নয় বছর আগে করা নীতিমালায় সরকারের দায়িত্ব হিসেবে যা বলা আছে, তার কিছুই করা হয়নি। চালু হয়নি হেল্পলাইন নম্বর, হয়নি মনিটরিং সেল।
Published : 05 Mar 2024, 01:11 AM
সংখ্যার দিক দিয়ে গৃহশ্রমিকরা পোশাক শ্রমিকদের চেয়ে কম কি না, সে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে আইনি সুরক্ষা আর অধিকারের প্রশ্নে এই বিপুল জনগোষ্ঠী যে তলানিতে, সে বিষয়ে নেই সন্দেহ।
বিপুল এই জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় ৯ বছর আগে একটি নীতিমালা করা হলেও আইন করার উদ্যোগ নেই। আবার নীতিমালায় যা যা করার কথা বলা আছে, তার কিছুই করেনি সরকার।
নিয়োগ, কর্মঘণ্টা, ছুটির বিষয়ে যা যা বলা আছে, তার কোনো কিছুর বাস্তবায়ন নেই। সরকারের যে মনিটরিং সেল, হেল্প লাইন, নীতিমালার প্রচারের কথা বলা আছে, করা হয়নি তার কিছুই।
যাদের জন্য এই নীতিমালা, তারাও জানে না তাদের কী কী অধিকার আছে, যারা গৃহ শ্রমিকদের নিয়োগ দেবেন, জানেন না তারাও।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল আলাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২৩ শ্রম আইন সংশোধন করা হয়। কিন্তু গৃহশ্রমিকদের আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদের যেহেতু শ্রমিকের মর্যাদা নেই, তাই এমন কোনো সুবিধাই তারা পাচ্ছেন না। নীতিমালা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নয়, দরকার আইন।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বা বিলসের উপপরিচালক ইউসুফ আল মামুন বলেন, “দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী পরিশ্রম করলেও শ্রমিক হিসেবেই গণ্য হচ্ছেন না। ফলে তাদের বেতন ও অধিকার রক্ষায়ও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।”
শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তরিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, " আমি দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র এক মাস আগে। তাই নীতিমালাটি নিয়ে বেশি কিছু জানি না।”
তাহলে এই শ্রমিকদের কী হবে- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “২০১৫ সালে যেহেতু নীতিমালা হয়েছে এবং সরকারের চেষ্টা আছে, এটি দ্রুতই আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। কাজের অগ্রগতি আমার কাছে ইতিবাচকই মনে হচ্ছে।"
গৃহকর্মীর সংখ্যা কত
গৃহকর্মী নিবন্ধনের ব্যবস্থা না থাকায় সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই কোথাও। তবে কিছু কিছু প্রতিবেদনে কিছু ধারণা পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে।
অর্ধযুগের বেশি সময় আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপের জানানো হয়, দেশে গৃহকর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এদের ৯০ শতাংশই নারী।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) ২০২১ সালে গৃহশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ বিষয়ক গবেষণায় বলেছে, সংখ্যাটি ২০ লাখের বেশি।
তবে এর পরের বছর পর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখ, যাদের ৮০ শতাংশ নারী।
যদি অক্সফামের এই তথ্যটি সঠিক হয়, তাহলে পোশাক শিল্প খাতের চেয়ে বেশি শ্রমিক এই পেশায় জড়িত।
গৃহকর্মী নিবন্ধনের আইন করা হয় সেই ১৯৬১ সালে। বাসায় কাজ করা কর্মীদের নাম কাছাকাছি থানায় নিবন্ধনের কথা আছে সেখানে। সেটি করা হয় না বলে তাদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায় না।
দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) নামে একটি সংগঠনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদিও ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরমে গৃহকর্মীদের তথ্য চাওয়া হয়, কিন্তু তা মানার তাগিদ নেই। সরকারের তরফ থেকেও বাধ্যতামূলকভাবে তথ্য চাওয়া হয় না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই দেশে গৃহকর্মীদের নিবন্ধন বলতে কিছু নেই।”
গৃহশ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে একটি প্রকল্পের দেখভাল করেন মাহবুবুর। তিনি বলেন, “গৃহকর্মীদের মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে, একটি আবাসিক ও অন্যটি অনাবাসিক। আবাসিক গৃহকর্মীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু, অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে। নিয়োগকারীরা অল্প টাকার বিনিময়ে এই শিশুদের নিয়োগ দেন।”
সেই ফেরদৌসীকে নিয়ে এখন দিশেহারা পরিবার, প্রয়োজন ভালো চিকিৎসা
এভাবে কি গরিবের মেয়েকে ফালানো লাগে: প্রীতির মা
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রী ৪ দিনের রিমান্ডে
২০২৩ সালে প্রকাশ পাওয়া বিলসের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। এদের মাসিক গড় আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা। পরিবারের খরচ এর দ্বিগুণের বেশি।
যারা ২৪ ঘণ্টা ঘরে থাকেন, তাদের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই, দিনে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টাও কাজ করেন। নীতিমালায় বলা ছুটির সুবিধা পান না তারা।
৮৭ শতাংশের কোনো ধরনের সাপ্তাহিক ছুটি নেই। অসুস্থতার জন্য ছুটি পান অল্প সংখ্যক মানুষ। মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পান মাত্র ৭ শতাংশ।
যা যা করার কথা ছিল
