ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের বর্ষসেরা ক্রিকেটার ভারতের এই দুই তারকা, টি-টোয়েন্টির সেরা হয়েছেন নিকোলাস পুরান।
Published : 22 Apr 2025, 11:40 AM
গায়ের পোশাক রঙিন হোক বা সাদা, হাতের বল সাদা হোক বা লাল, ক্রিকেটবিশ্বজুড়ে দাপুটে পারফরম্যান্সের দারুণ এক স্বীকৃতি পেলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। উইজডেনের ‘লিডিং ক্রিকেটার ইন দা ওয়ার্ল্ড’ মনোনীত হলেন ভারতের এই ফাস্ট বোলার। নারী ক্রিকেটের সেরার সম্মান পেলেন তার স্বদেশী তারকা স্টাইলিশ ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানা।
ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের ২০২৫ সালের সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার। ক্রিকেটের অনেক ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল এই অ্যালমানাকের ১৬২তম সংস্করণ এটি।
‘লিডিং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার ইন দা ওয়ার্ল্ড’ হয়েছেন বিস্ফোরক ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান।
উইজডেনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও দারুণ মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি ‘বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার-এর তালিকায় এবার জায়গা পেয়েছেন গাস অ্যাটকিনসন, জেমি স্মিথ, ড্যান ওরাল, লিয়াম ডসন ও সোফি এক্লেস্টোন।
বুমরাহ ও মান্ধানার সেরার স্বীকৃতি পাওয়া অবধারিত ছিল অনেকটাই। গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে চোটে পড়ার আগে অসাধারণ ফর্মে ছিলেন বুমরাহ। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে বিশের কম গড়ে ২০০ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি গত বছর। ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা ছিল তার অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের।
অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে ভারত ভালো করতে না পারলেও বুমরাহর বল হাতে ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। শেষ টেস্টে চোটে পড়ার আগে সিরিজে ৩২ উইকেট শিকার করেন তিনি স্রেফ ১৩.০৬ গড়ে। উইজডেন সম্পাদক লরেন্স বুথ বুমরাহকে নিয়ে লিখেছেন ‘"quite simply the star of the year". গত বছর মাত্র ১৩ টেস্ট খেলে তার উইকেট ছিল ৭১টি, গড় ছিল অবিশ্বাস্য (১৪.৯২)। উইকেট শিকারে তার ধারেকাছ ছিলেন না বিশ্বের আর কোনো বোলার।
মূলত ইংলিশ গ্রীষ্মে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের বিবেচনায় নেওয়া হয় পাঁচ বর্ষসেরার বাছাইয়ে। একাধিকবার এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না কাউকে।
২০০৩ সাল থেকে লিডিং মেন’স ক্রিকেটার স্বীকৃতি দিয়ে আসছে উইজেডেন। এই সম্মান পাওয়া চতুর্থ ভারতীয় ক্রিকেটার বুমরাহ। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে টানা দুবার এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ভিরেন্দার শেবাগ, পরের বছর সাচিন টেন্ডুলকার, ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা তিনবার জিতেছিলেন ভিরাট কোহলি।
ব্যাট হাতে গতবছর রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতেছিলেন স্মৃতি মান্ধানা। তিন সংস্করণ মিলিয়ে গত বছর তার রান ছিল ১ হাজার ৬৫৯। মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক পঞ্জিকাবর্ষে যা রেকর্ড। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেন চারটি। এটিও আরেকটি বিশ্বরেকর্ড। টেস্ট খেলেছেন গত বছর স্রেফ একটিই, সেটিতে উপহার দিয়েছেন ১৪৯ রানের ইনিংস।
২০১৮ সালেও লিডিং উইমেন ক্রিকেটার হয়েছিলেন মান্ধানা। এর আগে দুবার এটি জিতেছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান এলিস পেরি ও বেথ মুনি। ভারতের হয়ে আগে জিতেছেন কেবল মিতালি রাজ ২০১৭ সালে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত বছর রানের জোয়ার বইয়ে দিয়ে ২ হাজার ৩৩১ রান করেন পুরান। এক পঞ্জিকাবর্ষে মোহাম্মদ রিজওয়ানের রেকর্ড (২ হাজার ৩৬) পেছনে ফেলে দেন তিনি অনেক ব্যবধানে। গোটা বছরে ১৭০টি ছক্কা মারেন তিনি। আগের রেকর্ড ছিল ক্রিস গেইলের ১৩৫ ছক্কা। লিডিং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের লড়াইয়ে ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটসম্যানের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।
