১২ দলের আবেদনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য যাচাই চলছে। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইসির সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে।
Published : 30 Jun 2023, 09:13 AM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধনে এক বছরের বেশি সময় আগে কাজ শুরু করলেও কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী তা চূড়ান্ত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
কর্মপরিকল্পনায় ভোটের অন্তত ছয় মাস আগে নতুন দল নিবন্ধনের কাজটি শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি, তবে তা সম্ভব হয়নি।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হলে বাংলাদেশে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার শতাধিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করে।
প্রাথমিক বাছাই ও দলিলপত্র পর্যালোচনার পর ৮১টি দলের আবেদন বাদ পড়ে। মাঠ পর্যায়ে তদন্তের জন্য রয়েছে ১২টি দল। সেই কাজ সেরে জুনের মধ্যে ইসির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল।
২০২২ সালের মে মাসে নতুন দলের নিবন্ধন আবেদন চায় ইসি। তিন মাসের সময় দিলেও তাতে সাড়া না পেয়ে অক্টোবর পযন্ত সময় বাড়ানো হয়।
নভেম্বরে প্রাথমিক পর্যালোচনা শুরু হয় এবং এপ্রিল মাসে মাঠ পর্যায়ে তদন্তে নামে কমিশন। দুই মাস ধরে তদন্ত করেও কাজ শেষ করতে পারেননি কর্মকর্তারা।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলগুলো তাদের শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা, এই সময়ের মধ্যে তাও যাচাই করার কথা ছিল ইসির। কমিশন সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে।
অবশ্য এটাকে ব্যর্ধতা বা পিছিয়ে পড়া বলতে রাজি নন ইসির বাছাই কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা প্রায় সব কিছু গুছিয়ে এনেছি। ১২টি দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা কমিটি ও অফিস, সমর্থন তালিকা, প্রয়োজনীয় দলিলের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষ হয়েছে।
“এদের মধ্যে চার-পাঁচটি দলের বিষয়ে ফের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও সঠিক তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।”
এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন সম্ভব হবে বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ।
যেসব দলের তথ্য যাচাই হচ্ছে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি- বিএসপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ওই ১২ দলের মধ্যে যোগ্য কোনো দল থাকলে তারা নিবন্ধন পাবে। আর নিবন্ধনের অযোগ্য হলে তাও মধ্য জুলাইয়ে চূড়ান্তভাবে জানানো সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী তিনটি শর্তের যে কোনো একটি শর্ত পূরণ করলে সেই রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়।
নতুন দলের জন্য শর্ত হল– দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসাবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
বাংলাদেশে নির্বাচনে দলীয় পরিচয়ে অংশ নিতে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত দল ৪২টি। নিয়ম অনুযায়ী এই দলগুলোই নিজস্ব দলীয় প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে পারে। দলের বাইরে অন্যদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়।
বাকি আছে যে ধাপ
কোনো দলের নিবন্ধন নিয়ে কারও আপত্তি রয়েছে কি না দেখবে কমিশন। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আপত্তি পেলে দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে পারবে।
বাছাইয়ে উৎরে গেলে এবং দাবি-আপত্তির নিষ্পত্তি হয়ে গেলে শেষধাপে নিবন্ধন সনদ পাবে সেই দল, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হবে।
বাছাইয়ে টিকে গেলেও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সংশ্লিষ্ট দলের বিষয়ে কারো আপত্তি আছে কিনা তাও যাচাই করতে হবে কমিশনকে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা ছিল জুনের মধ্যে চূড়ান্ত করা। সব কিছু নিশ্চিত না হয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এখনও অনেক সময় হাতে আছে।”
নবম সংসদ নির্বানে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দল নিবন্ধন দেওয়া হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো পায় নি। ইসির বাছাই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন না পেলও আদালতের আদেশে নিবন্ধন অব্যাহত রয়েছে।
নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের আদেশে এ পর্যন্ত ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
বর্তমানে ইসির কাছে নিবন্ধিত দল দাঁড়িয়েছে ৪২। সবশেষ আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাসদ।
এবছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।
পুরনো খবর
পুরনো দল নয়, ইসির ভাবনায় নতুন নিবন্ধন প্রত্যাশীরা
ইসির অনানুষ্ঠানিক আলোচনাতেও ‘আগ্রহ নেই’ ৯ দলের
নিবন্ধন প্রত্যাশী ৮১ আবেদন বাদ, মাঠ পর্যায়ে তথ্য যাচাই ১২ দলের
নিবন্ধনে আগ্রহী নতুন দলের আবেদন বাছাই শুরু
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন: নতুনদের জন্য ৩ মাস সময়