ইউএনও বলেন, “লামায় এরই মধ্যে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে।”
Published : 07 Aug 2023, 10:13 PM
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী ফুলেফেঁপে বান্দরবান শহর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পাহাড় ধসের কারণে জেলা থেকে উপজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এই অবস্থায় বান্দরবান ‘কার্যত বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা শহরের অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে হোটেলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
জেলার কোথাও কোথাও শনিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। জেলা শহরে রোববার থেকে কোনো বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।
সোমবার রাতে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল রোববার থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে যত সময় যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে।
“লামায় এরই মধ্যে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু নীচু এলাকায় স্রোতের কারণে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আলীকদম-লামা হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ওইসব এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে শহরের নীচু এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহর থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির পথে কোনো যানবাহন চলছে না। এ ছাড়া রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির পথেও যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
আলীকদমের স্থানীয় সংবাদকর্মী সুশান্ত তঞ্চংগ্যা রাতে বলেন, শনিবার থেকে সেখানে কোনো বিদ্যুৎ নেই। মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
থানচিতে ভারি বর্ষণে উপজেলা সদরের আপ্রংমং পাড়া, রবার্ট পাড়া, টিঅ্যান্ডটি পাড়া, সাংগু সেতু নীচের পাড়া, হিন্দুপাড়া, মুসলিমপাড়া, বাগানপাড়া, হাইলমারা পাড়াসহ কয়েকটি এলাকার দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জানা গেছে।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবুল মনসুর বলেন, “সদর ও বলিপাড়া ইউনিয়নে মোট পাঁচটি কালভার্ট পানিতে তলিয়ে গেচ্ছে । দুর্যোগে প্রশাসনিকভাবে সেবা দেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
বলিপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ক্যসাউ মারমা (৬২) সাংবাদিকদের বলেন, “সাঙ্গু নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে আমার ঘরসহ পাড়ার ছয়টি বাড়ি ভেঙে গেছে। আমরা ভয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আপাতত আশ্রয় নিয়েছি।”
থানচি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সূজন মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, “উপজেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত দুদিন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছি। কোনো কোনো এলাকার নৌকায় যাতায়াত করতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, পানিবন্দি ও আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে আলীকদম উপজেলা থেকে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ থেকে সদর বাজারে যাওয়ার রাস্তাটি প্লাবিত হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই সেখানে টানা বৃষ্টিতে মাতামুহুরি নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়টির কিছু অংশে পানি উঠে পড়েছে। বিশেষ করে ২ নম্বর চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তায় পানি উঠেছে।