জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড বুয়েটকে পশ্চাৎদিকে ধাবিত করছে, দাবি সংগঠনটির।
Published : 30 Mar 2024, 09:47 PM
কেন্দ্রীয় কমিটির পদে থাকা বুয়েটের এক শিক্ষার্থী বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রলীগ।
রোববার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।
শনিবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির তথ্য জানানো হয়।
বুধবার রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর কার্যক্রম চালানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের বিক্ষোভ এবং এক শিক্ষার্থী বহিষ্কারের মধ্য ছাত্রলীগ এ কর্মসূচি দিল।
বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলেছে, মূলধারার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জঙ্গিবাদী সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ করে দিয়ে বুয়েট পশ্চাৎদিকে ধাবিত হচ্ছে।
সংগঠনটির দাবি এর মাধ্যমে প্রকৌশল শিক্ষার এ উচ্চ বিদ্যাপীঠে ‘মানবতাবিরোধী নিষিদ্ধ ও অন্ধকার জগতের’ সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার তীর্থস্থানে পরিণত করা হয়েছে।
“টাঙ্গুয়ার হাওরে জঙ্গি আস্তানায় গোপন মিটিং, শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল মেইলে জঙ্গিবাদের প্রচারণা, ক্যাম্পাসে কিউআর কোডের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালানো, বিশ্ববিদ্যালয় পরিমণ্ডল এ শ্রেণিকক্ষে মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড বুয়েটকে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে পশ্চাৎদিকে ধাবিত করছে।”
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালায়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে আবার বিক্ষোভে নামে সেখানকার শিক্ষার্থীরা; তারা ছয়জনকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানায়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বুয়েটের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের আবাসিক হলের সিট বাতিল করে। ওই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
এ সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী বলে মনে করছে ছাত্রলীগ বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে।
এতে বলা হয়, রাহিমের আবাসিক হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল ঘোষণার সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকামী মানুষ ও ছাত্রসমাজ চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
“বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বুয়েট প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে একটি অন্যায্য, অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ও সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নৈতিক স্খলনজনিত শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।”
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক দাবি করা হয়।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক বছরে বুয়েটের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও মর্মান্তিক মৃত্যু এদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে, ব্যথিত করেছে। এই ঘটনায় জড়িতদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহু বছর ধরে সন্ত্রাসজনিত কারণে বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ অকালে ঝরে গেছে।
“এমতাবস্থায়, বুয়েট প্রশাসন, শিক্ষকমণ্ডলি ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আহ্বান জানাচ্ছে, একটি অন্যায়ের প্রতিকার হিসেবে আপনারা ধারাবাহিক অসংখ্য অন্যায় ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত হবেন না।”
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আবার অস্থিরতা তৈরির মধ্যে শনিবার শিক্ষামন্ত্রী সব পক্ষকে ‘বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়’ সেদিকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন।
এ ক্যাম্পাসে জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদী কার্যক্রমের তৎপরতা চালানো হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার তাগিদও দেন তিনি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে বলেও ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের দিনে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীও ক্যাম্পাসে ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের’ সক্রিয়তা থাকার বিষয়ে কথা বলেন।
তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘আবেগকে' ব্যবহার করে ‘হিযবুত তাহরীর, ছাত্রশিবিরের মত নিষিদ্ধ সংগঠন' স্বার্থ হাসিল করছে বলে অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন...
বুয়েটে জঙ্গিবাদীরা তৎপরতা চালাচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী
'বুয়েটে হিজবুত তাহরির, ছাত্রশিবির স্বার্থ হাসিল করছে'
নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব, তবে সময় লাগবে: বুয়েট উপাচার্য
বিক্ষুব্ধ বুয়েট, ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি