চট্টগ্রামে এবারও বিকল্প শহীদ মিনারে বিজয় দিবস

পুরানো শহীদ মিনার ভেঙে নতুন শহীদ মিনার ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শেষ করতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2022, 02:15 PM
Updated : 13 Dec 2022, 02:15 PM

নতুন শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ প্রতিশ্রুত সময়ে শেষ না হওয়ায় এবারও চট্টগ্রামে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে বিকল্প শহীদ মিনারে। 

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস নতুন শহীদ মিনারে পালন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তবে তখনও পুরো কাজ শেষ হবে না। 

কাজ শুরু করতে দেরী এবং প্রকল্পের বাজেট ও মেয়াদ সংশোধন ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় এবার বিজয় দিবসের আগে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। 

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠকদের দাবি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ অন্য প্রকল্পের চেয়ে বেশি ‍গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ে শেষ করা উচিত। 

চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির ‍মুখে চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

২৩২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ‍শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরি অংশের পুরানো স্থাপনা ভেঙে ১৫-তলা গণগ্রন্থাগার ও ৮-তলা মিলনায়তন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ হবে। মাঝের অংশে আগের মত শহীদ মিনারই থাকছে। 

সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট ‍ওপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যাবে। 

শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার এবং প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়, তাতে আগের শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভাঙার পাশাপাশি মিনার আরও উঁচুতে স্থাপন করতে হচ্ছে। 

এ কারণেই পুরনো শহীদ মিনারটি সাময়িকভাবে সরাতে হবে বলে গত বছরের মাঝামাঝিতে জানায় গণপূর্ত বিভাগ। তখন তারা বলেছিল, শহীদ মিনার অংশের সব কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে চায়। 

তখন সাংস্কৃতিক সংগঠকদের কেউ কেউ আপত্তি জানালেও একই নকশায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাসে তারা রাজি হয়। পাশাপাশি এবারের বিজয় দিবসের মধ্যেই কাজ শেষ করার দাবিও জানিয়েছিল তারা। 

গত বছরের ৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় পুরাতন শহীদ মিনারটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। 

এরপর গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। 

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রাহুল গুহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূল বেদির ঢালাই শেষ। এখন স্তম্ভগুলোর ঢালাই চলছে। এ মাসের মধ্যে ঢালাই কাজ শেষ হবে। তারপর শহীদ মিনার অংশের বাকি কাজ শেষ করতে মাস দুয়েক লাগতে পারে। ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। 

“তবে পুরো প্লাজার কাজ শেষ হবে না। চাইলে ২১ ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকতা পালন করা যাবে। শহীদ মিনারের দায়িত্ব বুঝে পাওয়ায় দেরীসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর অক্টোবরে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে আমরা কাজ শুরু করি।” 

প্রকল্পের বাজেট বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে গণপূর্তের এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, “বাজেট বেড়ে ২৮১ কোটি টাকা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের পুরো কাজ শেষ করতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

“চলতি অর্থবছরে যত বাজেট ছাড় করার কথা ছিল সেটাও হয়নি। এসব কারণে লক্ষ্য অনুসারে কাজ আগানো সম্ভব হয়নি।” 

আবৃত্তি সংগঠন প্রমা’র সভাপতি শিল্পী রাশেদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মতবিনিময় সভায় সংশ্লিষ্টরা এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা তাতে একমত হয়েছিলাম। এ ধরণের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ধীরগাতি কাঙ্ক্ষিত নয়। 

“কিছু বিষয় আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়। চট্টগ্রামে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ছাড়া আর কোনো কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধও নেই। গত বছর তাদের আশ্বাসের কারণেই আমরা মিউনিসিপ্যাল স্কুলের বিকল্প শহীদ মিনারটি মেনে নিয়েছিলাম। অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।” 

নির্মাণ কাজের জন্য পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলায় ৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিকল্প একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সেখানেই ২১ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ মার্চ পালন করা হয়। 

১৯৬২ সালে নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি বর্তমান রূপ লাভ করে। 

চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে সেখানেই কর্মসূচি পালন হয়ে আসছিলো।

Also Read: চট্টগ্রামে নতুন শহীদ মিনার উদ্বোধন

Also Read: চট্টগ্রাম শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণে ৯ মাস সময় দিলেন মেয়র

Also Read: নতুন করে গড়তে ভাঙা হল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

Also Read: চট্টগ্রামের মুসলিম হল ভেঙে হচ্ছে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স

Also Read: সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স: চট্টগ্রাম শহীদ মিনার ‘আপাতত’ সরানোর প্রস্তাব

Also Read: চট্টগ্রামে সাগর তীরের কাছে হবে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