‘ভদ্রলোকের মতো’ থাকেন, কেন হয়রান হচ্ছেন: ইসিকে ফখরুল

নির্দলীয় সরকার না হলে নির্বাচনে যাবেন না, আবার বললেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 11:33 AM
Updated : 25 March 2023, 11:33 AM

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠিকে বিএনপিকে ভোটে নিতে ‘নতুন কৌশল’ হিসেবে দেখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবার কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় ইসির চিঠির প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন চিঠি-টিঠি দিয়ে অযথা কেন আপনারা হয়রান হচ্ছেন। আপনারা ভদ্র লোকের মতো থাকতেন, ভদ্র লোকের মতো থাকেন, বেতন-টেতন নেন।

“ইভিএম দিতে চেয়েছিলেন ইভিএম দিতে পারছেন না। আরও অন্যান্য কী আছে না আছে। অতীতে নির্বাচন কমিশন ছিল, তারা শুধু ট্রেনিং বাবদ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন। আপনারা এই রকম কিছু আছে কিনা সেগুলো দেখেন। অযথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনারা এই সমস্ত কথা বলে নিজেকে খাটো করবেন না।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনায়ই যায়নি। দলটিতে আলোচনায় পেতে বৃহস্পতিবার সিইসি নতুন একটি চিঠি দিয়েছেন।

সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “অতীতে কেউ ভোট দিতে পারছেন? আবার ওই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এবার একটু চাপাচাপি বেশি, পড়শিরা বলছে যে আগের মতো ভোট আর চলবে না। জাপানের রাষ্ট্রদূত তো বলেই ফেললেন যে, বাপের জন্মে শুনিনি যে, আগের রাত্রে ভোট হয়।”

“ওইজন্য এখন আবার নতুন নতুন কৌশল। তার মধ্যে নতুন লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের আমাদেরকে চিঠি দেওয়া।”

ইসির এই আহ্বানে বিএনপি যাবে কি না, সে বিষয়ে এখনই শেষ বলছেন না ফখরুল। তিনি বলেন, “এটা নিয়ে আমি এখনই কথা বলতে চাই না। আমাদের সোমবার স্ট্যান্ডিং কমিটির (জাতীয় স্থায়ী কমিটি) মিটিং আছে, সেই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা যে নেই, তাও জানিয়ে দেন ফখরুল। 

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা আছে নাকি? সে পারবে এই প্রশাসনকে সোজা করতে, পারবে সে ভোট….”

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সংকট একটাই। সেই সংকট হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার কে থাকবে? নির্বাচনকালীন যদি আওয়ামী লীগ থাকে, এই সরকার থাকে, তাহলে এই নির্বাচন কোনোদিনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হতে পারবে না- এটা প্রমাণিত। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও।

“সুতরাং আসল জায়গাটা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। সেটা নিয়ে (ইসি) কাজ করুন, সেটা নিয়ে কথা বলুন,  সেটা নিয়ে ঘোষণা দিন। তা না হলে অন্য কোনো কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

‘সরকারের নতুন খেলা’

ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন একটা খেলায় নেমেছে। এই খেলাটি কী? মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব, ভোটের কথা বলব, ভোটও করব। কিন্তু আমার মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করব, আমার মতো করে প্রশাসন চলবে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি সব আমার কথায় চলবে এবং আমি যা চাইবে সেইভাবে চলবে।

“এজন্য ২০১৪ সালে যে নির্বাচন করেছে, সেই নির্বাচনে কোনো ভোটই হয় নাই। ১৫৪ জনকে আগেই ঘোষণা করে ফেলল যে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের কোনো নির্বাচন হয়েছিল বলে আমরা জানা নাই। ঠিক একই কায়দায় ২০১৮ সালে আগের রাত্রে ভোট শেষ। কেউ ভোট দিতে পারেনি।”

সরকারের উন্নয়নের দাবি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “খালি বলে, তারা এত উন্নয়ন করেছে, তা আমাদের নাকি চোখ অন্ধ, আমরা উন্নয়ন দেখতে পাই না।

“আমি মাঝখানে বরিশাল গিয়েছিলাম, আসার পথে পদ্মা সেতুর উপরে দেখি কী সেতুর উপরে অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রিপেয়ার করা হচ্ছে। একবছর পার হয়নি অলরেডি রিপেয়ারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই হচ্ছে তাদের উন্নয়নের নমুনা।”

তিনি বলেন, “দেশের মানুষ খেতে পায়। আর পত্রিকা খুললে দেখবেন মানুষ কীভাবে ন্যায্যমূল্যে চাল-ডাল-তেল কেনার জন্য ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছে, তাতেও পাচ্ছে না।

“আর তারা (সরকার) পাতাল রেল করছে। পূর্বাচলের ওই জায়গায় পাতাল রেল করা কি খুব বেশি প্রায়োরিটি হয়ে গেছে? কোনটাই না। অথচ যেটা প্রায়োরিটি দরকার মানুষ খাদ্যের চাল, চাল, তেল, লবণসহ সব কিছুর দাম এমন দাম বেড়েছে, যা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গ্যাসের দাম বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।”

ঢাকার গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) বিএনপির উদ্যোগে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান সভায় বক্তব্য রাখেন।