রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে ‘মরিয়া’ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিবন্ধন কাজে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 16 Sep 2019, 12:34 AM
সেই সঙ্গে দেশের সব উপজেলা কিংবা থানা নির্বাচন অফিসের সার্ভারের বিদ্যমান পাসওয়ার্ড ও কোড নম্বর পরিবর্তন করে নতুন ‘সিকিউরিটি ফিচারস’ সন্নিবেশ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার তৎপরতার মধ্যে সম্প্রতি চট্টগ্রামে নারী রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ ও অর্ধশতাধিক নাগরিকের তথ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ার পর এ উদ্যোগ নেওয়া হল।
রোহিঙ্গা ভোটার: ইসি কর্মী-জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত, বলছে দুদক রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবে জন্মসনদ-পরিচয়পত্র না পায়: পৌর মেয়রদের মন্ত্রী |
ইসি সচিব মোহাম্মদ আলমগীর রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে অপতৎপরতা রোধে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কঠোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
“রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী বা অন্যরা জড়িত থাকলে বিভাগীয় মামলা করা হবে।”
ভালোভাবে দেখে ও যাচাই-বাছাই করে ভোটার নিবন্ধন কাজ শেষ করার জন্য ইসির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, মাঠ পর্যায়ের সব সার্ভার স্টেশনের নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে কেউ কোনোভাবে কারও বিষয়ে অপতৎপরতা চালাতে না পারে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে এনআইডি জালিয়াত চক্রের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
ইসি সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নানের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
তাতে বলা হয়েছে, সারাদেশের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটার নিবন্ধন করা হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ‘বিশেষ এলাকায়’ নিবন্ধনের জন্য পাওয়া আবেদনগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই, অনুসন্ধান, পরিদর্শনের পর নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটিসহ ৩২ উপজেলার ‘বিশেষ এলাকা’র সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের টিম রয়েছে। নিবন্ধন কাজে রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে ইসি। তবুও রোহিঙ্গারা বিভিন্ন কৌশলে ভোটার হওয়ার জন্যে নানা রকম অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ আসছে।
“এ অপচেষ্টা রোধে ইসি মাঠ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা দিতে নির্দেশা দিয়েছে,” বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠিতে বলেন ইসি সচিব।
রোহিঙ্গাদের হাতে পাসপোর্ট: জালিয়াতির শুরু জন্ম নিবন্ধন সনদে পাসপোর্টগুলো ঠিক, বাকি সবই জাল নোয়াখালী থেকে পাসপোর্ট করিয়ে তুরস্কে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন ৩ রোহিঙ্গা |
ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান বিশেষ এলাকার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আলাদা চিঠিতে বলেছেন, রোহিঙ্গারা ভোটার হতে নানা পন্থা অবলম্বনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে ইসির নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছেন তিনি।
আলাদা চিঠিতে সব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন এ কর্মকর্তা।
সার্ভারে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এনআইডি উইং মহাপরিচালক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার সাইদুল ইসলাম জানান, জালিয়াতি বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ৫১৮টি থানা/ উপজেলা অফিসের সার্ভারের পাসওয়ার্ড ও কোড নম্বর পাল্টে ফেলা হয়েছে। যাতে নতুন ভোটারদের তথ্য আপলোডের বিষয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।
“এখন নতুন সিকিউরিটি ফিচারস দেওয়া হয়েছে। আমাদের উপজেলা নির্বাচন ও সার্ভারের স্টেশনের দায়িত্বশীলদের কাছে এ নিরাপত্তা কোড, পাসওয়ার্ড থাকবে। অন্যদের তা ব্যবহারের কোনো সুযোগ থাকবে না।”
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা কয়েকজনের এনআইডি পাওয়ার বিষয়টি তদন্তাধীন জানিয়ে তিনি বলেন, “জালিয়াত চক্রের কক্সবাজারে ২ জন ও তাদের তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের একজন ধরা পড়েছে। তাদেরকে আমরা পুলিশকে দিয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে তাদের। পরবর্তীতে আরও ধরা হবে।”