জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদী কার্যক্রমের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে, বলেন তিনি।
Published : 30 Mar 2024, 08:18 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কোনো জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতা চালানো হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
উচ্চতর প্রকৌশল শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আবার অস্থিরতা তৈরির মধ্যে শনিবার শিক্ষামন্ত্রী সব পক্ষকে ‘বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়’ সেদিকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন।
জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদী কার্যক্রমের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে বলেও ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালায়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে আবার বিক্ষোভে নামে সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
'বুয়েটে হিজবুত তাহরির, ছাত্রশিবির স্বার্থ হাসিল করছে'
এর পেছনে উগ্রবাদী কোনো গোষ্ঠীর উস্কানি থাকতে পারে বলে শনিবার এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এদিন রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা কিছুদিন আগেও দেখতে পেয়েছি অনেকে অভিযোগ করেছিলেন যে, কিছু জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীও গোপনে সেখানে কার্যক্রম করার একটা আলোচনা-সমালোচনা ছিল। সেটা নিয়েও আমরা গভীরভাবে তদন্ত করব।”
নওফেল বলেন, “ব্যক্তিপর্যায়ে এমন কেউ যদি এমন মানসিকতা রাখে যে সেটা মনে হয় যেন মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতন কার্যক্রম হচ্ছে, সেটা অবশ্যই বন্ধ এবং প্রতিহত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, আমাদের তদন্ত যারা করছে, জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে কাউন্টার টেররিজমের বিশেষ টিম আছে, তারাও কাজ করবে। সেটা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, সব প্রতিষ্ঠানে।
“পেছন থেকে কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, পেছন থেকে জঙ্গিবাদী মানসিকতার-উগ্রবাদী মানসিকতার কেউ কি ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এই আলোচনাটা বারবার আসছে।”
শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের দিনে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীও ক্যাম্পাসে ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের’ সক্রিয়তা থাকার বিষয়ে কথা বলেন।
তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘আবেগকে' ব্যবহার করে ‘হিযবুত তাহরীর, ছাত্রশিবিরের মত নিষিদ্ধ সংগঠন' স্বার্থ হাসিল করছে বলে অভিযোগ করেন।
বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের আরও অভিযোগ, “বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে আমাদের পক্ষে কেউ নিজের কোনো মতামত রাখতে গেলে তাকেও বুলিং এবং নানা ধরনের হুমকির শিকার হতে হয় এবং আমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক কিংবা পরিচয় ছিলো বিধায় অনেককেই কটাক্ষের স্বীকার হতে হয়। আহসানউল্লাহ হলের নর্থের আবাসিক ছাত্র হওয়ার জন্যও বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, যা বুয়েটের একমাত্র মাইনরিটি রেসিডেন্স।
“এরপর থেকে যে কারোরই পারিবারিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হলেই তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে থাকা হয়। এমনকি পরিবারকে নিয়েও অশালীন মন্তব্য করা হয় অনলাইন ও অফলাইনে।"
তারা দাবি করেন, সংবাদ সম্মেলনে আরও ২০-২৫ জন উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ‘বুলিংয়ের' ভয়ে তারা অংশ নেননি।
একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ‘বুলিংয়ের' কিছু স্ক্রিনশট সাংবাদিকদের দেখান।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা বুয়েটে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকের প্রবেশের ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
শিক্ষার্থীরা শনিবার দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছেন।
উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার, করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মবহির্ভূতভাবে একজনকে বহিষ্কার করলে সেটা আদালতে টিকবে না। নিয়মের মধ্যে সবকিছু করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু রোজার মাস, সময় একটু বেশি দেওয়া উচিত ছিল।”