হাইড্রলিক হর্ন বন্ধের দাবি নিয়ে মাঝরাস্তায় অনশন

অনশনে বসা সুজন বললেন, “দেশের আইনে হর্ন বাজানো অলরেডি বেআইনি। এর জন্য যে আমার রাস্তায় নামতে হয়েছে সেটার জন্য আমি দুঃখিত।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2022, 10:54 AM
Updated : 4 Oct 2022, 10:54 AM

রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চারপাশে হর্ন বাজিয়ে ছুটে চলা নানা ধরনের গাড়ির মধ্যেই ব্যস্ত সড়কে বসে ‘হাইড্রলিক হর্ন’ ব্যবহার বন্ধের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন চট্টগ্রামে এক ব্যক্তি।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্দর নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছেন সুজন বড়ুয়া। তিনি থাকেন চান্দগাঁও এলাকায়, অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচার ব্যবসা করেন।

সুজনের দাবি, হাই কোর্টের রায়ে নিষিদ্ধ হাইড্রলিক হর্ন বন্ধে প্রশাসনকে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে দোষীদের জরিমানা করতে হবে।

“আপনার-আমার সবার হয়ে আমি আন্দোলন করছি। এটা আমাদের সবার দাবি,“ বলেন সুজন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, এর আগেও চলতি বছরের ২১ জুলাই থেকে একই দাবিতে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৩০টি কর্মসূচি পালন করেছেন। এর মধ্যে ১ থেকে ৩ অক্টোবর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালক করেছে।

সুজন বলেন, “গাড়িতে ব্যবহারের জন্য আমি সচেতনতা বাড়ানোর স্লোগান লেখা স্টিকার বানিয়েছি। অনেক শ্রম গেছে, টাকাও খরচ করেছি। কিন্তু গতবারের অবস্থান কর্মসূচিতে কোনো সাড়া না পেয়ে এবারে আমরণ অনশন।

‘শব্দ দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ’ এই ব্যানারের কর্মসূচিতে সুজনের সঙ্গী হয়েছেন তার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে অভিষেক বড়ুয়াও। তবে তিনি অনশন করছেন না। এর আগে সুজনের কিছু কর্মসূচিতে তার মেয়ে চন্দ্রিমা বড়ুয়াও অংশ নেন।

সুজন বড়ুয়া বলেন, “আগে অনেক কর্মসূচি পালন করেছি। মনে অনেক কষ্ট। তাই তপ্ত রাস্তায় আজ বসে আছি। দেশের আইনে হর্ন বাজানো অলরেডি বেআইনি। এর জন্য যে আমার রাস্তায় নামতে হয়েছে সেটার জন্য আমি দুঃখিত। এটা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ। শুধু চালক নয়, আমাদেরও কিছু দোষ আছে। রাস্তায় যত্রতত্র চলাফেলা বা হুট করে যেখানে সেখানে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়া এটা আমাদের অ্যাভয়েড করতে হবে।”

হাইড্রোলিক হর্ন হচ্ছে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী বিশেষ হর্ন। ২০১৭ সালে সব যানবাহনে হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি এর উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ করাসহ বাজারে যেসব হর্ন রয়েছে, তা জব্দের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

সুজন বড়ুয়া বলেন, “হাইড্রলিক হর্ন নিষিদ্ধ করার পরও এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে এই হর্ন চলতেছে? এই অবস্থার অবসান চাই। আজকে থেকে অনশন শুরু করেছি। এটা চলবে। আমার ক্রনিক ডিসেন্ট্রি, তবু কর্মসূচি পালন করছি।”

নিজের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে সুজন জানান, হাইড্রলিক হর্ন বন্ধে জরিমানা করতে হবে, অভিযান চালাতে হবে। অভিযানে দ্বিতীয়বারও যদি একই গাড়িতে হাইড্রলিক হর্ন পাওয়া যায় তাহলে সেই গাড়ির লাইসেন্স পুরো বাতিল করতে হবে।

“আরেকটা বিষয়, আইনের লোকজন যেন আইনের নামে শব্দ দূষণ না করে। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।”

সুজন বলেন, “এই হর্ন একটা আতঙ্ক হয়ে গেছে মনের মধ্যে। যখন তখন হর্ন বাজিয়ে কানটা ফাটিয়ে ফেলে। এই যন্ত্রণা আমি নিতে পারি না।

“এছাড়া আগেই নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে শব্দ দূষণ থেকে মাথা ব্যথা হয়, ঘুম কম হয়, টেনশন বেড়ে যায়, উচ্চ রক্তচাপ হয়। এমনকি প্রিমেচিউর ডেলিভারি পর্যন্ত হতে পারে।”

সুজনের ছেলে অভিষেক জানান, রাস্তার ধারেই তাদের বাসা। সড়কে গাড়ি বাড়ায় হর্ন থেকে শব্দ ‘দূষণ’ বাড়ছেই।

শব্দ দূষণ রোধে আন্দোলন শুরুর কারণ জানিয়ে সুজন বড়ুয়া বলেন, “বেশ কিছু দিন আগে অপ্রয়োজনে হর্ন দেয়ায় এক গাড়িচালককে নিষেধ করি, তারপর এ নিয়ে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। সেই থেকে সিদ্ধান্ত নেই, আন্দোলনে নামব।“

এ আন্দোলন কেউ কেউ গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও বেশিরভাই ‘পাত্তা দেয়নি’ বলে আক্ষেপ করলেন সুজন। তবে সাড়া যে একেবারেই মেলেনি তা নয়।

“কেউ কেউ পথ চলতি থেমে জানতে চান। অনেক সমর্থন জানান। একজনে একটু আগে দুটো ঠাণ্ডা পানির বোতল দিয়ে গেছেন। তিনি হয়ত জানেন না, আমরা অনশন করছি। কিন্তু এটুকুও অনেক বড় পাওয়া। “

সুজনের আশা, তার আন্দোলন সরকারের দৃষ্টি কাড়বে এবং দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

Also Read: সারাদেশে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে আদালতের নির্দেশ