ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এবং আরো পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ছয়টি দাবি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা।
Published : 30 Mar 2024, 01:13 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারে সামনে জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ করেন; এরপর বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এসে দাবি দাওয়া তুলে ধরেন।
নতুন করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগমের ঘটনায় পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। তবে ইমতিয়াজসহ আরো পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। তবে গত বৃহস্পতিবার গভীররাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (স্টুডেন্ট নং ২১০৪১৪১) হলের সিট বাতিল করা হয়।
শনিবার শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের একাংশের নাম-পরিচয় ও ছবি ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। ইমতিয়াজের মতই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় তাদের সকলকে স্থায়ীভাবে একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
“এর বাইরে বাকি আরো যারা জড়িত, যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারিনি, তাদের সকলকেই যেন বুয়েট প্রশাসন অনতিবিলম্বে শনাক্ত করে এবং উল্লিখিত অভিযুক্তদের মতই একই মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা করে।”
অন্য দাবিগুলো হল-
>> শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমকে একাডেমিকভাবে স্থায়ী বহিষ্কার করা।
>> বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বুয়েট প্রশাসনের লিখিত নোটিশ ও শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করা।
>> শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ‘রাত সাড়ে ১০টার পরে ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ’ এবং যেকোন প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ওই সময়ের বেশি ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে গেলে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের (ডিএসডাব্লিও) অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।
(ক) এক্ষেত্রে যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে ডিএসডাব্লিওর প্রটোকল ভেঙে তারা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করেছে। এক্ষেত্রে ডিএসডাব্লিও নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ।
(খ) আর যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়া ‘বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ ঘোষণার লঙ্ঘন করেছেন ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান।
(গ) ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাব্লিউ আওতাধীন। অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মত ধৃষ্টতামূলক আচরণ ডিএসডাব্লিউ এর দায়িত্বপালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ ছাত্রকল্যাণ দপ্তর পরিচালক মিজানুর রহমানের দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগের দাবি করছে শিক্ষার্থীরা।
>> ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদে ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল বর্জনসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছে শিক্ষার্থীরা।
>> আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই প্রশাসনের মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “গতকাল আমাদের আন্দোলনের পর তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিবর্গকে ফেসবুকে পোস্ট করে আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে দেখি। আমরা তাদের এমন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। আমরা সবসময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা ‘বুয়েটে সকল রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’- এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যেকোন মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর।
“আমরা আবারো সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এসকল দাবি কেবল কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়; বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সকল রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।”
সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্মসূচি শেষ করেন। দাবি না মানলে রোববার সকাল থেকে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন-