স্প্যানিশ ফুটবল
আগেই লা লিগা শিরোপা ঘরে তোলা কার্লো আনচেলত্তির দলকে শেষ লিগ ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে দিল বেতিস।
Published : 26 May 2024, 03:41 AM
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বিশেষ উপলক্ষ, দলের অনেক সাফল্যের নায়ক টনি ক্রুসের ঘরের মাঠে বিদায়ী ম্যাচ। সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে শেষ ‘প্রস্তুতি ম্যাচও।’ রেয়াল মাদ্রিদের জন্য কোনোটাই প্রত্যাশিত হলো না। বলা যায়, রেয়াল বেতিস সেটা হতে দিল না।
আগেই লা লিগা শিরোপা ঘরে তোলা কার্লো আনচেলত্তির দলকে শনিবার রাতে শেষ লিগ ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে দিয়েছে বেতিস। মৌসুমের প্রথম দেখায়ও দলটির বিপক্ষে পয়েন্ট হারিয়েছিল রেয়াল, ১-১ স্কোরলাইনে।
শেষের মতো শুরুটাও হয় টনি ক্রুসময়। এতদিনের প্রিয় আঙিনায় প্রিয় সতীর্থের শেষটা বিশেষ করে তুলতে চেষ্টার কমতি রাখেনি রেয়ালের অন্য খেলোয়াড় এবং সমর্থকরা। গ্যালারিতে দেখা যায় ঢাউস আকৃতির একটি ব্যানার, তাতে ক্রুসের ছবি, তারওপর লেখা ২২ ট্রফি আর তার নিচে লেখা ‘ধন্যবাদ কিংবদন্তি।’
আর মাঠে মদ্রিচ-ভিনিসিউসরা সবাই ক্রুসের ‘৮ নম্বর জার্সি’ পরে দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান, মাঝ দিয়ে হেঁটে আসেন ২০১৪ সালে রেয়ালে পাড়ি জমানো এবং অল্প সময়েই মাঝমাঠের নায়ক হয়ে ওঠা টনি ক্রুস।
খানিক বাদে শুরু হয় মাঠের লড়াই। কিছুটা ঢিমেতালে শুরু ম্যাচের নবম মিনিটে ভালো একটা সুযোগ তৈরি করে রেয়াল। বাঁ দিক থেকে ভিনিসিউস জুনিয়র দূরের পোস্টে দানি কারভাহালকে খুঁজে নেন। ফাঁকায় বল পেয়েও উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।
পাঁচ মিনিট পর এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার বাড়ানো বল বক্সে বুক দিয়ে নামিয়ে গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন ভিনিসিউস। ওই আক্রমণেই ফেরলঁদ মঁদির শট গোললাইন থেকে ফেরান বেতিসের এক ডিফেন্ডার।
চাপ ধরে রেখে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে রেয়াল। কিন্তু প্রতিবারই শেষটায় গুলিয়ে ফেলছিল তারা। ৩৪তম মিনিটে যেমন রদ্রিগোর বাইলাইন থেকে বাড়ানো পাস গোলমুখে পেয়ে ঠিকমতো টোকা দিতে পারেননি ভিনিসিউস।
৩৯তম মিনিটে রেয়ালের জালে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতে বেতিস। যদিও তাদের আনন্দ স্থায়ী হয়নি, সময় নিয়ে ভিএআর মনিটরে দেখে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
বিরতির পর প্রথম মিনিটেই রেয়ালের বক্সে ভীতি ছড়ায় বেতিস। দুই মিনিট পর আবার। ৫০তম মিনিটে তো গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল তারা; তবে পেরেসের দূর থেকে নেওয়া শট দুর্দান্ত সেভ করেন থিবো কোর্তোয়া, ঝাঁপিয়ে কোনোমতে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান।
১০ মিনিট পর আরেকটি দারুণ সেভ করেন কোর্তোয়া। পাল্টা আক্রমণে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হুয়ান মিরান্দা শট ঝাঁপিয়ে ফেরান বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
সাত দিন পরই মৌসুমের সবচেয়ে বড় ম্যাচ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। তাই কোনোরকম ঝুঁকি এড়াতে ৬২তম মিনিটে কোর্তোয়াকে তুলে নেন কোচ, বদলি নামেন গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগা। একই সঙ্গে নাচো ফের্নান্দেসের জায়গায় নামেন এদের মিলিতাও।
৮৫তম মিনিটে অনেক দূর থেকে দারুণ একটি ফ্রি কিক নেন ক্রুস। ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান বেতিস গোলরক্ষক। এরপরই তাকে তুলে নেন কোচ।
শেষবারের মতো বের্নাবেউয়ের সবুজ আঙিনা ছেড়ে যাওয়ার আগে সতীর্থদের আলিঙ্গন করেন জার্মান গ্রেট, ডাগআউটেও একে একে কোচ ও বাকি সতীর্থদের জড়িয়ে ধরেন। এগিয়ে আসে তার সন্তানরা, তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে আর চোখের পানি আটকাতে পারেননি টনি ক্রুস।
এদিকে খেলা শুরু হয়ে গেলেও বারবার ক্যামেরা ঘুরে যাচ্ছিল ক্রুসের দিকে।
শেষ পর্যন্তও জালে বল পাঠাতে পারেনি রেয়াল। আগামী শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হতে হবে। এত বড় লড়াইয়ের আগে পরপর দুই ম্যাচে ড্রয়ের ধাক্কা; তবে ম্যাচ শেষে দলটির কারো চোখে-মুখে তেমন কোনো হতাশাই চোখে পড়েনি।
শেষের বাঁশি বাজতেই বরং শুরু হয়ে যায় যেন বের্নাবেউয়ে ক্রসের বিদায়ের শেষ পর্ব। আবেগঘন মুহূর্ত দীর্ঘায়িত হলো আরও।
৩৮ ম্যাচে ২৯ জয় ও আট ড্রয়ে ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে আসর শেষ করল চ্যাম্পিয়নরা। আর ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম হলো রেয়াল বেতিস, আগামী মৌসুমে কনফারেন্স লিগে খেলবে তারা।