“রাজনীতি করার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ছাত্রলীগ বসে থাকবে না,” বলেন সাদ্দাম হোসেন।
Published : 29 Mar 2024, 08:36 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে কর্মী বহর নিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চ টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
এসময় তারা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘পলিটিক্সে যুক্ত যারা, হল থেকে করব ছাড়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার গভীররাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে তারা নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি এ সমাগম ঘটান বলে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের তরফে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “রাত সাড়ে ১০টার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই, সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই বুয়েট ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে। শুধু তারাই নয়, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আসতে থাকে। রাত ২টার পর মিছিলের মত করে বিশাল একটি বহর ফুলের তোড়া নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। সেই জনবহরের সবাই বহিরাগত ছিল এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল।”
সম্মেলনে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সঙ্গে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক শিক্ষাপরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোভাবেই এই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না৷”
সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন-
বুধবার রাতের রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের আসন বাতিল করতে হবে।
ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের আরও যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে টার্ম ও হল থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
যেসব বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না ও তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, সে ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের সুস্পষ্ট সদুত্তর ও জবাবদিহি করতে হবে।
প্রথম দুটি দাবি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ডিএসডব্লিউকে পদত্যাগ করতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ‘হয়রানিমূলক’ ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
জানতে চাইলে ইমতিয়াজ রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছিল। তবে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য আসেননি। আমি যেহেতু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদে আছি, সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) আন্দোলন করছে।
“কিন্তু আমি বলতে চাই, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। রাজনীতি করা আমার মৌলিক অধিকার।”
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক থাকে। আমি পলাশী দিয়ে হেঁটে বুয়েটের শহীদ মিনারে গিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
“এটা সাধারণ একটা বিষয়, এটাকে রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার কোনো বিষয় না। বরং এটাকে যারা রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা কোন রাজনীতি করছে- সেটা কিন্তু আমরা জানি। বিরাজনীতির কথা বলে আজকে সেখানে অন্ধকার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম বলেন, রাজনীতি করার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ছাত্রলীগ বসে থাকবে না।
“একজন শিক্ষার্থীও যদি অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনে থাকার কারো অধিকার নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলার কারণে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলির কারণে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হয়েছে সেখানে। আমরা ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এ বিষয়ে জানতে বুয়েটের ডিএসডব্লিও অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।