অতিরিক্ত শরণার্থীর চাপ তারা আর বহন করতে পারছে না বলে ইসলামাবাদ জানিয়েছে।
Published : 20 Apr 2025, 02:41 PM
পাকিস্তান চলতি মাসে ১৯ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি আফগানকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। ৩০ এপ্রিল সময়সীমার আগেই ৮০ হাজারের বেশি আফগান পাকিস্তান ছেড়েছে, এরাও তাদের মধ্যে আছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
নথিবিহীন আফগান ও যাদের অবস্থান করার অস্থায়ী অনুমতি ছিল, তাদের বহিষ্কার করার পদক্ষেপ জোরদার করেছে পাকিস্তান। অতিরিক্ত শরণার্থীর চাপ তারা আর বহন করতে পারছে না বলে ইসলামাবাদ জানিয়েছে।
তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবারকে ফেরত পাঠাচ্ছে পাকিস্তান। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ২০ লাখ আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার কাবুল যান। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির কান মুত্তাকি শরণার্থী আফগানদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৩৫ লাখেরও বেশি আফগান বসবাস করছেন। এদের মধ্যে প্রায় সাত লাখ ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশত্যাগ করে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এদের অর্ধেক নথিবিহীন।
দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধ চলাকালে এসব আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু দেশটির সরকার বলছে, বিপুল সংখ্যক শরণার্থী তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছে এবং তাদের কারণে সরকারি পরিষেবার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
সম্প্রতি সীমান্তে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব সংঘাতের জন্য পাকিস্তান আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গিদের দায়ী করেছে, কিন্তু তালেবান অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাবুলে শনিবারের বৈঠকে দুই পক্ষ ‘পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে আলোচনা’ করেছে।
পাকিস্তান নথিবিহীন আফগানদের দেশটি ছাড়ার সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল করেছে।
বহিস্কৃত কিছু আফগান তোরখাম সীমান্ত ক্রসিংয়ে বিবিসিকে বলেছেন, তারা কয়েক দশক আগে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন, আবার কেউ কেউ আফগানিস্তানে কখনো বসবাসই করেননি।
পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া ও বড় হওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের শরণার্থী সাঈদ রহমান বলেন, “আমি আমার পুরো জীবন পাকিস্তানে কাটিয়েছি। সেখানেই বিয়ে করেছি। আমার এখন কী করা উচিত?”
তিন কন্যার পিতা সালেহ তালেবান শাসনের অধীনে তাদের জীবন কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার কন্যারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের স্কুলে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু আফগানিস্তানে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে।
সালেহ বলেন, “আমি চাই আমার সন্তানরা লেখাপড়া করুক। আমি চাই না তাদের স্কুলের বছরগুলো নষ্ট হোক। শিক্ষা পাওয়ার অধিকার সবার আছে।”
বিবিসিকে আরেক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের সন্তানরা কখনো আফগানিস্তান দেখেনি আর এখন সেটি দেখতে কেমন আমি নিজেও জানি না। সেখানে কাজ পেতে ও খাপ খাওয়াতে আমাদের এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।”
সীমান্তে নারী ও পুরুষদের পৃথক গেইট দিয়ে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সশস্ত্র পাকিস্তানি ও আফগান রক্ষীরা তাদের দিকে কড়া নজর রাখছেন।