সিইসি বলছেন, ইসি ব্যালটে ফিরেছে নিজেদের সিদ্ধান্তে, সঙ্কট দলগুলোকে নিরসন করতে হবে।
Published : 06 Apr 2023, 01:41 PM
ইভিএম নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নির্বাচন কমিশন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, কোনো দলকে ভোটে আনতে বা কারো চাপে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
“এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সঙ্কট নিরসন করা। বড় কোনো দল নির্বাচনে না এলে তা লিগ্যালি সিদ্ধ হলেও পুরো লেজিটিমেট হবে না।”
সেজন্যে বিএনপিসহ সংলাপ বর্জন করা দলগুলোকে ভোটে আসার আহ্বান জানানো অব্যাহত থাকবে বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, “কাউকে জোর করে ভোটে আনার বিষয়টি কমিশনের নয়। দলগুলোকে ভোটে আসতে শেষ পর্যন্ত আহ্বান অব্যাহত থাকবে। আগাম নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।”
অর্থসঙ্কটের মধ্যে নতুন ইভিএমে কেনায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থগিত হওয়ার পর হাতে থাকা ইভিএম মেরামতে প্রায় ১৩শ কোটি টাকার সংস্থানে সরকারের সায় না মেলায় নির্বাচন কমিশন গত সোমবার ইভিএম থেকে সরে এসে সংসদ নির্বাচনে ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর তিন দিনের মাথায় কমিশনের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি। নির্বাচন ভবনে এ ব্রিফিংয়ে চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ইভিএম থেকে সরে আসা হয়েছে সেদিন। এ নিয়ে নানা সংশয় বাজারে দেখা দিয়েছে। এটা কি চাপে করা হল, নাকি এটা করা হল, ওটা করা হল। এটা নিয়ে কমিশন দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
তিনি বিলেন, “কোনো দলের প্রত্যাশা ছিল ৩০০ আসনে ইভিএম। পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে করববে। ইভিএমের প্রতি ইসির আস্থাটা অনেক বেশি, ইভিএমকে হ্যান্ডেল করেছে ইসি, রাজনৈতিক দলগুলো করেনি।
“প্রায় ১২শ নির্বাচন হলেও একটিতে অভিযোগ পড়েনি ম্যানিপুলেশন হয়েছে, ম্যালফাংশন হয়েছে কোথাও, মেকানিক্যাল কথা বলা হয়েছে। এখানে ভুত আছে, ভানুমতির খেল আছে- দশটা ভোট দিলে তিন জায়গায়, সাতটা অন্য জায়গায় যায়…এমন অভিযোগ আসেনি। আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি, একেবাইরে অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের বিশ্বাস দিয়ে তো হবে, তারপরও অনেকের আস্থা নেই। তাতে ছোট সঙ্কট থেকে যায়।”
দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাইলেও অর্থ সংকটের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “১২শ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয় মেরামতের জন্য। তাতেও সরকার সম্মত হতে পারেনি।”
এমন পরিস্থিতিতে ইভিএম নিয়ে ইসি দ্বিধাভিক্ত হয়ে পড়ে বলে জানান তিনি।
“আমরা দ্বিধাভিক্ত হলাম, আলোচনা করলাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। দুজন কমিশনার বললেন, ২৫-৩০টা ইভিএমে করে ফেলি। আমরা দেখলাম ইভিএমের লাইফটাও শেষ হয়ে আসবে, সেসময় হয়ত ম্যালফাংশান হলে… একটা দুদ্যেল্যমান অবস্থা আমাদের মধ্যে। তখন আমিও যুক্ত হলাম। আমরা ইভিএমে যাব না, আরও দুজন সহকর্মী থাকল। এটা সম্পূর্ণরূপে আমাদের সিদ্ধান্ত।
“এর বাইরে কোনো চাপে করা হয়েছে কিনা বা বিএনপিকে ভোটে আগ্রহী করার জন্যে করা হয়েছে- এ ধরনের কোনো চিন্তা চেতনা আমাদের মধ্যে ছিল না। দ্বিধাভিক্ত ছিলাম আমরা। দুজন মতামত দিল ইভিএমের মাধ্যমে কিছু হোক, আমরা তিনজন বললাম-এটা অনিশ্চয়তা, এটা সমর্থন করছি না।”
‘কাউকে জোর করে আনতে পারছি না’
সিইসি বলেন, “আমরা সব সময় বিশ্বাস করেছিলাম, ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট অনেক বেশি নিরাপদভাবে করা সম্ভব হয়। এটা যান্ত্রিক কারণে...। শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমে য্নে সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়। বিষয়টা আপেক্ষিক হতে পারে।”
ইসির কাছে ইভিএম কোনো ‘বড় চ্যালেঞ্জ নয়’ জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমাদের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যে রাজনৈতিক সঙ্কটটা বিরাজ করছে, নির্বাচনে সবাই বা প্রধানতম দলগুলো অংশ নেবে কিনা নেবে না, সেটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইভিএমে ভোট করলে পোলিং প্রসেস সহজ হয়।
ইসি সব দলকেই ভোটে চায় জানিয়ে সিইসি জানান, তাদের সেই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
“কাউকে জোর করে আমরা আনতে পারছি না। কিন্তু যেটা করার সে আপিল করেই যাচ্ছি। আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন তাও নয়। সঙ্কটটা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে থাকে অথবা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে, আমরা বলব সে রাজনৈতিক সঙ্কটগুলো আপনারাই নিরসন করলে নির্বাচনটা সহজ ও ইসির জন্য অনুকূল হয়ে যাবে।”
রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ইসির ভূমিকা না রাখার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে ইসির কোনো বড় রোল প্লে করতে পারবে না। এটাই আমাদের বড় রোল- প্লিজ আসেন, আসেন নির্বাচনে। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন, বিরাজমান দূরত্ব ও সংশয়, বিরোধ থাকলে তা মিটিয়ে ফেলেন।... এ কথায় বলেছি, সব দলগুলো অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, অনেক প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।”
‘চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না’
সুষ্ঠু ভোট করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, “আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। সুষ্ঠু ভোট করতে চেষ্টা করব। এটা সত্য, ব্যালটে রিগিং (জালিয়াতি) প্রতিহত করা যতটা কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই অতটা কষ্টকর নয়।
“অনেকে বলে থাকে-ব্যালটে রাতে ভোট হয়ে গেছে, সত্য মিথ্যা আমি একেবারেই জানি না। কিন্তু পারসেপশন ক্রিয়েট করেছে রাতেও ভোট হতে পারে। ইভিএম কিন্তু সকাল ৮টার আগে চালুই হবে না, এটা সো অটোমেটিক। এখানে ন্যূনতম সম্ভাবনা ছিল না, ওদিক থেকে ইভিএমে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক ছিল।”
তিনি বলেন, “কেন্দ্রের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি ভালো হয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ হলে। ধরেন কোনো দল অংশ নিল না, একটা দল অংশ নিল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো থাকলে কেন্দ্রে ভারসাম্য হয়, যা আর্মি নেভি র্যাব পুলিশ করে না। সেখানে ভারসাম্য রক্ষা করতে সনাতন পদ্ধতি হচ্ছে দল থাকবে, এজেন্ট থাকবে।
“কেন্দ্রের বাইরেরটা আমরা দেখতে পারব। কিন্তু ভেতরেও কারচুপির সুযোগ থাকে। এটা রাজনৈতিক দলগুলো বুঝবেন, অংশগ্রহণমূলক ভোটের জন্য তারা আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি এনে দিলে আমাদের সহায়ক হবে।”
ভোটে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।