ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
Published : 29 Mar 2024, 10:59 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক শিক্ষার্থীর সিট বাতিলসহ তিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “২৮ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে: ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম (স্টুডেন্ট নং ২১০৪১৪১)-এর হলের সিট বাতিল করা হলো। ২. এছাড়া সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক সুপারিশ প্রদান করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর টার্ম/সেমিস্টার ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।”
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। তবে বৃহস্পতিবার গভীররাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন-
· বুধবার রাতের রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের আসন বাতিল করতে হবে।
· ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের সঙ্গে বুয়েটের আরও যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে টার্ম ও হল থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
· যেসব বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না ও তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, সে ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের সুস্পষ্ট সদুত্তর ও জবাবদিহি করতে হবে।
· প্রথম দুটি দাবি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ডিএসডব্লিউকে পদত্যাগ করতে হবে।
· আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ‘হয়রানিমূলক’ ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
বুয়েটে গভীররাতে ছাত্রলীগের প্রবেশ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
হলের সিট বাতিল হওয়া ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছিল। তবে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য আসেননি। আমি যেহেতু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদে আছি, সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) আন্দোলন করছে।
“কিন্তু আমি বলতে চাই, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। রাজনীতি করা আমার মৌলিক অধিকার।”
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক থাকে। আমি পলাশী দিয়ে হেঁটে বুয়েটের শহীদ মিনারে গিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
“এটা সাধারণ একটা বিষয়, এটাকে রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার কোনো বিষয় না। বরং এটাকে যারা রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা কোন রাজনীতি করছে- সেটা কিন্তু আমরা জানি। বিরাজনীতির কথা বলে আজকে সেখানে অন্ধকার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।”