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যেসব দেশে গৃহশ্রমিকদের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি হয়েছে সে তালিকায় বাংলাদেশই প্রথম। এই নীতিমালায় যে ১৬টি বিধানের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গৃহকর্মীরা সবেতনে ১৬ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন, নিয়োগকারী তাকে কোনোভাবেই শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিতে পারবেন না। ১৪ বছর পূর্ণ করেছে তবে ১৮ বছরের কম এমন কিশোর/কিশোরীকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখা যাবে।
হালকা কাজের জন্য ১২ বছরের শিশুকেও নিয়োগ দেওয়া যাবে। তবে তাদের নিয়োগের আগে আইনানুগ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে।
মৌখিক চুক্তিতে কর্মী নিয়োগ করা যাবে, তবে সেই বেতনের আলোচনায় তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির কথা বলা আছে নীতিমালায়।
প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যাতে তিনি পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান। তার ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের দায়িত্ব কাগজে কলমে
নীতিমালায় বলা আছে, এটির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল থাকবে।
সিটি করপোরেশনে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিটি করপোরেশন এলাকা বাদে সব জেলা ও উপজেলায় যথাক্রমে ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনওকে সভাপতি করে এই সেল গঠন করার কথা।
এই নীতির বাস্তবায়নে এবং নীতির ব্যত্যয় ঘটলে সেই সেলের পরিদর্শন করার কথা। পরিদর্শন টিমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা।
পরিদর্শন দল গৃহকর্মীকে নির্যাতনের বা অমানবিক আচরণের বিষয়ে মনিটরিং সেল বা ডিসি বা ইউএনও বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেবে।
সময় সময় দৈবচয়নের মাধ্যমে গৃহকর্মীর প্রকৃত অবস্থাও সরেজমিন পরিদর্শন করার কথা বলা আছে নীতিমালায়। তবে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নিয়োগকারীর ব্যক্তিগত বা পারিবারিক গোপনীয়তা যেন বিঘ্নিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল আলাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি মাত্র সেল গঠন করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তগুলোও তেমনভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিভিন্ন বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তাব দেওয়া হলেও কাজ হচ্ছে না। আর জেলা পর্যায়ে এই নিয়ে কোনো সেলই গঠন হয়নি।”
গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে মামলার খরচ সরকারের দেওয়ার কথা বলা আছে নীতিমালায়। গৃহকর্মীদের সহায়তার জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর করতে হবে- এই কথাটি আলাদা করে উল্লেখ আছে।
অক্সফামের কর্মসূচি সমন্বয়ক তারেক আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হেল্পলাইন নম্বর এত বছরেও চালু হয়নি। আমাদের গবেষণা বলছে, নীতিমালা বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত মাত্র সাতটি বৈঠক হয়েছে।
“২০১১ সালে বাংলাদেশের নেতৃত্বে আইএলও কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু আইএলও কনভেনশন-১৮৯ এখনও অনুসমর্থনই করেনি বাংলাদেশ। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের উপর তেমন চাপ নেই, কারণ বাংলাদেশ কেবল স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে ফিলিপিন্স এটি অনুসমর্থন এবং বাস্তবায়ন করেছে।”
সরকারের দায়িত্ব হিসেবে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রচারে সহায়তা, এফ এম রেডিও, মোবাইল মেসেজ, পোস্টারিং, লিফলেট, বুকলেটের মাধ্যমে প্রচার এবং সভা-সেমিনার করার কথাও বলা আছে নীতিমালায়। সেগুলোও কাজীর গরুর মত, কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।
নির্যাতনের ‘বেশিরভাগই গোপন’
২০২৩ সালের প্রকাশিত বিলসের গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহকর্মীদের ৬৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, ৬১ শতাংশ মৌখিক এবং ২১ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের উপর নির্ভর করে চালানো ওই গবেষণায় দেখা যায়, ২০২১ সালে ৩৮ জন গৃহকর্মী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। মৃত্যু হয় ১২ জনের। তাদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যার লক্ষণ স্পষ্ট, ৮ জনের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত ছিল না।
আহত ২৪ জনের মধ্যে ১৫ জনকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, ৫ জনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, ১ জনকে ধর্ষণ ও ১ জনকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল।
২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৬২৯ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতন ও প্রাণহানির শিকার হওয়ার তথ্য এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
তবে বিলসের গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী নির্যাতনের পর কারো কাছে অভিযোগ করেননি। তাদের কাছে এগুলো ‘নিয়মিত ঘটনা’, আর তারা এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন না।
মামলা হলেও বিচার হয় কি?
