বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে আইএসপিআর।
Published : 08 Aug 2023, 01:48 PM
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে দুর্গতদের সহায়তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর মঙ্গলবার জানিয়েছে, সেনা সদস্যের মাধ্যমে নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা, জরুরি ত্রাণ পরিচালনা ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
“সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশনসমূহ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে।”
বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে আইএসপিআর।
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী ফুলেফেঁপে বান্দরবান শহর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পাহাড় ধসের কারণে জেলা থেকে উপজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এই অবস্থায় বান্দরবান ‘কার্যত বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা শহরের অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে হোটেলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
বান্দরবানের বেশির ভাগ এলাকা টানা দুদিন ধরে বিদ্যুৎহীন। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলায় দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তাসলিমা সিদ্দিকা।
অপরদিকে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগের পাশাপাশি পাহাড়ি নদীগুলোর পানি বেড়ে এবং খাল-জলাশয় উপচে চট্টগ্রামের ১৩টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি সব উপজেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফটিকছড়ি ছাড়া সব উপজেলা কম বেশি প্লাবিত হয়েছে।
“সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। সাতকানিয়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে।”
এই উপজেলা দুটির বন্যাদুর্গতের সহায়তায় চট্টগ্রামের জিওসি ও নৌবাহিনীর সঙ্গে আলাপের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “ইতোমধ্যে দুই উপজেলায় সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা বন্যার্তদের সহায়তায় কাজ শুরু করেছে।”
বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ৪০০ টন চাল, শুকনো খাবার বরাদ্দ রাখার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে চট্টগ্রামে অতি ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার সকাল থেকে নগরীতে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। পরদিন বিকাল থেকে সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়াসহ কয়েকটি উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে, যা সোমবার কয়েকটি উপজেলার মূল সড়ককেও ডুবিয়ে দেয়।
অপরদিকে সোমবার সকালে ফতেয়াবাদ জংশনে রেললাইনের উপর পানি জমে যায়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়মুখী ও দোহাজারীমুখী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে হাটহাজারী রোডের বিভিন্ন অংশে মূল সড়কে পানি উঠে যায়। এতে যানবাহান চলাচল ব্যাহত হয়।
হাটহাজারী উপজেলার ইসলামিয়া বাদামতল এলাকায় কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পানিতে পড়ে মারা যান হাটহাজারী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিপা পালিত।
আরও পড়ুন-
নগরী ছাড়িয়ে দুর্ভোগ গ্রামেও, চট্টগ্রামে পানিবন্দি ৩ লাখ মানুষ
পানিবন্দি বান্দরবানে খোলা হয়েছে দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র