নিবন্ধন প্রত্যাশী এই দলগুলোর তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে যাচাই করবে নির্বাচন কমিশন।
Published : 11 Apr 2023, 05:37 PM
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন চাওয়া ৯৩টি দলের মধ্যে ৮১টি আবেদন বাতিল হয়েছে; কয়েক দফা যাচাই-বাছাই শেষে বাকি এক ডজন দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম মঙ্গলবার জানান, মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ে এসব দলের কেন্দ্রীয় জেলা ও উপজেলা কমিটি সক্রিয় রয়েছে কিনা এবং থানা পর্যায়ের ২০০ সমর্থন সূচক তালিকা সঠিক কিনা তা যাচাই বাছাই করা হবে ১৫ দিনের মধ্যে।
যাদের তথ্য সঠিক পাওয়া যাবে তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ইসি সচিব বলেন, নিবন্ধিত হতে ৯৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। নানা পর্যায়ে বাছাইয়ে ৮১টি আবেদন বাতিল হয়েছে।
“১২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কোনো দল নিবন্ধন যোগ্য হলে নিবন্ধন পেতে পারে নতুন দল।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে ২০২২ সালের মে মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন।
পরে সময় বাড়ানো হয় আরও দুই মাস। ৩০ অক্টোবর শেষ সময় পর্যন্ত ইত্যাদি পার্টি, মুসকিল লীগসহ হরেক নামের ৯৩টি আবেদন জমা পড়ে।
এরপর নভেম্বরেই আবেদন বাছাইয়ে নামে কমিশন। কয়েক দফা যাচাইয়ে টিকে যাওয়া নাগরিক ঐক্য ও এবি পার্টিসহ ১২টি দলের বিষয়ে এখন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আবেদন যাচাইয়ে যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করেছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, প্রথম পর্যায়ে ১৬টি আবেদন বাদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত সময়ের তথ্য দিতে না পারায় এবং ঠিকানা ভুল হওয়ায় বাতিল হয় আরও ৩১টি আবেদন। পরে যাচাই-বাছাইয়ে নিবন্ধনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে না পারায় আরও ৩৪টির আবেদন বাতিল করা হয়।
“১২টি দল যে তথ্য দিয়েছে তা মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। এরপর কমিশন তা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, জুনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে,” বলেন ইসি সচিব।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী তিনটি শর্তের যে কোনো একটি শর্ত পূরণ করলে সেই রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়।
নতুন দলের জন্য শর্ত হল– দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসাবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
বাংলাদেশে নির্বাচনে দলীয় পরিচয়ে অংশ নিতে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত দল ৪০টি। সবশেষ আদালতের আদেশে তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পায়। নিয়ম অনুযায়ী এই দলগুলোই নিজস্ব দলীয় প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে পারে। দলের বাইরে অন্যদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়।
এর ধারাবাহিকতায় এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে নিবন্ধনের কাজ করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।
২০০৮ সালে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর সময় ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরে তা ৪৫ এ উন্নীত হয়।
কিন্তু শর্ত পূরণে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন পরে বাতিল করা হয়।
যেভাবে বাদ ৮১ আবেদন
>> ৯৮টি আবেদন জমা পড়লেও একই দলের একাধিক আবেদন নথিভুক্ত হওয়ায় সেগুলো বাদ দিয়ে ৯৩টি আবেদনের পর্যালোচনা শুরু করে ইসি।
>> এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ১৬টি আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে ১৪টি আবেদনে নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করা হয়নি; দুটি আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
>> অবশিষ্ট ৭৭টি আবেদনের মধ্যে ইসির চাহিদা মত কাগজপত্র ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়; ১৯টি দল নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে পারেনি। আর দুটির ঠিকানা সঠিক ছিল না। ১০টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করা হয়। এভাবে ৩১টি আবেদন বাদ পড়ে।
>> সবশেষে ৪৬টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে আইন, নীতিমালা ও তথ্য পূর্ণ করতে না পারায় ৩৪টি আবেদন বাতিল করা হয়।
>> মাঠে তদন্তের জন্য থাকে ১২টি দল। তারা যে তথ্য দিয়েছে তা মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে।
যেসব দলের তথ্য যাচাই
এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি- বিএসপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।
পুরনো খবর:
দল নিবন্ধন: আরও দুই মাস সময় দিল ইসি