আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন।
Published : 22 Oct 2023, 09:00 AM
প্রায় শতবর্ষী চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হল এবং ৬০ বছর বয়সী বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ফিরছে নতুন রূপে; তবে এখন উদ্বোধন হলেও পুরো কাজ শেষ হতে আগামী জুন লেগে যাবে।
দীর্ঘদিন থেকে নির্মাণাধীন এ কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় শেষের দিকে; এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন।
২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পে আগের জরাজীর্ণ ঐতিহ্যবাহী মুসলিম হল ভেঙে করা হয়েছে আটতলা নতুন ভবন। পুরনো গণগ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) ভেঙে হয়েছে ১৫তলা ভবন।
প্রকল্পের অধীনে পুরনো শহীদ মিনারের আদল ঠিক রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন শহীদ মিনার ও উন্মুক্ত গ্যালারি। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স থেকে ২১ ফুট উঁচু পথ ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে শহীদ মিনারে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স উদ্বোধন হতে যাওয়ায় খুশি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠকরা। পাশাপাশি তাদের দাবি বৃহৎ এ প্রকল্পের ভবিষ্যত ব্যবস্থাপনা ও লোকবল বিষয়ে যেন এখনই নজর দেওয়া হয়।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উদ্বোধন উপলক্ষে বহিসজ্জার কাজ চলছে।
“পুরো প্রকল্পের মোট কাজের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে আগামী জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”
১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের কিছু সংস্কৃতি ও সমাজসেবীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় শতাব্দী ধরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন হয়েছে এখানে। ১৯৫৯ সালে সরকার মুসলিম ইনস্টিটিউট অধ্যাদেশের মাধ্যমে হলটি অধিগ্রহণ করে।
বর্তমান সরকারের হাতে নেওয়া সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় নতুন নির্মিত আটতলা মুসলিম ইনস্টিটিউটে ৯০০ আসনের মিলনায়তন এবং ৩৫০ আসনের মিনি অডিটরিয়াম আছে। এখানে একশ ও দু’শ আসনের দুটি সেমিনার কক্ষ থাকছে। থাকবে একটি আর্ট গ্যালারি ও স্যুভেনির শপ।
প্রকল্প পরিচালক রাহুল গুহ জানান, অডিটোরিয়াম ও সেমিনার কক্ষগুলোর কাজ শেষের পথে।
‘আংশিক’ প্রস্তুত চট্টগ্রামের শহীদ মিনার, আরও অপেক্ষা
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স: চট্টগ্রাম শহীদ মিনার ‘আপাতত’ সরানোর প্রস্তাব
চট্টগ্রামের মুসলিম হল ভেঙে হচ্ছে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স
অপরদিকে ১৯৬৩ সালে ইনস্টিটিউটে স্বল্প পরিসরে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে হলের পাশেই পাবলিক লাইব্রেরির বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় এখন নবনির্মিত ১৫তলা পাবলিক লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পৃথক নয়টি পাঠাগারে মোট দেড় হাজার পাঠক বসে পড়তে পারবেন। আছে একটি বড় ও একটি ছোট সেমিনার হল। এছাড়া আইসিটি লাইব্রেরি, রেস্ট হাউজ ও ডরমেটরিও থাকছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, “১৫তলা লাইব্রেরি ভবনের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। লাইব্রেরি ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার কাজ পুরোপুরি শেষ। সেখানে গত জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। নির্মাণ কাজ শুরুর সময়ে সরিয়ে নেওয়া বইপত্রও ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”
প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজও হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এলসি করা কিছু নির্মাণ সামগ্রি দেশের বাইরে থেকে আসার অপেক্ষায় আছে। সেগুলো এলে বাকি অল্প কিছু কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।”
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোচিত এ প্রকল্পের আওতায় শহীদ মিনার ও সংলগ্ন গ্যালারিও প্রস্তুত। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরবে বলে আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক।
প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংস্কৃতি অঙ্গনে এত বড় প্রকল্প চট্টগ্রামে আগে আর হয়নি। এটা অত্যন্ত আনন্দের। আমরা আশাবাদী এতে সংস্কৃতি চর্চার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভালো মানের সুপরিসর মিলনায়তন ও মহড়া কক্ষের, যা এখান হয়েছে।
“তবে ব্যবস্থাপনা ও নজরদারি ভালো হতে হবে। সুফল পেতে হলে তাই পরিচালনার নীতিমালা দরকার। যাতে প্রকৃত সংস্কৃতিকর্মীরা সুযোগ পায়।”
অবকাঠামোগুলো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপযোগী ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ করা হচ্ছে কি না তা যাচাই করার সুযোগ এখনও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তা দেখা দরকার। তাহলে প্রকল্পের পুরো সুফল মিলবে।
তিনি চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের মোট ব্যায় ধরা হয়েছিল শুরুতে প্রায় ২৩২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামবাসীর শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর।
বর্তমানে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ কোটি টাকা। প্রকল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আছে, ১৫ তলা বিশিষ্ট ১টি গণগ্রন্থাগার, ১টি মাল্টিপারপাস হল এবং বিপরীত পাশে একটি শহীদ মিনার, যার চত্বরে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে এখানেই কর্মসূচি পালন করা হয়।