গৃহশ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলোর আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান সাধারণত থাকে তলানিতে। রাজধানী বা বড় শহরে তারা তৃণমূল পর্যায় থেকে। নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুর পর কোনো পরিবার মামলা করলেও আইনি লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত অবস্থায় তারা থাকেন না।
অল্প কিছু টাকা পয়সা দিয়ে মামলা মীমাংসা হয়ে যায় বহু ক্ষেত্রে। আর তদন্তও নিরপেক্ষভাবে হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার গৃহকর্মী ফেরদৌসী ২০২৩ সালের ৬ অগাস্ট অষ্টম তলা থেকে ‘পালাতে গিয়ে’ পড়ে আহত হওয়ার পর মামলা হলেও আইনি লড়াই থেকে এক পর্যায়ে ক্ষ্যান্ত দেয় পরিবারটি। দুই লাখ টাকায় ঘটনাটির মিটমাট করে ফেলে তারা।
আগেরটির বিচার হলে প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু হত না: চা শ্রমিক নেতা
একই বাসা থেকে পড়ে গিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রাণ হারায় প্রীতি উরাং নামে এক কিশোরী। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে সৈয়দ আশফাকুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার এখন আছেন কারাগারে।
দুই দশক আগের আলোড়ন তোলা আরেক মামলার উদাহরণ টানা যায়। ২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সকালে বিএনপি নেতা ও সে সময়ের নৌপরিবহন মন্ত্রী প্রয়াত আকবর হোসেনের গৃহকর্মী বিলকিস বেগমের জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের ছেলে শাহীনকেই পুলিশে দেন মন্ত্রী আকবর। রিমান্ডে নিয়ে চেষ্টা হয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার। তবে মাকে হত্যার অভিযোগে জবানবন্দি দিতে রাজি হননি শাহীন। পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মামলাটি সিআইডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার ৯ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল।
প্রায়ই গণমাধ্যমে নির্যাতন, নির্যাতনের পর হত্যা, ঝুলন্ত মরদেহ, বহুতল ভবন থেকে পড়ে মৃত্যু- এসব সংবাদ সংবাদমাধ্যমে আসতে থাকে। আলোড়ন তুললে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর গ্রেপ্তারের খবরও আসে। তবে সাজা হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে আসে না বললেই চলে।
শ্রমিক নেতাদের অভিজ্ঞতা কী
তানিয়া আক্তার গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছেন গত ১০ বছর ধরে। তার বয়স এখন ৩৫। থাকেন বাড্ডার বউ বাজার এলাকায়। তিনি ‘সুনীতি’ নামে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা, অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে পরিচালিত একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত এবং এ কারণে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি সম্পর্কে তার ভালো জানা আছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে এত বছরেও কাজের স্বীকৃতি না পাওয়ার বেদনার কথা বলছিলেন তানিয়া।
‘উপর থেকে পড়ে’ গৃহকর্মীর মৃত্যু, স্ত্রীসহ সাংবাদিক থানায়
আরেক গৃহকর্মী আহতের মামলায় অব্যাহতি সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রীর
তিনি বলেন, “আমার ছেলের পরীক্ষার সময় অনেক বলে কয়েও ছুটি পাই নাই। আমারে মালিক বলছিল, ‘ছুটি নিয়া ছেলেরে এমনকি-বা বানাবা? ছুটি দিলে ঘরের কাজ করব কে?’
