“এভাবে শাস্তি দেওয়া হলে আদালতে গিয়েও টিকবে না। ফলে তদন্ত লাগবে এবং তদন্তে অভিযুক্তকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে,” বলেন উপাচার্য।
Published : 30 Mar 2024, 03:59 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে ‘সহমত পোষণ’ করে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।
তিনি বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার, করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মবহির্ভূতভাবে একজনকে বহিষ্কার করলে সেটা আদালতে টিকবে না। নিয়মের মধ্যে সবকিছু করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু রোজার মাস, সময় একটু বেশি দেওয়া উচিত ছিল।”
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা বুয়েটে বুধবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকের প্রবেশের ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা শনিবার দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছেন।
এসব দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের প্রসঙ্গে শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপাচার্য।
ওই ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, “আজকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এর সদস্যদের মতামতও আমরা শুনব।”
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম ঘটান।
পরে শুক্রবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইমতিয়াজসহ আরো পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “ইমতিয়াজকে হল থেকে বহিষ্কার আমরা করতে পারি। কিন্তু টার্ম বহিষ্কার শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক ডেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করতে হবে। শৃঙ্খলা কমিটির সভার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া শৃঙ্খলা কমিটি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
“এভাবে শাস্তি দেওয়া হলে আদালতে গিয়েও টিকবে না। ফলে তদন্ত লাগবে এবং তদন্তে অভিযুক্তকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে।”
ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশের প্রতিবাদে ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল বর্জনসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “আমরা পরীক্ষা স্থগিত করিনি। তারা (শিক্ষার্থী) বর্জন করেছেন। তারা পরীক্ষা স্থগিতের আবেদনও করেননি। তারা আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করতাম। তারা এখানে ভুল করেছেন। পরীক্ষা হয়েছে, কিন্তু তারা পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন।
“নিয়ম অনুযায়ী ঘণ্টা বাজবে, ছাত্ররা আসুক না আসুক- এমন ঘটনা বুয়েটে আগেও ঘটেছে। পরে তারা পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে একাডেমিক কাউন্সিল বিবেচনা করতে পারে।”
এদিকে অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে ঘটনায় ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পদত্যাগের যে দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা, সেই প্রসঙ্গে উপাচার্য সত্য প্রসাদ বলেন, “ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের বিষয়ে এখন আমরা চিন্তা করছি না। কারণ, এটা নরমাল একটা প্রসিডিউর। নিয়ম অনুযায়ী যখন হওয়ার হবে। ডিএসডব্লিউ বলেছেন, তার পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি ছিল না। শিক্ষার্থীরা দাবি করতেই পারেন। কিন্তু দাবির মুখে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। সময় হলে আমরা নতুন ডিএসডব্লিউ নিয়োগ দেব।”
মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিস দেব যে, কেন তিনি ঢুকতে দিলেন। তার তো ঢুকতে দেওয়া উচিত হয়নি।
“গভীর রাতে কেউ (ক্যাম্পাসে) ঢুকলে এটা অবশ্যই অমানবিক বা অনিয়মতান্ত্রিক। কে ঢুকেছে, তাকে তো আগে চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত না করে তো শাস্তি দেওয়া যাবে না। তার জন্য সময় প্রয়োজন। যদি কোনো নিরাপত্তারক্ষী বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢুকতে দিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।”