পরিচয় মেলেনি, বিএম ডিপোতে নিহত ৯ জন বেওয়ারিশ হিসেবে সমাহিত

২০২২ সালের ৪ জুন রাতের সেই বিস্ফোরণে ৫১ জনের মৃত্যু হয়, উদ্ধার হয় আরও কিছু দেহের খণ্ডিত অংশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 11:45 AM
Updated : 4 June 2023, 11:45 AM

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের এক বছরেও নিহতদের ৯ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি।

মরদেহের কোনো দাবিদার না থাকায় সেগুলো আদালতের অনুমতি নিয়ে সমাহিত করা হয়েছে।

২০২২ সালের গত ৪ জুন রাতের সেই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার করা হয় ৪১ জনের মরদেহ। পরে সময়ে হাসপাতালে অবস্থায় মারা যান কয়েকজন, মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১ জনে।

ডিপো পরিষ্কারের সময় বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু মানবদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। যাদের মধ্যে নয় জনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। 

অনেকের লাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা দূরহ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি নিয়ে হাসপাতাল ও কন্টেইনার ডিপোর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন স্বজনরা।

মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘মরদেহের দাবি নিয়ে আসা’ স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। ২২ জনের মৃহদেহের বিপরীতে ৩৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে ডিএনএ প্রোফাইলের পর ১৩টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়।

পরিচয় শনাক্তের জন্য মৃতদেহগুলো ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সংরক্ষণ রাখার পর গত এপ্রিলে অশনাক্ত লাশগুলো দাফন করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নূর আহামদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “যে ৯টি লাশ ও খণ্ড মর্গের হিমাগারে সংরক্ষিত ছিল, সেগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি, এমনি কোনো দাবিদারও পাওয়া যায়নি।”

শনাক্ত না হওয়া ৯টি লাশ গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে দাফন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আদালতের অনুমতি নিয়ে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাশগুলো নগরীর চৈতন্যগলি নগর বাইশ মহল্লা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।”

শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা আছে। যদি কোনো স্বজন দাবি নিয়ে আসেন, তাহলে ডিএনএ নমুনা দিয়ে শনাক্ত করা যাবে।

মামলার অগ্রগতি কী

বিস্ফোরণের তিন দিন পর, গত বছরের ৭ জুন রাতে সীতাকুণ্ড থানার দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় একটি মামলা করেন এসআই আশরাফ সিদ্দিকী।

ডিপোর ডিজিএম (অপারেশন) নুরুল আকতার, ম্যানেজার (অ্যাডমিন) খালেদুর রহমান, সহকারী অ্যাডমিন অফিসার আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) আবদুল আজিজ, কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশনের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, একই বিভাগের নজরুল ইসলাম ও জিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) নাজমুল আকতার খানকে সেখানে আসামি করা হয়।

সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করলেও পরে তদন্তভার পায় চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এর মধ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি গতবছর ৬ জুলাই প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়, বেসরকারি ওই কনটেইনারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিকপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো দায় এড়াতে পারে না।

বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন সংস্থার পরিদর্শনে ওই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকার বিষয়টি উঠে আসে। বিএম ডিপোর মূল প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের সহযোগী আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্স থেকে এসব রাসায়নিক বিদেশে রপ্তানির জন্য সেখানে রাখা ছিল। 

প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই হাইড্রোজেন পার অক্সাইডই ডিপোতে ‘আগুনের উৎস’।

কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশ তাদের তদন্ত শেষে বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষের ‘দায় খুঁজে না পাওয়ার’ কথা জানিয়ে গত ৩ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

অথচ বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বলেছিল, মালিকপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো ওই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।

গোয়েন্দা পুলিশ ডিপো কর্তৃপক্ষকে দায়মুক্তি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, পুলিশের তদন্তে এটা ‘মিসেটক অব ফ্যাক্ট’।

“ঘটনা যেটা ঘটেছে সেটার সাথে যারা আসামি, তারা কেউ সংশ্লিষ্ট না। এটা একটা নিছক বিস্ফোরণ।”

পুরনো খবর

বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে কারও ‘দায় পায়নি’ পুলিশ, আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন

বিএম ডিপো অগ্নিকাণ্ড: পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে গ্রহণ, আসামিরা পার

বিএম ডিপোর আগুন রাসায়নিক থেকেই, দায় ছিল সবারই: তদন্ত কমিটি

রাসায়নিকের তথ্য ‘না দেওয়ায়’ এতো প্রাণহানি: ফায়ার সার্ভিস

বিএম ডিপোর আগুন নেভেনি ৭২ ঘণ্টায়ও, কেন?

২৪ একরের মৃত্যুপুরী, বাতাসে উৎকট গন্ধ

ডিপোতে রাসায়নিক রাখা নিয়ে প্রশ্ন; অনুমতি নেই, বলছেন বিস্ফোরক পরিদর্শক

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো মালিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন  

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: দুটি কারণ খুঁজছে অনুসন্ধান কমিটি  

ডিপোর আগুন ভয়ঙ্কর হয়েছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডে?

সীতাকুণ্ডে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ৬ কমিটি

অবহেলা: বিএম ডিপোর ৮ জনের নামে মামলা

৮৬ ঘণ্টা পর নিভল সীতাকুণ্ডের আগুন