চট্টগ্রাম শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণে ৯ মাস সময় দিলেন মেয়র

সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় বর্তমান শহীদ মিনারটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ নয় মাসের মধ্যে শেষ করতে বলেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2021, 03:42 PM
Updated : 3 Oct 2021, 03:42 PM

রোববার চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুসলিম ইন্সটিটিউট হল এলাকায় অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

এই সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী।

মেয়র রেজাউল বলেন, “বাঙালির আবেগ, অনুভূতি ও ঐতিহ্যের স্মারক শহীদ মিনার। মূল নকশা ও অবয়ব অনুসারে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার, বিন্যাস ও সম্প্রসারণ কাজ বর্তমান স্থানেই ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।”

অবিলম্বে কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ চলাকালে জাতীয় দিবসগুলোর কর্মসূচি পালন যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) পরিচালিত মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে একটি বিকল্প স্থাপনা নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির ‍মুখে চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ ‍শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরির অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আট তলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ চলছে।

সড়কের দুই পাশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট ‍উপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যাবে।

শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার এবং প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়েছে, তাতে বর্তমান শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভাঙার পাশাপাশি মিনার আরও উঁচুতে স্থাপন করতে হবে।

এ কারণেই সেটা সাময়িকভাবে সরাতে চায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত বিভাগ। তখন তারা বলেছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের শহীদ মিনার অংশের কাজ শেষ করতে চায় তারা।

চলতি বছরের জুনে বিষয়টি আলোচনায় এলে শহীদ মিনার সাময়িকভাবে সরানোর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। পাশাপাশি শহীদ মিনারের পাশে গাছপালা কেটে মিউজিয়াম ও ফুড কোর্ট না করারও দাবি জানান তারা।

এর আগে জুনে গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি মেয়রকে জানালে তিনি চট্টগ্রামের সর্বস্তারের মানুষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন।

সভায় মেয়র রেজাউল বলেন, “কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর বিকল্প শহীদ মিনার স্থাপনাটিও থেকে যাবে এবং সেইভাবেই এর স্থায়ী রূপ দেওয়া হবে।

“আমি শহীদ মিনারের সংস্কার চাই, মূল নকশানুযায়ী বিন্যাস ও সম্প্রসারণ চাই। তবে এটা ভাঙ্গা বা সরিয়ে ফেলতে মন সায় দেয়নি এবং দেবেও না।”

সভায় উপস্থিত নাট্য ব্যক্তিত্ব আহমদ ইকবাল হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে যে ডিজাইনে আছে সেভাবেই হবে শহীদ মিনার। বর্তমান শহীদ মিনারটির অবস্থা খারাপ। কয়েক জায়গায় দেবে গেছে। প্লাজার উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যের জন্য এর ভিত্তি ১০ ফুট উঁচু হবে। তাই নতুনভাবে করা ছাড়া উপায় নেই।”

তিনি বলেন, “এই সময়সীমার মধ্যেই ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চ পড়ছে। আগের শহীদ মিনারটা সংস্কারের জন্য ভাঙতে হচ্ছে। আর নতুন যেটা স্কুলে হবে সেটাও থেকে যাবে স্থায়ীভাবে।

“সভায় প্রস্তাব দিয়েছি মুসলিম হলে একটি ডরমিটরি থাকা দরকার। সেটা তারা বিবেচনা করবে। ফুড কোর্ট থাকবে না। মিউজিয়ামও থাকবে না। শুধু ল্যান্ডস্কেপ থাকবে। ইতিমধ্যে কয়েকটা গাছ কেটে ফেলেছে। সেগুলো লাগাতে হবে।”

মতবিনিময়ে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, নাট্য ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সচিব অভিক ওসমান, সিসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির, দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, আব্দুল হালিম দোভাষ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. শহীদুল হক চৌধুরী, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, জাসদ কেন্দ্রীয় নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, নুরুল আলম মন্টু, জাসদ মহানগর নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, গণতন্ত্র পার্টির তাজুর মুল্লুক, ন্যাপের মিঠুন দাশগুপ্ত, দীপেন চৌধুরী, ছড়াকার মোদাচ্ছের আলী, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের রাশেদ হাসান, ২২ মহল্লা সর্দার কমিটির মো. ইউসুফ সর্দ্দার।