৮৬ ঘণ্টা পর নিভল সীতাকুণ্ডের আগুন

প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে, বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়ে, ৮৬ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভল সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2022, 06:47 AM
Updated : 8 June 2022, 07:06 AM

বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ বীর ইউনিটের লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগুন পুরোপুরি নিভে গেছে। ডিপোতে আর কোথাও আগুন নেই। আগুন আর জ্বলছে না।”

কিছু কন্টেইনার থেকে এখনও ধোঁয়া বের হতে দেখা গেলেও সক্রিয় আগুন নেই জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “কন্টেইনারে যে গার্মেন্টস পণ্য আছে সেগুলোতে পানি দেওয়ায় সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।”

শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বেসরকারি ওই কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর একের পর এক বিস্ফোরণে তা ছড়িয়ে পড়ে। গত তিন দিন ধরে সেখানে আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে আসছেন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা।

ওই ঘটনায় রোববার পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের নয় কর্মীসহ ৪১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার ডিপোর পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে দুজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডিপোর এক কর্মী।

এ ঘটনায় হতাহতের বেশিরভাগই ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারী, কন্টেইনারবাহী গাড়ির চালক-সহকারী ও শ্রমিক। আহতদের মধ্যে একশর বেশি মানুষ চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এক প্রশ্নের উত্তরে লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ বলেন, "পুরো ডিপো আমরা ঘুরে দেখেছি। আর কোনো মরদেহ পাইনি। কিন্তু আপনারা দেখেছেন একটি শেড এবং অনেক কন্টেইনার পুড়ে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। ক্রেইনের মাধ্যমে সেগুলো আমরা সরাচ্ছি। এর নিচে আর কোথাও কিছু আছে কিনা তা এখনই বলা সম্ভব নয়।”

বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুই কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে বেসরকারি এই ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটি গড়ে তোলা হয় ২০১১ সালে। এর মালিকানায় আছেন বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার ছোট ভাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মুজিবুর রহমান।

স্মার্ট গ্রুপের আরেক কোম্পানি আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডে উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানির জন্য রাখা ছিল কনটেইনার ডিপোতে। ওই রাসায়নিকই আগুনকে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা।

ডিপো কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে ৪৪০০ এর মত কন্টেইনার ছিল। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ৪০০ কন্টেইনার ধ্বংস হয়েছে বলে জানান লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ।

তিনি বলেন, “শুরু থেকেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আগুন যাতে আর না বাড়ে এবং আর কোনো বিস্ফোরণ যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে গেছি।”

শনিবার রাতে আগুন লাগার পর রোববার সকালে সেখানে অগ্নি নির্বাপণে যোগ দেন সেনা সদস্যরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগুন বিপদসীমার নিচে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান আরিফুল ইসলাম।

ডিপোর রাসায়নিকের দূষণ যাতে ড্রেইন ও খাল হয়ে সাগরে ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেও কাজ করছেন সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল।