ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ভিন্ন দুই ম্যাচে শতরানের স্বাদ পেয়েছেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
Published : 20 Apr 2025, 08:12 PM
শরিফুল ইসলামের বলটা লেগ সাইড দিয়ে উড়িয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতেই ক্রিজের মধ্যে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন এনামুল হক। পরে সতীর্থ সালমান হোসেনের হাঁটুর ওপর সিংহাসনে বসার মতো করে বসলেন। এক হাত আকাশের দিকে উঁচিয়ে ধরে যেন বোঝাতে চাইলেন, ‘আমি রাজা।’
অবশ্য এনামুলকে দেশের ক্রিকেটে সেঞ্চুরির ‘রাজা’ বললে ভুল হবে না। ওই ছক্কায় স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের পঞ্চাশতম শতক স্পর্শ করেন তিনি। এই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি বাংলাদেশের আর কেউ।
৪৬ সেঞ্চুরি নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নাঈম ইসলাম। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ৪৫টি। পরের জায়গাগুলোয় যথাক্রমে ইমরুল কায়েস (৩৪), মুমিনুল হক (৩৩), মোহাম্মদ আশরাফুল (৩৩) ও তুষার ইমরান (৩৩)।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রোববার এনামুলের অনন্য কীর্তি গড়া ইনিংসে সুপার লিগের লড়াইয়ে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৭ উইকেটে হারায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ১ ছক্কা ও ১০ চারে ১১০ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন অধিনায়ক এনামুল।
দিনের আরেক ম্যাচে ঝড়ো সেঞ্চুরি উপহার দেন রনি তালুকদার। তার ৫ ছক্কা ও ১০ চারে সাজানো ১০০ বলে ১২২ রানের ইনিংসের সুবাদে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৭ উইকেটে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
এনামুলের সেঞ্চুরি
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে বৃষ্টিতে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ২২৩ রানে গুটিয়ে যায় রূপগঞ্জ। ১২ বল বাকি থাকতেই এই রান তাড়া করে ফেলে গাজী গ্রুপ।
সাইফ হাসান ও তানজিদ হাসানের ১০১ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালোই হয় রূপগঞ্জের। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৫২ রান করেন সাইফ। ৫৩ বলে ৬৮ রান করতে ৩ ছক্কা ও ৬টি চার মারেন তানজিদ।
সৌম্য সরকার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। আকবর আলি (দুটি করে ছক্কা-চারে ২৯), আফিফ হোসেনও (একটি করে ছক্কা-চারে ৩২) খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যান তো দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি।
অফ স্পিনে চমৎকার বোলিংয়ে ৩৬ রান ৫ উইকেট নেন গাজী গ্রুপের শেখ পারভেজ হোসেন জীবন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তো বটেই, স্বীকৃত ক্রিকেটেই প্রথমবার তিনি পেলেন পাঁচ উইকেটের স্বাদ।
রান তাড়ায় গাজী গ্রুপের শুরুটাও খারাপ ছিল না। সাদিকুর রহমানের সঙ্গে ৮১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন এনামুল। ২ চারে ৩৬ রান করা সাদিকুরের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শামসুর রহমান, সাব্বির হোসেনও।
একপ্রান্ত ধরে রেখে নিজের মতো খেলে যান এনামুল। ঠিক ১০০ বলে লিস্ট ‘এ’ তে ২৩তম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি। চলতি ঢাকা লিগে এটি তার তৃতীয় শতক, তিনটিতেই অপরাজিত। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ১৪৯ রানের পর গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১৪৪ রান করেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
এনামুলকে দারুণ সঙ্গ দেন সালমান। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রানে জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গাজী গ্রুপ। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৪ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সালমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৩৯.২ ওভারে ২২৩ (সাইফ ৫২, তানজিদ ৬৮, সৌম্য ৪, আকবর ২৯, আফিফ ৩২, মারুফ ১৭, রিজওয়ান ৩, মেহেদি ৮, তানভির ৩, শরিফুল ০, টিপু ০; লিয়ন ৮-১-৩৬-১, আব্দুল গাফফার ৮.২-০-৪১-১, জীবন ৭-০-৩৬-৫, হাসিম ৪-০-৩১-১, ওয়াসি ৭-০-৬২-২, তোফায়েল ৫-১-১৭-০)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪১ ওভারে ২২৪/৩ (সাদিকুর ৩৬, এনামুল ১১০*, শামসুর ১৭, সাব্বির ১৮, সালমান ৩৮*; শরিফুল ৭-০-৪৩-০, তানভির ৯-০-৩৫-০, মেহেদি ৯-০-৫৭-২, টিপু ৯-০-৪৪-০, সাইফ ২-০-১৫-০, সৌম্য ৪-০-২০-১, রিজওয়ান ১-০-৯-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক
রনি তালুকদারের ১২২
বৃষ্টিতে ৪২ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ২৪০ রান করে অগ্রণী ব্যাংক। রনির চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৩৫ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মোহামেডান।