বর্ষসেরা টেস্ট পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি ‘উইজডেন ট্রফি ফর আউটস্ট্যান্ডিং ইন্ডিভিজুয়াল টেস্ট পারফরম্যান্স’ জিতেছেন এবার মিচেল স্যান্টনার। গত অক্টোবরে ভারত সফরে পুনে টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে স্মরণীয় এক জয় এনে দেন তিনি। ওই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা কিউইরা পরে ৩-০ ব্যবধানে ভারতকে হারিয়ে ঐতিহাসিক সাফল্য পায়।
ক্রিকেটের আইন প্রণেতা সংস্থা এমসিসির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২০২৩ সাল থেকে সেরা টেস্ট পারফরম্যান্সকে আলাদা করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। আগের দুবার এটি জিতেছেন জনি বেয়ারস্টো ও ট্রাভিস হেড।
উইজডেনের মূল আকর্ষণ এখনও বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার। ১৮৮৯ সাল থেকে এই স্বীকৃতি দিয়ে আসছে তারা। প্রথমবার দুবার ছয় ক্রিকেটারকের দেওয়া হলেও পরের বছর থেকে তা নামিয়ে আসা হয় পাঁচ ক্রিকেটারে, যা চলছে এখনও।
মূলত ইংলিশ গ্রীষ্মে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের বিবেচনায় নেওয়া হয় পাঁচ বর্ষসেরার বাছাইয়ে। একাধিকবার এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না কাউকে।
অভিষেক মৌসুমেই সেই পাঁচজনের মধ্যে জায়গা পেয়ে গেলেন গাস অ্যাটকিনসন ও জেমি স্মিথ। অভিষেক টেস্টেই লর্ডসে ১২ উইকেট নিয়ে সাড়া ফেলে দেন অ্যাটকিনসন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টেই আরেকবার ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি স্মরণীয় এক সেঞ্চুরি করেন আটে নেমে। ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সফরে গিয়ে টেস্ট হ্যাটট্রিকের স্বাদও পেয়ে যান। সব মিলিয়ে প্রথম মৌসুমেই তার শিকার ৫২ উইকেট।
অ্যাটকিনসনের সঙ্গেই টেস্ট অভিষেক জেমি স্মিথের। ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই করেন ৭০। দ্রুতই ইংল্যান্ডের মূল টেস্ট কিপার-ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। ৯ টেস্ট খেলে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটিতে তার রান ৬৩৭। আগ্রাসী ও ভয়ডরহীন ব্যাটিং দিয়ে নজর কাড়েন তিনি।
ড্যানিয়েল ওরালের পরিচয় এখনও পর্যন্ত ‘অস্ট্রেলিয়ান পেসার।’ ২০১৬ সালে তিনটি ওয়ানডে খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। তবে এই ইংলিশ গ্রীষ্মেই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবেন ৩৩ বছর বয়সী পেসার। কাউন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। গত মৌসুমে স্রেফ ১৬ গড়ে ৫২ উইকেট নিয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি সারের সাফল্যে।
সেরা পাঁচে লিয়াম ডসনের জায়গা পাওয়া ছিল অনুমিতই। গত মৌসুমে হ্যাম্পশায়ারের হয়ে ৫৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি প্রায় ৬০ গড়ে ৯৫৬ রান করে অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখান এই স্পিনিং অলরাউন্ডার।
সোফি এক্লেস্টোন গত উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও উইমেন’স অ্যাশেজে খুব ভালো করতে পারেননি। তবে ইংলিশ গ্রীষ্মে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে যান তিনি এই সময়েই। সব মিলিয়ে দশের কম গড়ে ২৬ উইকেট নিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার।
প্রায় ২১ বছরের ক্যারিয়ারে ৭০৪ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো জেমস অ্যান্ডারসন বিশেষভাবে জায়গা পেয়েছেন এবারের অ্যালমানাকে। গত বছর মারা যাওয়া দুই ইংলিশ ক্রিকেটার সাবেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গ্রাহাম থর্প ও সর্বকালের সেরা বাঁহাতি স্পিনারদের একজন ডেরেক আন্ডারউডকেও স্মরণ করা হয় এবারের অ্যালমানাকে। আন্ডারউডকে নিয়ে লিখেছেন তার সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি, থর্পকে নিয়ে তার স্ত্রী অ্যামান্ডা থর্প।