এবারের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন তলিয়ে যাওয়া এলাকার মানুষ।
Published : 08 Aug 2023, 05:54 PM
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম জেলায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে; আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭৫৩ জনকে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার মঙ্গলবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার। গতকাল ও আজ আমরা খাবার বরাদ্দ দিয়েছি। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে মোট ১ হাজার ১৯৩টি।”
ইতোমধ্যে জেলায় অতি বৃষ্টিতে দেয়াল ধসে ও পানিতে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার গভীর রাতে বাঁশখালী উপজেলার বৈলগাঁও ২ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ বছর বয়সী মেজবাহ ঘরের দেয়াল ধসে মারা যায়।
সোমবার হাটহাজারী উপজেলার ইসলামিয়া বাদামতল এলাকায় কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পানিতে পড়ে মারা যান হাটহাজারী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিপা পালিত।
একইদিন গভীররাতে লোহাগাড়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পানিতে তালিয়ে গিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু হয়। মৃত জুনায়েদ ইসলাম জারিফ (২২) বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে সোমবার বিকালে লোহাগাড়ায় বাড়ি ফেরার পথে স্রোতের টানে আহসাব মিয়া সওদাগর (৪৫) নামে এক ব্যক্তি তলিয়ে গেছেন। ওইদিন সন্ধ্যায় রাউজানে হালদা নদীর শাখা খালে নৌকা উল্টে সাহেদ হোসেন বাবু (৪০) নামে আরেক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়, অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার যোগ হলে শুক্রবার বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শনিবারও এসব এলাকা ছিল পানির নিচে। এ দিন থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় পানি বাড়তে থাকে।
রোববার বন্দর নগরীর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যায়, পানির নিচে চলে যায় সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, পটিয়া, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার বেশ কিছু এলাকা।
সোমবারও বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ছিল জলাবদ্ধ। সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী রোড এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি উঠতে শুরু করে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭২ ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতি বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী এবং কর্ণফুলী ও হালদার পানি বেড়েছে প্রতিদিন।
চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি সব উপজেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফটিকছড়ি ছাড়া সব উপজেলা কম বেশি প্লাবিত হয়েছে।
“সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। সাতকানিয়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে।”
সাতকানিয়ার কেওচিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগেও আমাদের এলাকায় পানি উঠেছে। কিন্তু এরকম না। আজ ভোরের মধ্যে আমাদের এলাকার বেশিরভাগ বাড়িঘরের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে। সব টিউবওয়েল-মোটর পানির নিচে।
“এখন খাবার পানির সংকটে আছি। দোকানপাট- মসজিদের নিচতলায়ও পানিতে তলিয়েছে। এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্কও ঠিকমত কাজ করছে না। বিদ্যুৎ নেই গত দুদিন ধরে।”
সোমবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের চন্দনাইশ, দোহাজারী ও সাতকানিয়া অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই অংশে শত শত মানুষকে হেঁটে পার হতে দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে দক্ষিণের বেশিরভাগ উপজেলা, রাঙ্গুনিয়ার শস্যভান্ডার খ্যাত গুমাই বিলসহ চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন অংশের কৃষি জমি, সবজি খেত, হাঁস-মুরগি-গরুর খামার তলিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।