বিকেসপির তিন নম্বর মাঠে অগ্রণী ব্যাংকের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই পান ভালো শুরু। কিন্ত ইমরানুজ্জামান (৫ চারে ৩৮), অমিত হাসান (৩ চারে ৪০), ইমরুল কায়েস (৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪১) ও মার্শাল আইয়ুবদের (১ চারে ৩৫) কেউই পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি।
পরে নামা ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল দুইজন স্পর্শ করতে পারেন দুই অঙ্ক। তাতে মাঝারি পুঁজি নিয়ে মাঠ ছাড়ে অগ্রণী।
মোহামেডানের হয়ে দারুণ বোলিংয়ে ৪৭ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন সাইফ উদ্দিন। ইবাদত হোসেনের প্রাপ্তি ৪০ রানে তিনটি। মুস্তাফিজুর রহমান ধরেন ২ শিকার, ৫৩ রানে।
রান তাড়ায় রনি তালুকদার ও আনিসুল ইসলামের উদ্বোধনী জুটিতেই জয়ের ভিত গড়ে ফেলে মোহামেডান। তাদের দুইজনের ১৯৯ রানের যুগলবন্দিতে ফাটল ধরে রনি আহত অবসর হয়ে মাঠ ছাড়ায়।
৯০ বলে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন রনি। শতকের পর আরও কয়েক ওভার ব্যাটিং করেন তিনি। কিন্তু ৩০তম ওভারের পর আর খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি পায়ে টান লাগায়।
এক ওভার পর আনিসুল বিদায় নেন ১ ছক্কা ও ৬ চারে ৭৫ রানের ইনিংস খেলে। মুখোমুখি তৃতীয় বলে জীবন পাওয়া মাহমুদউল্লাহ এক ছক্কায় ৭ রান করে ফেরেন। ৩ ছক্কায় ২২ বলে ২৭ রান করেন তৌফিক খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪২ ওভারে ২৪০/৯ (ইমরানুজ্জামান ৩৮, অমিত ৪০, ইমরুল ৪১, মার্শাল ৩৫, তাইবুর ০, জাহিদ ২১, শুভাগত ৬, রবিউল ১২, মেহেদি রানা ৫*, রাইহান ৯, আরিফ ০*; ইবাদত ৮-০-৪০-৩, নাসুম ৭-০-৩৯-০, মুস্তাফিজ ৯-০-৫৩-২, নাবিল ৪-০-২৩-০, সাইফ ৯-০-৪৭-৪, মাহমুদউল্লাহ ৫-০-২৫-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৩৬.১ ওভারে ২৪১/৩ (রনি ১২২, আনিসুল ৭৫, মাহমুদউল্লাহ ৭, তৌফিক ২৭, সাইফ ৫*, হৃদয় ২*; রবিউল ৭-০-৩৮-০, মেহেদি রানা ৪-০-৩৭-০, তাইবুর ৭-০-৪২-০, আরিফ ৮-০-৪৪-৩, জাহিদ ৪-০-২৪-০, রাইহান ৪-০-২৯-০, শুভাগত ২.১-০-২৬-০)
ফলাফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার
মিরপুরে আবাহনীর জয়
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে লিগের অন্য ম্যাচে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে ৫০ রানে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। ২৭৮ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে ২২৮ রানে থামিয়ে দিয়েছে তারা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আবাহনীকে ভালো শুরু এনে দেন পারভেজ হোসেন। জিশান আলম, মোহাম্মদ মিঠুনদের সঙ্গে কার্যকর জুটিতে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন এই ওপেনার।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৪টি ছক্কা ও ৮টি চারে ৭০ বলে ৮৩ রান করেন পারভেজ। জিশান ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৬ এবং মিঠুন সমান বাউন্ডারিতে করেন ৪৫ রান। শেষ দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া আবাহনীর বাকিরা যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কে।
রান তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় গুলশান। ২৫ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে কিছুক্ষণ টানেন সাকিব শাহরিয়ার ও শাহাদাত হোসেন। ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৪২ রান করে সাকিব। ৩৫ রান করতে শাহাদাত মারেন ২ ছক্কা ও ৩ চার।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝেই এক প্রান্ত ধরে রেখে লড়াই চালিয়ে যান নিহাদ-উজ-জামান। তার ৫ ছক্কা ও ৬ চারে গড়া ৭৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসেই মূলত দুইশ পার করে গুলশানের রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৪৯.৫ ওভারে ২৭৮ (শাহরিয়ার ২, পারভেজ ৮৩, জিশান ২৬, মিঠুন ৪৫, মেহেরব ১৬, মোসাদ্দেক ২০, শামসুল ১৪, মাহফুজুর ২২, মৃত্যুঞ্জয় ২৬, এনামুল ১, রাকিবুল ১*; মেহেদি ৫.৫-০-৩৫-০, রায়হান ৮-০-৪৩-৩, আসাদউজ্জামান ৮-০-৪৬-০, শাহাদাত ৬-০-৪৫-০, নাঈম ১-০-১১-০, নিহাদ ৮-০-৩২-২, ফরহাদ ১০-০-৩৯-৩, ইলিয়াস ৩-০-১৭-০)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২২৮ (আলিফ ১, ইলিয়াস ৫, সাকিব ৪২, খালিদ ০, নাঈম ১, শাহাদাত ৩৫, মেহেদি ২৫, নিহাদ ৮২*, ফরহাদ ১৭, আসাদউজ্জামান ৪, রায়হান ৫; এনামুল ৮-০-৪৩-১, মেহেরব ৪-০-১৩-২, মৃত্যুঞ্জয় ৮-১-৪৭-১, রাকিবুল ১০-২-১৭-২, মাহফুজুর ১০-১-৫৯-২, মোসাদ্দেক ১০-১-৪৫-২)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৫০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: পারভেজ হোসেন