চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় বুধবার দ্বিতীয় দিনের মত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
Published : 09 Aug 2023, 01:30 PM
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানির স্রোতে নৌকা উল্টে তিন শিশুসহ চারজন নিখোঁজ রয়েছেন।
উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বন্যার পানিতে ইউনিয়ের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
“গতকাল বিকালে নৌকা নিয়ে নারী শিশুসহ আটজন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরতি থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুঁইপুড়া যাচ্ছিলেন। পথের মধ্যে স্রোতে নৌকাটি উল্টে গেলে আরোহীরা সবাই পানিতে পড়ে যান। নৌকায় থাকা চারজন নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও তিন শিশুসহ চারজন পানির স্রোতে ভেসে যায়।"
বৃষ্টি আর ঢলের পানিতকে সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে চন্দনাইশের হাশিমপুর পর্যন্ত সড়ক ডুবে যাওয়ায় মঙ্গলবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বুধবারও ওই সড়কে যান চলাচলের মত পরিস্থিতি হয়নি। লোকজন পানিতে হেঁটে কিংবা রিকশা ভ্যানে যাতায়াত করছেন।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই দেশের বেশিরভাগ স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে দুর্দশায় পড়েছেন পার্বত্য অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়। শনিবার চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বৈলগাঁও এলাকায় দেয়াল ধসে পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়, সোমবার লোহাগাড়ায় বানের পানিতে ডুবে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এবং হাটহাজারীতে পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কলেজছাত্রীর। রাউজানে খালের পানিতে পড়ে ডুবে যান এক ব্যবসায়ী। নিখোঁজের তিনদিন পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয় বুধবার ভোরে।
চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি। রাঙ্গুনিয়ার শস্যভান্ডার খ্যাত গুমাই বিলসহ চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন অংশের কৃষি জমি, সবজি খেত, হাঁস-মুরগি-গরুর খামার তলিয়ে গেছে।
রোববার বন্দর নগরীর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে জলাবদ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী রোড এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি উঠতে শুরু করে।
সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে চন্দনাইশের হাশিমপুর পর্যন্ত সড়ক ডুবে যায় মঙ্গলবার। এ কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার খবর আসে।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি সব উপজেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফটিকছড়ি ছাড়া সব উপজেলা কমবেশি প্লাবিত হয়েছে।
“সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। সাতকানিয়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে।”
সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার মঙ্গলবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।”
পুরনো খবর
ঢল ও বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি
বন্যা ও ভূমিধস: চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সেনা মোতায়েন
নগরী ছাড়িয়ে দুর্ভোগ গ্রামেও, চট্টগ্রামে পানিবন্দি ৩ লাখ মানুষ
পানিবন্দি বান্দরবানে খোলা হয়েছে দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র
থৈ থৈ পানিতে ‘বিচ্ছিন্ন’ বান্দরবান, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