আনুষ্ঠানিক সংলাপের বাইরে সিইসি বিএনপিসহ কয়েকটি দলকে অনানুষ্ঠানিক যে আলোচনায় ডেকেছে, তাতেও এখনও সাড়া মেলেনি।
Published : 08 May 2023, 09:09 AM
নির্বাচন কমিশনের সংলাপ শুরু থেকেই বর্জন করে আসা বিএনপসহ নয়টি দলকে ইসি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডাকলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
ইসির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা প্রস্তাব দেওয়ার পর দেড় মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে ‘অনাগ্রহ’ প্রকাশ করে কয়েকটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে।
কয়েকটি দল ঈদের পরে জবাব দেওয়ার কথা বললেও এখনও কোনো চিঠি পায়নি ইসি। আর বিএনপি ইসির চিঠির ‘জবাব দেবে না’ বলে জানিয়ে দিয়েছে।
চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে মে ও জুনে পাঁচ সিটি ভোট হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা বিষয়ে দলগুলোর মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। যদিও মেয়াদের এক বছরের মধ্যে শুরু থেকেই বিএনপি ও কিছু দলের সাড়া পাচ্ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৩ মার্চ বিএনপিকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডাকেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহেও দলগুলোর কাছ থেকে আলোচনায় বসার সময় নির্ধারণ নিয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।
কয়েকটি দল চিঠির জবাব দিলেও ঈদের পর আর কোনো দলের সাড়া মেলেনি বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিএনপির কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব বা চিঠি আমরা এখনও পাইনি। দু‘চারটি দল চিঠির জবাব দিয়েছে, তারা এ মুহূর্তে আলোচনা সম্ভব না বলে জানিয়েছে। আট দলের সবার জবাব এখনও আমাদের হাতে আসেনি।”
সিইসি চিঠি দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানের ‘মূল রাজনৈতিক সংকট’ নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না এবং তা হবে ‘অর্থহীন’।
“রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময় সম্ভব নয়। সেই কারণে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না।…আমি এই প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমেই উনাকে (সিইসি) জানাচ্ছি। আমরা এই প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের উত্তর জাতিকে জনগণকে জানিয়ে দিয়েছি। এটা নতুন করে আর কিছু নাই।”
বিএনপির সাড়া না পেয়ে সংলাপ বর্জন করা সিপিবি, বাসদসহ আরও ৮ দলকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডাকে ইসি। সিপিবি পরে ইসির চিঠির জবাব দেবে বলেছে।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সংশোধিত দ্বিতীয় দফার চিঠি আমরা পেয়েছি। সিইসির কাছে আমরাও একটা চিঠি দেব। আমাদের কথা স্পষ্ট, কমিশনের সঙ্গে বিদ্যমান পরিস্থিতি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া আলোচনার দরকার আছে বলে মনে করি না। এরচেয়ে বড় কথা আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি; সেগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা তাও জানানোর অনুরোধ করব।”
বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “আমরাও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে কিছু প্রস্তাব দিয়ে আগামী সপ্তাহে কমিশনে একটা চিঠির জবাব দেব।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পথে প্রস্তুতির মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের দিকে নজর রয়েছে ইসির। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ৬ এপ্রিলও বলেছেন, “এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সঙ্কট নিরসন করা। বড় কোনো দল নির্বাচনে না এলে তা লিগ্যালি সিদ্ধ হলেও পুরো লেজিটিমেট হবে না।”
বিএনপিসহ সংলাপ বর্জন করা দলগুলোকে ভোটে আসার আহ্বান জানানো অব্যাহত থাকবে বলেও জানান সিইসি।
“কাউকে জোর করে ভোটে আনার বিষয়টি কমিশনের নয়। দলগুলোকে ভোটে আসতে শেষ পর্যন্ত আহ্বান অব্যাহত থাকবে। আগাম নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।”
ইতোমধ্যে ইভিএম নিয়ে কমিশনের অভ্যন্তরীণ দ্বিধাবিভক্তিও প্রকাশ পেয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে সিটি নির্বাচনে ইভিএম চলবে।
ভোটের মাত্র সাত-আট মাস আগে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দ্বিধাবিভক্ত কমিশনের মতামত এলেও তাতে আগামীতে কোনো ‘সমস্যা দেখছে না’ ইসি। ইভিএম থেকে সরে আসায় নির্বাচনী রোডম্যাপে কোনো প্রভাবও পড়বে না বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, রেডম্যাপ হচ্ছে ভবিষ্যত প্রক্ষেপণ, তাতে সময়ের প্রয়োজনে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কিছু কিছু পরিবর্তন আসতেই পারে।
“অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। ভিন্নমত কিন্তু মন্দ কিছু ঈঙ্গিত করে না, বরং কমিশনাররা যে স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারেন তা প্রতিফলিত হয়। এটাই কর্পোরেট কালচার, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। সুচিন্তিত মতামত অভিন্ন হতে পারে বা ভিন্নতরও হতে পারে।”
ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়ে সিইসির ‘বিশ্লেষণধর্মী বর্ণনার‘ পর তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, ভয়ভীতিহীন, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ পর্যায়ে তৎপর। নিজেদের মেয়াদের প্রথম বছরে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে যেখানে বাধা, অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা সব সময় আশ্বস্ত করতে চাই। আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা দিয়ে পালন করব ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি সবার সহযোগিতাও কামনা করি। আশা করি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হব।“
আরও পড়ুন-
বিএনপির ভাষ্য চিঠিতে জানার অপেক্ষায় ইসি
আলোচনার জন্য আরও ৮টি দলকে ইসির আমন্ত্রণ
বিএনপিকে সংলাপে ডাকিনি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ডেকেছি: সিইসি
‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’ সিইসিকে বিএনপির ধন্যবাদ, আলোচনার আহ্বানে ‘না’
বিএনপি নির্বাচনে না এলে অপূর্ণতা থাকবে: সিইসি
‘ভদ্রলোকের মতো’ থাকেন, কেন হয়রান হচ্ছেন: ইসিকে ফখরুল
ভুল শুধরে ৮ দলের কাছে আবার ইসির চিঠি