নবনির্মিত এ শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন না করে মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠের অস্থায়ী শহীদ মিনারে পালনের কথা জানানো হয়েছে।
Published : 02 Dec 2023, 07:38 PM
নগরীতে নবনির্মিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ‘দৃশ্যমান’ করার প্রস্তাব এসেছে এক মতবিনিময় সভায়।
চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে শনিবার দুপুরে সভায় এই প্রস্তাব তোলা হয়।
গত ২৮ অক্টোবর সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এর আওতায় ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ভবন ও ৮ তলা মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভবনও নির্মাণ করা হয়।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর এক সভায় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নতুন শহীদ মিনারের ডিজাইন নিয়ে আপত্তি জানান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারের সভা ডাকা হয়।
সভায় সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক আবুল মোমেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমানসহ সাংস্কৃতিক সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় কে সি দে সড়কের এক পাশের মুসলিম ইনস্টিটিউট ও গণগ্রন্থাগার ভবনকে অন্য পাশের শহীদ মিনারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ২১ ফুট উঁচু একটি প্লাজার মাধ্যমে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আপত্তি মূলত প্লাজাটি নিয়ে। তাদের আপত্তি প্লাজার কারণে নিচের সড়ক থেকে প্লাজার উপরে থাকা শহীদ মিনার দৃশ্যমান নয়।
সভায় আবুল মোমেন বলেন, “তিনটি স্থাপনার মধ্যে শহীদ মিনারের আবেগ ও ইমপেক্ট ভিন্ন। সেটা এখানে হয়নি। সব স্থাপনার মধ্যে শহীদ মিনারটি হয়েছে খুব ছোট। অথচ প্রধান হওয়ার কথা শহীদ মিনারটি। যেহেতু নির্মাণ কাজ শেষ, খরচও শেষ।
“এখন আমরা দেখছি বেসিক জায়গায় গণ্ডগোল হয়েছে। এটা করপোরেট শহীদ মিনার হয়েছে। আমরা গণমানুষের শহীদ মিনার চাই। এটা যে ইতিহাস ও জাতিকে ধারণ করে তা দেখতে হবে।”
মাহফুজুর রহমান বলেন, “প্লাজাটা ভেঙে দিলে ঠিক হবে। এখান থেকে প্রস্তাব গেলে প্রধানমন্ত্রী আপত্তি করবেন না। মুসলিম হল-পাবলিক লাইব্রেরি আর শহীদ মিনার দুটো দুই পাশে থাক। প্লাজার সুড়ঙ্গটি ভেঙে দেওয়া হোক। তাহলে কারও আপত্তি থাকবে না।”
অনুপম সেন বলেন, “শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান হতে হবে। এর জন্য প্রস্তাব দেওয়া হলে আশা করি সম্ভব হবে। আমাদের অনুভূতির সঙ্গে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সাথে শহীদ মিনার জড়িত। কয়েকজন প্রকৌশলীকে নিয়ে এবং এখানকার কয়েকজনকে নিয়ে একটা কমিটি করা যেতে পারে। শহীদ মিনারকে উন্মুক্ত জায়গায় নিতে হবে। সুড়ঙ্গটি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা দরকার, এটা বিসদৃশ। স্থপতি ও প্রকৌশলীরা বসলে ঠিক করা যাবে।”
শহীদ মিনারে আসা-যাওয়ার পথ প্রশস্ত করার কথা বলেন তিনি।
প্রকল্প পরিচালক লুৎফুর রহমান বলেন, “এখানে ব্যক্তিগত মত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা লিখিত প্রস্তাব দিলে সেটা অনুমোদনের পর বাস্তবায়নের কাজ আমরা করব।”
গণপূর্তের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বদরুল আলম খান বলেন, “একটি কাঠামো হয়েছে, সেটি চাইলেই ভেঙে ফেলা সহজ। কিন্তু ভবিষ্যত ভাবতে হবে। এখানে ১৫ তলা স্ট্রাকচার হয়েছে। পরে যাই করি তখনও শহীদ মিনার বামন আকৃতির মনে হতে পারে। প্লাজার দুই অংশ আলাদা করতে পারব কি না, এটা আমরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে স্থপতিরা সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।”
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “অনেক ভালো স্থপতি আছেন। যিনি করেছেন উনাকেও রাখা দরকার। উনার ব্যাখ্যাটা কী। জমিটিও সিটি করপোরেশনের। চট্টগ্রামের ভালো স্থপতিদের নিয়ে বসব। কমিটি করে মতামত নিয়ে আমরা বলব কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়। সহজে কীভাবে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া যায়।”
সভায় ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের কর্মসূচি এ শহীদ মিনারে পালন করে মিউনিসিপ্যাল স্কুলে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পালনের কথা জানানো হয়।
আরও পড়ুন-
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স: চট্টগ্রাম শহীদ মিনার ‘আপাতত’ সরানোর প্রস্তাব
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স হচ্ছে ২৫ উপজেলায়
নতুন করে গড়তে ভাঙা হল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার