে 'ডিম ছুঁড়ে' মারে এবং নাট্যকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে নাট্যকর্মীরা নাট্যশালার সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে 'নাটক মোদের অধিকার/রুখবে নাটক সাধ্য কার'।
মাঝপথে নাটক বন্ধ: মর্মাহত 'দেশ নাটক', উদীচী ও থিয়েটারকর্মীদের প্রতিবাদ
'নাট্যকর্মীদের পরিচয় স্পষ্ট, হামলাকারী কারা?'
এর আধা ঘণ্টা পর ৪০ থেকে ৫০ জন বিক্ষোভকারী সংগঠিত হয়ে আবারও এসে নাট্যশালার সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উভয়পক্ষের মাঝে ব্যারিকেড তৈরি করেন।
নাট্যকর্মীরা অবস্থান নেন নাট্যশালার মেইন গেইটের সামনে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন দুর্নীতি দমন কমিশনের গেইটের সামনে। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে নাট্যশালার সামনের চত্বর। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিক্ষোভকারীরা নাট্যশালার সামনে থেকে চলে যান।
এর মধ্যে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এই ঘটনার তদন্ত কাজের জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।
না হলে সারাদেশের নাট্যকর্মীদের নিয়ে আগামী ১৫ নভেম্বর প্রতিবাদ সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছে ফেডারেশন।
নাট্যকর্মীদের সমাবেশে হামলার পর শিল্পকলার সামনে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ
নাট্যশালায় সমাবেশে 'ডিম নিক্ষেপ', ধাওয়া খেয়ে পালাল হামলাকারীরা