আইপিএল
ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার এখন রাজস্থান রয়্যালসের বৈভাব সুরিয়াভানশি।
Published : 19 Apr 2025, 11:34 PM
আইপিএলের মেগা নিলামে আলোড়ন তোলা বৈভাব সুরিয়াভানশি এবার মাঠে নেমেই গড়লেন রেকর্ড। ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটার এখন তিনি। কিশোর বয়সে এমন অভিষেকের রোমাঞ্চ, ভয়, শঙ্কা, সব যেন উড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে। উপলক্ষ রাঙালেন প্রথম বলেই চোখধাঁধানো শটে ছক্কা মেরে!
জয়পুরে শনিবার লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলতে নেমে এই কীর্তি গড়েন সুরিয়াভানশি। আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলার দিন তার বয়স ১৪ বছর ২৩ দিন।
এই প্রতিযোগিতায় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকের রেকর্ডটি এতদিন ছিল প্রায়াস রায় বার্মানের। ২০১৯ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ১৬ বছর ১৫৭ দিন বয়সে আইপিএলে প্রথম খেলতে নামেন ভারতীয় লেগ স্পিনার।
তালিকায় পরের চার স্থানে আছেন-আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান (১৭ বছর ১১ দিন), ভারতের রিয়ান পারাগ (১৭ বছর ১৫২ দিন), প্রাদিপ সাংওয়ান (১৭ বছর ১৭৯ দিন) ও সারফারাজ খান (১৭ বছর ১৮২ দিন)।
সতীর্থের দুর্ভাগ্যে লাক্ষ্ণৌয়ের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান সুরিয়াভানশি। চোটের জন্য বাইরে আছেন রাজস্থান অধিনায়ক ও ওপেনার সাঞ্জু স্যামসন। সান্দিপ শার্মার জায়গায় ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে সুরিয়াভানশিকে ওপেনিংয়ে নামায় দলটি।
১৮১ রান তাড়ায় রাজস্থানকে ভালো শুরু এনে দেন এই তরুণ। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে প্রথম স্ট্রাইক পান তিনি। প্রথম বলেই একটু জায়গা বানিয়ে উড়িয়ে দেন এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। শেষ নয় সেখানেই, প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২০ বলে খেলেন ৩৪ রানের ইনিংস। ইয়াশাসভি জায়সওয়ালের সঙ্গে গড়েন ৮৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
অল্প বয়সে ক্রিকেট মাঠে আলো ছড়িয়ে আলোচনায় উঠে আসা সুরিয়াভানশিকে নিয়ে গত নভেম্বরের মেগা নিলামে চলে টানাটানি। ৩০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দলে টানে রাজস্থান। গত আইপিএল নিলামের বড় চমকগুলোর একটি ছিলেন তিনি।
গত বছরের জানুয়ারিতে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে (রেকর্ডে থাকা আনুষ্ঠানিক বয়স হিসাবে)। রাঞ্জি ট্রফিতে বিহারের হয়ে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচে মাঠে নেমে প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হয়ে যান তিনি। পেছনে ফেলেন ইউভরাজ সিং ও সাচিন টেন্ডুলকারের মতো গ্রেটদের। ইউভরাজের রাঞ্জি অভিষেক হয়েছিল ১৫ বছর ৫৭ দিন বয়সে, আর ১৫ বছর ২৩০ দিন বয়সে টেন্ডুলকারের।
অভিষেকে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি সুরিয়াভানশি, দুই ইনিংসে করেন কেবল ১৯ ও ১২ রান। পরের ম্যাচে দুই ইনিংসেই আউট হন শূন্য রানে।
গত সেপ্টেম্বরে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে যুব টেস্টে ঝড়ো সেঞ্চুরি করে আলোড়ন তোলেন সুরিয়াভানশি। চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ বলে করেন ১০৪ রান।
ম্যাচটিতে ৫৮ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে যুব টেস্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের মইন আলির।
সেদিন আরেকটি রেকর্ডের পাতায়ও উঠে যায় সুরিয়াভানশির নাম। যুব ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানও হয়ে যান তিনি (১৩ বছর ১৮৭ দিন)। ভেঙে দেন বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪ বছর ২৪১ দিনে বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড, ২০১৩ সালে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে।
ট্রিপল সেঞ্চুরিও আছে সুরিয়াভানশির নামের পাশে। বিহারে অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে তিনি অপরাজিত ৩৩২ রানের ইনিংস খেলেন স্রেফ ১৭৮ বলে। যেখানে ৪৮ চারের পাশে ছক্কা ছিল ১৫টি।
স্বীকৃতি ক্রিকেটে এখনও বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেননি সুরিয়াভানশি। এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণিতে ৫ ম্যাচ খেলে তার রান কেবল ১০০। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৬ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৩২ রান, নামের পাশে ফিফটি একটি। আর টি-টোয়েন্টিতে এনিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেললেন তিনি।