“কষ্টে কান্নাকাটি করছি, তারপরেও সকালে আবার কাজে গেছি। আমার ছেলে ‘এ প্লাস’ পাইছে। আর ওই মালিকের মাইয়া পাসই করতে পারে নাই। নীতিমালা আমি জানলেও আমার মালিকেরা কিছুই জানে না, আর মানেও না।”
মর্জিনা আক্তারের বয়স ২৩। তিনিও সুনীতি পরিচালিত গৃহকর্মী আঞ্চলিক ফোরামের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ৪ বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন ঢাকায়। তার কর্মক্ষেত্র ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায়।
এই চার বছরের কাজের অভিজ্ঞতায় কোনো নিয়োগকারীকেই নীতিমালা মানতে দেখেননি বলে জানালেন মর্জিনা।
তিনি বলেন, “যেসব বাড়িতে কাজ করি তাদের সবাই অফিসে সাপ্তাহিক ছুটি পায়। ঈদে-চান্দে তো ছুটি আছেই। কিন্তু অসুস্থ হইলেও আমার কাজে যাইতে হয়। ছুটি নেওয়ায় আমার মাসের বেতন কাটছে অনেক মালিক। মোহাম্মদপুরের এক বাসায় ছুটি নিছিলাম বইলা আমারে থাপ্পড়ও দিছিল। অনেক মালিক আবার গালি দিয়া ঘরের বাড়তি কাজ করায় আর এর জন্য কোনো আলাদা টাকাও দেয় না।’’
অক্সফাম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ২০২১ সালে বিলস প্রকাশিত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি বাস্তবায়ন নিরীক্ষা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা বলছে, ১৪ শতাংশ গৃহশ্রমিক সরকারের ঘোষিত নীতি সম্পর্কে জানেন এবং নিয়োগকারীরা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
এই গবেষণাটিতে ঢাকা শহরের ২৮৭ জন গৃহশ্রমিক অংশ নিয়েছিলেন।
প্রীতির মৃত্যু: বিচার না পেলে ‘বৃহত্তর’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
৮ তলা থেকে পড়ে শিশু গৃহকর্মী আহত, গৃহকর্তা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা
নিয়োগকর্তারা কি এই নীতিমালা জানেন?
আব্দুল বাশার থাকেন পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজার এলাকায়। তিনি ও তার স্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বাসায় দুই জন গৃহকর্মী রেখেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় যে নীতিমালা রয়েছে তা জানি না। তবে আমার বাসায় যারা গৃহকর্মী আছেন তাদের বেতন, বোনাস, ছুটি সঠিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা করি।“
থানায় কর্মীদের নিবন্ধন করেছেন কি? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ফরমটি পূরণ করে মোহাম্মদপুর থানায় জমা দিয়েছি। আমরা সব তথ্য দিলেও তখন গৃহকর্মীরা তাদের তথ্য দেয়নি। তবে আমাদের ভবনে যারাই কাজ করেন, সবার জাতীয় পরিচয়পত্র ম্যানেজার জমা রাখেন, যেন যে কোনো অঘটনে তাকে চিহ্নিত করা যায়।“
কেন আইন দরকার
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল আলাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন হচ্ছে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত, যা না মানলে সরকারের বিরুদ্ধে বা আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। অন্যদিকে নীতিমালা হলো শুধুমাত্র একটি নির্দেশনা। এই নির্দেশনা চাইলে না-ও মানা যায়। এতে কোন জবাবদিহিতার বিষয় নেই।
“গৃহকর্মীরা নির্যাতনের বা হত্যার শিকার হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করতে পারে, যেহেতু তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি নেই, সেহেতু ভর্তুকি পান না।”
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়গুলো এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই দেখা হয়। তবে যেহেতু গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।”
গৃহকর্মী নির্যাতন: গ্রেপ্তার দম্পতির রিমান্ড শুনানি ১৮ জুলাই
শিশু গৃহকর্মীকে ফুটন্ত পানি ঢেলে ‘নির্যাতন’, কুমিল্লায় সাবেক অধ্যক্ষের স্ত্রী আটক
সিলেটে `গৃহকর্মী নির্যাতন', সরকারি কর্মকর্তার ব্যাংকার স্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদে